কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশীদের জন্য ধীরে ধীরে সহজ হয়ে আসছে ভারতীয় ভিসা। এক বছর আগে ই-টোকেন বিড়ম্বনা ও এন্ট্রি পয়েন্ট নিয়ে জটিলতা থাকলেও এখন সেটা নেই। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে একের পর এক উদ্যোগ নেয়ার ফলে ভারতীয় ভিসা সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। সূত্র জানায়, এক বছর আগেও ভারতীয় ভিসা পেতে ই-টোকেন বিড়ম্বনায় পড়তেন বাংলাদেশীরা। ই-টোকেন পাওয়ার জন্য আবার কেউ কেউ দালালের শরণাপন্নও হতেন। আবার এন্ট্রি পয়েন্ট নিয়েও জটিলতা ছিল। কোন নাগরিক ভিসা পেলে শুধু যে পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করতেন, সেই পয়েন্ট দিয়েই তাকে আসতে হতো। অনেকেরই এক বছর ভিসার মেয়াদ থাকলেও শুধু সেই পয়েন্ট দিয়েই যাতায়াত করতে হতো। তবে সর্বশেষ সোমবার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে সেই নিয়ম তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে ভ্রমণকারীদের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এর ফলে অন্য কোন এন্ট্রি পয়েন্টের ভিসা থাকলেও হরিদাসপুর, গেদে ও যে কোন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশীরা ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন।
ভারতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেন বাংলাদেশীরা। গত বছর প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশী ভারত ভ্রমণ করেছেন। যেটা ২০১৫ সালের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি ছিল। ২০১৫ সালে ভারতে পর্যটক পরিসংখ্যানে এগিয়ে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২০১৬ সালে পর্যটক তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর পরেই আছে যুক্তরাজ্য। সে কারণে বাংলাদেশী নাগরিকদের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণের রেকর্ডের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা সহজ করেছে।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত মাসে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় ভিসার প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ করা হয়েছে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা পাচ্ছেন। নারীদের সরাসরি আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সবার জন্যই এক বছরের ভ্রমণ ভিসা দেয়া হচ্ছে। ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র থেকে সহজ প্রক্রিয়ায় ভিসা নিশ্চিত করার দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। তিনি জানিয়েছিলেন, ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ করার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশের নাগরিকরা ভ্রমণ, চিকিৎসা, কেনাকাটার জন্যই মূলত ভারতে যেয়ে থাকেন। এছাড়া অনেককে লেখাপড়ার কারণে ভারতে যাতায়াত করতে হয়। সে কারণে ভিসা সহজীকরণের জন্য বাংলাদেশের ভ্রমণকারীদের প্রত্যাশা রয়েছে। সে কারণে ভিসা সহজীকরণের উদ্যোগ নেয় ভারতীয় হাইকমিশন।
গত ৫ জুন ভারতীয় হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দরে আরোপিত বিধিনিষেধ সহজ করা হয়েছে। ফলে ভারতের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারছেন বাংলাদেশী নাগরিক। এছাড়া তাদের সংশোধিত নির্দেশিকা অনুযায়ী- ২৪ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং হরিদাসপুর ও গেদের সমন্বিত চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতকারী বাংলাদেশীদের ভিসায় প্রবেশ/প্রস্থান নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করা হয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও যাতায়াতকে আরও সুগম করার লক্ষ্যে বিধিনিষেধ সহজ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত এপ্রিলে ভারত সফরকালে ঘোষণা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা পাচ্ছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতের বিশেষ সংযোগের স্বীকৃতি হিসেবে এই বিধান একটি বিশেষ সৌজন্য হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বর্ধিত করা হয়েছে। ৫ বছরের ভ্রমণ ভিসা পেতে ইচ্ছুক মুক্তিযোদ্ধারা এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই ভ্রমণ ভিসা আবেদনপত্র জমা দিতে পারছেন। এছাড়া বাংলাদেশের ৬৫ বছরের উর্ধের নাগরিক ৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদী মাল্টিপল এন্ট্রি ভ্রমণ ভিসা পাচ্ছেন।
এদিকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ভারত ভ্রমণে আগ্রহী বাংলাদেশীরা নিশ্চিত টিকেট সাপেক্ষে ই-টোকেন ছাড়াই ভিসা আবেদন জমা দেয়ার সুবিধা দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। সে অনুযায়ী ভারতে যাওয়ার (বিমান, সড়ক বা রেলপথের) নিশ্চিত টিকেট রয়েছে এমন বাংলাদেশীরা সরাসরি ভিসা আবেদন জমা দিতে পারছেন। এর আগে গত বছর অক্টোবর থেকে ভারতে যেতে আগ্রহী নারীদের ই-টোকেন ছাড়াই ভিসা আবেদনের সুবিধা দেয় ভারতীয় হাইকমিশন। সে অনুযায়ী পরে সকল সাধারণ নাগরিকের জন্য এই সুবিধা বর্ধিত করা হয়।
সূত্র জানায়, ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভিসা সহজীকরণের বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। উভয়পক্ষই ভিসা সহজীকরণে ঐকমত্য হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভিসা সহজীকরণ হলে উভয় দেশের মধ্যেই মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়বে বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন উভয় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
ই-টোকেন ও এন্ট্রি পয়েন্ট জটিলতা নেই
বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় ভিসা সহজ হচ্ছে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: