ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গায়েবি মামলার তালিকা দিল বিএনপি

তারেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসিকে আওয়ামী লীগের চিঠি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

  তারেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসিকে আওয়ামী লীগের চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা গায়েবি মামলার একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে বিএনপি। রবিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বরাবর পাঠনো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত বিএনপির ৭৭৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের হয়রানি না করতে এবং গ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসিতে দেয়া এক চিঠিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। রবিবার রাতে দলটির পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে স্কাইপির মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব) ফারুকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত করে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি স্কাইপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু আদালত বলেছেন, একজন পলাতক আসামি হিসেবে তারেকের বক্তব্য কোথাও প্রচার হবে না। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের পদেও থাকতে পারবেন না। তার স্কাইপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ এবং বক্তব্য প্রদান নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন। আশা করি, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল ইসলাম চৌধুরী নওফেল বলেন, একজন পলাতক আসামির বক্তব্য গণমাধ্যমে আসতে পারে না। গণমাধ্যমও সেই বক্তব্য প্রচার করতে পারবে না বলে আদালতের নির্দেশনা আছে। তারেক রহমান এই টেলিকনফারেন্স করে কোর্টের আদেশ অমান্য করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে এ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, রিয়াজুল কবীর কাউসারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে রবিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা চিঠিসহ গায়েবি মামলার তালিকা দলের পক্ষ থেকে সালাউদ্দিন খান নামের একজন সিইসির দফতরে পৌঁছে দেন। তিনি বিএনপির নেতকর্মীদের মামলাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। ইসিতে দেয়া বিএনপির চিঠিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ৮ নবেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির ৭৭৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৫ নবেম্বর সেই তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে হলেও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ উপেক্ষা করে ধারাবাহিকভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছেও পাঠানো হলো। অবিলম্বে নেতাকর্মীদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়াসহ গ্রেফতার বন্ধের অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুই হাজার ৪৮টি মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সিইসি বরাবর বিএনপির দেয়া চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপির জাতীয় নেতারাসহ দেশব্যাপী মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্ভট, ভিত্তিহীন, গায়েবি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়েছে। বিশেষ করে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে হঠাৎ ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেরাই বাদী হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা এবং গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। মৃত ব্যক্তি, অসুস্থ, পঙ্গু, হজ পালনরত ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিরাও এসব গায়েবি মামলার হাত থেকে রক্ষা পাননি। চিঠিতে আরও বলা হয়, বিএনপিসহ ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সাত দফা দাবি নিয়ে ১ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রী সেসব মামলা ও গ্রেফতারের তালিকা তার দফতরে পাঠাতে বলেন। সেই আলোকে ৭ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রথম দফায় ১ হাজার ৪৬টি মামলার তালিকা দিয়েছে বিএনপি। ১৩ নবেম্বর ১ হাজার ২টি মামলার দ্বিতীয় তালিকা দিয়েছে বিএনপি। দুই দফায় মামলার তালিকা পাঠানো হলেও মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কি না, তা এখন পর্যন্ত বিএনপিকে অবহিত করা হয়নি। ইসির বক্তব্য ॥ তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই তালিকা প্রসঙ্গে ইসি রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির দেয়া তালিকা এখনও দেখিনি। সত্যিকার অর্থে যদি কোন হয়রানিমূলক মামলা হয়ে থাকে এবং সেটা যদি রাজনৈতিক হয়ে থাকে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেব যেন তারা হয়রানিমূলক মামলা না করে। কারণ তাতে নির্বাচনী পরিবেশ কিছুটা হলেও নষ্ট হয় উল্লেখ করেন। তিনি তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সাক্ষাত নেয়ার বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের কি করার আছে তা আলোচনা করেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনের মধ্যে যদি কিছু না থাকে, তাহলে আমরা কমিশনের সঙ্গে বসে কী করতে পারি, তা পর্যালোচনা করে দেখে তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেব। একজন দ-িত আসামি দেশে থাকলে তিনি হয় কারাগারে থাকবেন অথবা পলাতক। কেউ কারাগারে থাকলে এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। জেল থেকে জামিনে এসে করলে কোন অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এই ক্ষেত্রটা একবারে ভিন্ন। আইনের মধ্যে কী আছে সেটা দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রফিকুল ইসলাম বলেন, থ্যাংক ইউ পিএম- এটি আমি টেলিভিশনে দেখেছি। এটি প্রচারের জন্য বেসরকারী টেলিভিশনের নীতিমালা আছে। বেসরকারী টেলিভিশনকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন ক্ষমতা বা ইচ্ছা আমাদের নাই। উনারা স্বপ্রণোদিত হয়ে এই প্রচার করতে পারেন। সেটা নির্বাচনী প্রচার হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। তিনি বলেন, একটা সরকার আছে, সেই সরকারের কর্মকান্ড তারা প্রচার করছে। আমরা বেসরকারী টেলিভিশনের সম্প্রচারে কোন নির্দেশনা দিলে আপনারা হস্তক্ষেপের কারণে আন্দোলনে নামবেন। পুলিশ নির্বাচনের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে- এমন একটি খবরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রফিকুল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোন নির্দেশ নাই। আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি, রিটার্নিং কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোন নির্দেশ দেননি। কোন পুলিশ কর্মকর্তা যদি অতি উৎসাহী হয়ে এ ধরনের কিছু করে থাকে, তাহলে আপনারা ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিস্তারিত তথ্য- কি করতে হবে তা আমাদের ওপর ছেড়ে দেন উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তিকে যেন হয়রানি করা না হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×