ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়োগ বন্ধ রেখে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ

ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই বিদেশী পাইলটরা চাকরি করছেন বিমানে

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২ জুন ২০১৬

ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই বিদেশী পাইলটরা চাকরি করছেন বিমানে

আজাদ সুলায়মান ॥ একদিকে পাইলট নিয়োগ বন্ধ রেখে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে; অন্যদিকে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই উচ্চ বেতনে বিদেশী পাইলটদের দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের দরুন আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি এখন বড় ধরনের পাইলট সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিমানে। ফ্লাইট অপারেশন বিভাগ সূত্র জানায়, ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বাংলাদেশ বিমানে কাজ করছেন মিসরের তিন পাইলট। তারা হলেন ক্যাপ্টেন আটওয়া, ক্যাপ্টেন হাতেম ও ক্যাপ্টেন ওসমান। তারা মিসরের স্মার্ট এভিয়েশনের নিজস্ব পাইলট হিসেবে বাংলাদেশ বিমানে কাজ করছেন। বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য মিসরের স্মার্ট এভিয়েশন থেকে লিজে আনা দুটো ড্যাশ-আট উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে তারা কর্মরত। গত এক বছর ধরে অবৈধভাবে উড়োজাহাজ চালানোর বিপরীতে তাদের বেতন ভাতাদিও পরিশোধ করা হচ্ছে অবৈধ পন্থায়। ঢাকা তাদের কর্মস্থল হলেও তাদের বেতন ভাতাদি পরিশোধ করা হচ্ছে লন্ডনে। এ সম্পর্কে বিমানের চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল ইনামুল বারী বলেছেন- বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে পরে জানানো হবে। বিমানের প্রশাসন শাখা থেকে জানানো হয়, বিমানে বিদেশী কোন নাগরিক চুক্তিভিত্তিক চাকরি করতে হলে সবার আগে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ড থেকে ওয়ার্ক পারমিট থাকা আইনগত বাধ্যতামূলক। ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করলে তাদের বৈধভাবে কোন ধরনের বেতন ভাতাদিও পরিশোধ করা যায় না। অথচ গত দুবছর ধরে এই তিন পাইলটের লন্ডন এ্যাকাউন্টে নিয়মিত পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। কিভাবে প্রকাশ্যে এমন অবৈধ কর্মকা- করছে এ নিয়ে খোদ বিমানের ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠছে। বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখা থেকে জানানো হয়- স্মার্ট এভিয়েশন থেকে লিজে আনা দুটো ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের যে চুক্তি করা হয়-তাতে অনেক শর্ত উল্লেখ করা হয় যা অবৈধ বলে বিবেচিত। বাংলাদেশে কোন বিদেশী নাগরিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করতে হলে তাকে বিনিয়োগ বোর্ড থেকে ওয়ার্ক পারমিট নেয়া বাধ্যতামূলক। এ আদেশ অমান্য শাস্তিমূলক অপরাধ। এটা জেনেও রহস্যজনক কারণে গত বছর এপ্রিলে মিসরের ছয় পাইলটসহ দুটো ড্যাশ-এইট উড়োজাহাজ লিজে নেয় বিমান। চুক্তিতে শর্ত ছিল-প্রথম ছয় মাস এই ছয় পাইলট চুক্তিভিত্তিক বেতনে কাজ করার সময় বিমান নিজস্ব পাইলট নিয়োগ দিয়ে তাদের ড্যাশ এইট চালানোয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত করা হবে। কিন্তু পাইলটদের সংগঠন বাপার সভাপতি এতে বাধা দেয়ায় বিমান দক্ষ কোন পাইলট নিয়োগ দিতে পারেনি। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমানের নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭ এর তিন সুদক্ষ ফার্স্ট অফিসার নজরুল শামীম, মুকাচ্ছিদ হোসেন ও মুনিম নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অধিকতর কম বেতনে ড্যাশ-এইটের প্রশিক্ষণ নেন। এতে স্মার্ট এভিয়েশনের ছয় পাইলটের মধ্যে তিনজন ছয় মাসের মাথায় চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু বাকি তিনজনকে এখনও বিমান উচ্চ বেতনে রেখে দিয়ে কাজ করাচ্ছে। অন্যদিকে তিন দেশী পাইলটের বেতন ভাতাদি ঠিকমতো পরিশোধ করা হচ্ছে না। বাপার নোংরা রাজনীতিতে বিমান ম্যানেজমেন্টও জড়িয়ে গেছে। এ সম্পর্কে বিমানের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ তিন পাইলটকে যে পরিমাণ বেতন দেয়া হচ্ছে- সে টাকায় দেশী দশ জন পাইলট নিয়োগ করা সম্ভব। একেক জন পাইলটকে প্রায় দশ হাজার ডলার করে বেতন দেয়া হচ্ছে। তাও আবার বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে লন্ডনে স্মার্ট এভিয়েশনের এ্যাকাউন্টে এ টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। জানতে চাইলে বিমান প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, স্মার্ট এভিয়েশনের সঙ্গে উড়োজাহাজের লিজের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য লন্ডনের এ্যাকাউন্টে ডলার জমা দেয়া হয়। মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিদেশী নাগরিক বিমানে চাকরি করাটা বড় ধরনের শাস্তিমূলক অপরাধ। কেন গত এক বছরেও ড্যাশ এইটের জন্য পাইলট নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি জানতে চাইলে এক পরিচালক বলেন, বিমান একাধিকবার দেশী দক্ষ পাইলট নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে। তখন পাইলটদের সংগঠন তাতে প্রবল আপত্তি তোলে। কারণ দক্ষ পাইলট নেয়া হলে বাপার নেতৃবৃন্দের আত্মীয়স্বজন ও ছেলে-মেয়েদের পাইলট হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে না। এ কারণে বাপা চাচ্ছে দক্ষ পাইলট নিয়োগের পরিবর্তে ক্যাডেট পাইলট নিতে। আর বিমান ম্যানেজমেন্ট ওদের ওই আব্দারের কাছেই নতজানু হয়ে আছে। এ বিষয়ে বিমানের এক সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন-বাপার আব্দার অনুযায়ী ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ দেয়া হলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে বিমানকে আর্থিক অপচয়ের পাশাপাশি পাইলট সঙ্কটে পড়তে হবে। বিমান তো কোন পাইলট প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান নয় যে বার বার শুধু বাপার নেতৃবৃন্দের গোষ্ঠীগত স্বার্থরক্ষা করতে হবে। এহেন অদক্ষ ব্যবস্থাপনার খেসারত তো এখনই দিতে হচ্ছে বিমানকে। পাইলট নিয়োগ বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ রুটের ড্যাশ এইটের মতো উড়োজাহাজের জন্য দশ হাজার ডলার দিয়ে পাইলট রাখতে হচ্ছে।
×