ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ২৫০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে সৌদি আরব

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

আরও ২৫০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে সৌদি আরব

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সৌদি আরব ২৫০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ পাঠাবে দেশটি। রোহিঙ্গা এ্যাক্টিভিস্টদের একটি গ্রুপ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশে পৌঁছার পর এই রোহিঙ্গাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। খবর ওয়েবসাইটের। ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের প্রচার সমন্বয়কারী নায় সান লুইন জানান, সৌদি আরবে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার আশঙ্কা বাংলাদেশে পৌঁছার পরপরই কারাগারে পাঠানো হবে ফেরত পাঠানো রোহিঙ্গাদের। সান লুইন বলেন, রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগেরই বসবাসের অনুমতি রয়েছে এবং সৌদি আরবে বৈধভাবে বাস করতে পারে। কিন্তু জেদ্দার শুমাইসি কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে অন্য রোহিঙ্গার মতো আচরণ করা হয়নি। অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে। এই এ্যাক্টিভিস্টের সংগ্রহ করা একটি ভিডিও অনুসারে, কয়েক বছর আগে সৌদি আরব পৌঁছা এসব রোহিঙ্গাদের জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেয়া হয়েছে রবিবার। এখান থেকে তাদের ঢাকাগামী ফ্লাইটে তুলে দেয়ার কথা। সান লুইন জানান, রবিবার মধ্যরাতে বা সোমবার সন্ধ্যায় এসব রোহিঙ্গাকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে পারে। তিনি জানান, অনেক রোহিঙ্গাই ভুয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালের মতো দেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে। যখন এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পৌঁছাবে তাদের কারাগারে পাঠানো হতে পারে। সৌদি আরবের উচিত এই প্রত্যর্পণ বন্ধ করে তাদের বসবাসের অনুমতি দেয়া। যেমনটা এদের আগে আসা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে করা হয়েছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় ১৯৮২ সালে। এর ফলে রাখাইনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাসবাসকারী রোহিঙ্গারা দেশহীন হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে রোহিঙ্গাদের দেশটির ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এর ফলে তারা শিক্ষা, কাজ, ভ্রমণ, বিয়ে, ভোট, ধর্ম পালন ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। ২০১১ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা সৌদি আরব প্রবেশ করেছেন তাদের বসবাসের অনুমতি দেয়া বাতিল করেছে দেশটি। সান লুইন জানান, কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন গত দুই বছর ধরে সৌদি আরবের কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের এই রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রিয়াদ সফরের পর সৌদি আরব রোহিঙ্গা বন্দীদের ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আই জানায়, কোন অভিযোগ ছাড়াই সৌদি আরবে কয়েক বছর ধরে আটক রাখা হয়েছে কয়েকশ রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের। এদের বেশিরভাগ ২০১১ সালের পর মিয়ানমারের নিপীড়ন এড়াতে ও জীবিকার তাগিদে তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে পৌঁছায় ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইতোমধ্যে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা পাঠানো শুরু হয়ে গেছে বলে জানান দেশটিতে আটক রোহিঙ্গারা। তারা জানান, প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে ১৩ রোহিঙ্গাকে। সিলেটে ছয় রোহিঙ্গা আটক ॥ স্টাফ রিপোটার সিলেট থেকে জানান, নগরীর দক্ষিণ সুরমা কদমতলি বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ছয় রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় জনতার সহায়তায় তাদের আটক করা হয়। সোমবার তাদের পুলিশ প্রহরায় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। ছয় রোহিঙ্গা নাগরিক হলেন মৃত আব্দুল হোসেনের স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৬৫), মত্তুল হোসেনের ছেলে মোঃ সেলিম (২৫), মেয়ে ইয়াছমিন আরা (১২) ও নুর কালিমা (১০), সেলিমের স্ত্রী জুলেখা (২২) ও শিশুকন্যা আছেফা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের ঠিকানা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের সাহেববাজার বলে জানায়। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা জানান, এসব রোহিঙ্গা নাগরিক আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তাদের এক আত্মীয় শেখ আহমদ বর্তমানে কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছেন। আটককৃতদের পুলিশ প্রহরায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
×