স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালায় আকস্মিক রদবদল। এ রদবদলের ফলে কেমন হবে উদ্বোধনী দিনের আয়োজন? আপাতত এটিই হয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন। উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, ওইদিনের অনুষ্ঠানের পুরোটাই হবে টেলিভিশন সম্প্রচার নির্ভর। অন্যান্য দিনের বড় আয়োজনগুলো স্থগিত রাখা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
টেলিভিশন সম্প্রচার নির্ভর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে গঠন করা টেকনিক্যাল কমিটি দিন রাত কাজ করছে। প্রথম দিন সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে মোট চারটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় আরও দুটি বৈঠক। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্যারেড স্কয়ারেই প্রস্তুত হচ্ছে মঞ্চ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিনে আগামী ১৭ মার্চ ওইখানে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। তবে আয়োজন থেকে আলোচনা পর্বটি আপাতত বাদ দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। একই কারণে উপস্থিত থাকবেন না আরেক বক্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ অবস্থায় বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী দিনের বর্ণাঢ্য রূপটি তুলে ধরা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। মঞ্চ থেকে রেকর্ড করা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ওইদিনই টেলিভিশনে প্রচার করা হবে।
জানা যায়, ১৭ মার্চ সকালে সেনাবাহিনীর তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবস সূচনা করার যে পরিকল্পনা ছিল, তা অপরিবর্তিত থাকছে। জন্মদিনে ২১ বার তোপধ্বনি করে জাতির জনককে অভিনন্দিত করা হবে। কাছাকাছি সময়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানম-ি ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এদিন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের জন্মশতবর্ষে বিশেষ বক্তৃতা করবেন। বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানাও। বক্তৃতাগুলো রেকর্ড করে টেলিভিশন, বেতারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচার করা হবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচারের পর পরই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হয়ে যাবে। এ পর্বটির মূল দায়িত্বে রয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। মঞ্চে ৪৫ মিনিটের পরিবেশনা নিয়ে থাকবে জাতীয় এ প্রতিষ্ঠান। একাডেমি সূত্র জানায়, এ সময়ের মধ্যে সঙ্গীত নৃত্যসহ নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনালেখ্য তুলে ধরা হবে।
মঞ্চে ১০ মিনিটের বিশেষ পরিবেশনা নিয়ে থাকবেন বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী আকরাম খান। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক কোরিওগ্রাফার হিসেবে পৃথিবীজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন। আগামী ১৫ মার্চ বিকেলে ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে তার। পরিবেশনার বিষয় হিসেবে ৭ মার্চের ভাষণকেই বেছে নিয়েছেন শিল্পী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ফাদার: ভিশন অব দ্য ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক কোরিওগ্রাফি প্রদর্শন করবে তার দল। আট মিনিটের পরিবেশনা হলেও, বড় আকর্ষণ হতে পারে দলীয় নৃত্যের এ আয়োজন। নৃত্যায়োজনে সঙ্গীত পরিচালনা করবেন ভিনসেনজো লামাগনা। মূল পরিবেশনায় আরও থাকবেন একেসির তিনজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমিতে প্রতিদিনই চলছে মহড়া। একাডেমির পাশাপাশি আকরাম খানের দলটিও রিহার্সালে ব্যস্ত। এ দলের প্রায় সকলেই দেশীয় শিল্পী। ফলে করোনা ইস্যুতে আকরাম খানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারলেও, পরিবেশনা বাধাগ্রস্ত হবে না বলে জানা গেছে।
এদিকে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী আয়োজন কেমন হবে সে সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউটে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য দেড় থেকে দুই ঘণ্টার টেলিভিশন অনুষ্ঠান হবে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটাকে যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, সেটাকে মোটামুটি একটা অবস্থায় রেখে চিন্তা করা হচ্ছে। এদিন শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। থাকবে যন্ত্রসঙ্গীত। পাশাপাশি মুজিববর্ষের থিম সং বা উৎসব সঙ্গীত পরিবেশিত হবে অনুষ্ঠানে। উদ্বোধনী আয়োজনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, অবদান ও ত্যাগের ইতিহাস নিয়ে ‘চিত্রপটের দৃশ্যকাব্যে বঙ্গবন্ধু’ নামে থিয়েট্রিক্যাল কোরিওগ্রাফির আয়োজন থাকবে। এটা একটা সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম আকারে তৈরি করা হয়েছে।
কামাল চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ হচ্ছে রাত ৮টা। একই সময় আতশবাজির আয়োজন করা হবে। এটি রেকর্ডেড করে সম্প্রচার করা হতে পারে। আবার কিছু অংশ লাইভও হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা জিনিস এমনভাবে ডিজাইন করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ ফিল করে, তারা এই বড় আয়োজনে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু আসতে পারেননি, তারা যাতে না ভাবেন- আমরা সম্পৃক্ত হতে পারলাম না।
সব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটা সবাই প্রচার করবেন। এর বাইরে সোশ্যাল মিডিয়াতো আছে।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ট্যাকনিক্যাল কমিটির প্রধান আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গেও। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ১৭ মার্চ ঘিরে অনেক বড় ও চমৎকার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ততটা আপাতত করা যাচ্ছে না। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি স্মরণীয় করে রাখার সব চেষ্টা আমরা করছি। পুরো আয়োজনটি ঘরে বসে টেলিভিশনে দেখা যাবে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানেই আতশবাজীর ব্যবস্থা করা হতে পারে। আমরা ভাবছি।
এদিন প্যারেড স্কয়ারের মূল মঞ্চও পরিদর্শন করেন তিনি। সে কথা জানিয়ে বলেন, সব ঠিক আছে। অনুষ্ঠান স্থলে না থাকতে পারলেও দর্শক উপভোগ করবেন।
একইদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘মুজিববর্ষ বাস্তবায়ন আন্তর্জাতিক উপকমিটির’ সভা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের চিঠির মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়েছি। তারাও চিঠির জবার দিয়েছেন। পরিবেশ ভাল হলে আগামীতে বড় অনুষ্ঠান করা হবে। তাছাড়া মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান একদিনের জন্য নয়, এটা বছরব্যাপী অনুষ্ঠান। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিশ্বে করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠান সীমিত করেছে, ইউএনসহ অন্যান্য সংস্থা অনেক অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে। আমাদের মন্ত্রণালয় দেশ সফর সীমিত করেছে। তাছাড়া আমরা ছয়টি দেশের (চীন, ইরান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড) বিষয়ে বিশেষ নজর রাখছি। এরই প্রভাব পড়েছে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে।
এদিকে, পরবর্তী দিনের আয়োজনগুলোর মধ্যে রয়েছে এ আর রহমানের কনসার্ট। বিশ্ব একাদশ ও এশিয়া একাদশের ম্যাচ অনুষ্ঠানেরও কথা রয়েছে। এ দুই আয়োজনের কী হবে? এ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ১৮ মার্চ এ আর রহমানের কনসার্ট ও ২১-২২ মার্চ বিশ্ব একাদশ ও এশিয়া একাদশের ম্যাচের ভবিষ্যত জানতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল আহসান পাপন। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, ওই দুই আয়োজন আপাতত নাও হতে পারে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: