ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৭ মার্চ ২০২৪

মাহে রমজান

মাহে রমজানের আজ ১৭তম দিবস

মাহে রমজানের আজ ১৭তম দিবস। ইসলামের ইতিহাসে এ দিনটি এক বিশেষ কারণে স্মরণীয় ও বরণীয়। এদিন মাত্র ৩১৩ জন জিন্দাদিল মুসলমান সাহাবির হাতে বদর প্রান্তরে প্রায় এক হাজার সুসজ্জিত অবিশ্বাসী সৈন্যবাহিনীর পরাজয় ঘটে। তাই রমজান আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি আত্মগৌরবেরও স্মৃতি বহন করে।

এ যুদ্ধ মুসলমানদের প্রথম সামরিক বিজয়। মাত্র ৩১৩ জন জিন্দাদিল মর্দে মুমিন সেদিন প্রতিপক্ষের এক হাজার দুশমন বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে যে অলৌকিক বিজয় অর্জন করেছিলেন, তা জগতের ইতিহাসে এক বিস্ময়কর অধ্যায়ের সূচনা করে। এটি ছিল দ্বিতীয় হিজরির ঘটনা। হিজরতÑউত্তর মদিনায় ইসলামের ক্রমোন্নতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং আবু সুফিয়ানের মিথ্যা রটনায় প্রলুব্ধ হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার দুরভিসন্ধিতে মক্কার কাফিররা এ যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। ফল হয়েছে তার উল্টো। বিজয় এসেছিল মুসলমানদের ঘরে।

ঘটনাটি ছিল এমন- কাফিরদের রণ প্রস্তুতিসহ মদিনাভিমুখে অগ্রসরমান অবস্থা জানতে পেরে আঁ হযরত (স.) যুদ্ধ সংক্রান্ত পরামর্শ সভা আহ্বান করেন। বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ মোতাবেক ১৭ রমজান ৩১৩ জনের একটি ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী কুরাইশ বাহিনীর মোকাবিলা করার জন্য পাঠানো হয়। বদর উপত্যকায় দুই বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। হযরত মুহাম্মদ (স.) স্বয়ং যুদ্ধ পরিচালনা করে অনুপ্রেরণা দান করেন।

আল-আরিসা পাহাড়ের পাদদেশে মুসলিম শিবির স্থাপিত হয় এবং এর ফলে পানির কূপগুলো তাদের তত্ত্বাবধানে আসে। আল ওয়াকিদী বলেন, হযরত (স.) মুসলিম সৈন্য সমাবেশের জন্য এমন একটা স্থান বেছে নেন, যেখানে সূর্যোদয়ের পর যুদ্ধ শুরু হলে কোনো মুসলমান সৈন্যের চোখে সূর্য কিরণ বিঘ্ন ঘটাবে না। প্রথমে প্রাচীন আরব রেওয়াজ অনুসারে মল্লযুদ্ধ হয়। মহানবীর নির্দেশে হযরত আমীর হামজা, হযরত আলী ও আবু উবায়দা (রা.) কুরাইশ পক্ষের নেতা উতবা, শায়বা ও ওয়ালিদ বিন উতবার সঙ্গে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এতে শত্রুপক্ষীয় নেতারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও নিহত হয়। 
উপায়ন্তর না দেখে আবু জেহেল বিধর্মী কুরাইশ বাহিনীসহ মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা মুসলমানদের প্রচ-ভাবে আক্রমণ করতে থাকে। কিন্তু চরম প্রতিকূল অবস্থায় সংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল মুসলিম বাহিনীর মোকাবিলা করা বিধর্মী কুরাইশদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। অসামান্য রণ-নৈপুণ্য, অপূর্ব বিক্রম ও অপরিসীম নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে যুদ্ধ করে মুসলমানরা বদরের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে কাফিরদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। এ যুদ্ধে ৭০ জন কুরাইশ সৈন্য নিহত হন এবং সমসংখ্যক বন্দি হয়। অপরদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম সৈন্য শাহাদাত বরণ করেন। কুখ্যাত আবু জেহেল এ যুদ্ধে নিহত হয়। 
ইসলামের প্রথম সামরিক বিজয় বদর যুদ্ধের প্রতিটি দিক ও বিভাগই যেন উম্মতে মুসলিম এবং বিশ্ব সভ্যতার ভা-ারে একেকটি শিক্ষার স্বাক্ষর। সেদিন মহান পয়গাম্বরে খোদা (সা.) যুদ্ধবন্দিদের প্রতি যে উদার ও মধুর আচরণ করেছেন, তা সত্যিই প্রতীকী দৃষ্টান্ত। ঐতিহাসিক মুইর সেদিনকার এক যুদ্ধবন্দির জবানিতেই রাসূল ও তার সাহাবীদের মহানুভবতার বিবরণ দিয়েছেন: মদিনাবাসীর ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক, তারা আমাদের উটে বা ঘোড়ায় চড়তে দিয়ে নিজেরা হেঁটে চলত।

তারা নিজেদের সামান্য রুটিও নিজেরা না খেয়ে আমাদের খেতে দিত, নিজেরা খোরমা খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত করত।’ হজরত (স.) তাদের আহার-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিলেন এবং মুক্তিপণের মাধ্যমে মুক্তির ব্যবস্থা করলেন। উপরন্তু যারা মুক্তিপণ দিতে অক্ষম, তাদের মুসলমানদের বিরোধিতা না করার প্রতিশ্রুতিপূর্বক কিংবা মুসলমান শিশু-কিশোরদের তালিম দেওয়ার অঙ্গীকারে মুক্তি দেওয়া হয়। এ ঘটনা ইসলামের উদারতার এবং কঠিন সময়েও সংযত আচরণ করার। সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যও তাই।

×