ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চিতা পোদ্দার

আমার সন্তান ভাল আছে তো?

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৯ জুলাই ২০১৬

আমার সন্তান ভাল আছে তো?

মা তার সন্তানকে জঠরে ধারণ করার পর থেকে সেই অনাগত সন্তানের মুখচ্ছবি হৃদয়ে গেঁথে স্বপ্ন বুনতে থাকে। তারপর যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তখন থেকে যত বড় হতে থাকে, বাবা-মায়ের স্বপ্নগুলোও সেভাবে ছড়াতে থাকে। এক সময় স্কুল পার করে, সন্তান যখন নামী-দামী কলেজে ভর্তি হয়, তখন বাবা-মা মনে হয় একটু হাফ ছেড়ে বাঁচেন। সন্তানরাও মনে করে আমরা তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছি আসলে সন্তান কখনও বাবা-মায়ের কাছে বড় হয় না। ভাবে আমার সন্তান সেই ছোট্টটিই আছে। তাই তো মা সন্তান বাড়ি আসলে এক লকমা ভাত মুখে তুলে খাইয়ে দিতে গেলে ছেলে বলে, মা এখনও! আসলে ছেলে দূরে চলে যাওয়ার পর থেকে বাবা-মার সঙ্গে কেমন যেন দূরত্ব বাড়তে থাকে- তখন তারা নিজেদের একটা আলাদা জগত তৈরি করে ফেলে। বাবা-মাও ভেবেই নেন সত্যিই তো ওরা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন তো ওরা কোন ভুল পথে পা দেবে না। কারণ তারা তো সেই বয়সটাই পার করে এসেছে। আর এখানেই আমরা বাবা-মায়েরা একটু ভুল করে ফেলি। মাসের পর মাস টাকা-পয়সা দিয়ে যাই কিন্তু একদিনের জন্য খোঁজ রাখি না আমার সন্তান সত্যিই লেখাপড়া করছে, না অন্যদিকে সময় ব্যয় করছে, নাকি ক্লাস মিস করেÑ তাই যদি রাখতাম তাহলে আমাদের বাবা-মাদের এই চরম মূল্য দিতে হতো না। যে সন্তানদের জন্য তিল তিল করে স্বপ্ন বুনে যাচ্ছিল- কিন্তু হঠাৎই কালবৈশাখী ঝড়ে ওলট পালট করে দিয়ে যাচ্ছে বাবা-মায়ের সেই স্বপ্ন। আচ্ছা, কি এমন মন্ত্র যাদের কানে দেয়া হচ্ছে যে, আটারো-বিশ বছরের স্নেহ-আদর, মায়া-মমতা, ভালবাসা তুচ্ছ করে, তারা ওই রকম বিপথগামী হতে চলেছে। আমাদের নতুন প্রজন্মদের এভাবে বিপথগামী হতে যারা সাহায্য করছে এরা কারা? কি তাদের পরিচয়Ñ আর তাদের উদ্দেশ্যই বা কী? তারা তো এ দেশেরই কারও না কারও সন্তান; ভাই-স্বামী, বাবা, কিন্তু তারাই বা কেন এমন নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নিচ্ছে। আসলে এই প্রশ্ন এখন আমার মতো অনেক বাবা- মার। কিন্তু সব উত্তরই যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে- তবে অভিভাবক হিসেবে আমরা বাব-মায়েরা এই দায় এড়িয়ে যেতে পারি না। কারণ বাবা-মা হচ্ছে সন্তানের পরম বন্ধু। সন্তানের আচরণে কী কোন পরিবর্তনই লক্ষ্য করা যাইনি? তবে এটাও সত্যি দু’একদিনের জন্য বাড়িতে আসলে বাবা-মা কি ভাবে বুঝবে, তাদের সন্তান ভাল আছে কি? তবে এর থেকে উত্তরণের এক মাত্র উপায় বাবা-মা, সমাজ, রাষ্ট্রকে এই উঠতি বয়সী নতুন প্রজন্মের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কোন্টা ভাল কোন্টা মন্দ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়াতে ধর্মের যে ভাল ভাল শিক্ষণীয় বিষয় আছে সেগুলো বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে। পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারাও এই বিষয়গুলো ভেবে দেখতে পারেন। তা না হলে এই আমাদের কিছু বিপথগামী সন্তানের ভবিষ্যত কোন্ দিকে অগ্রসর হবে সেটা ভাবলেও গা শিউরে উঠছে। তাই এখনই সময় আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের সন্ত্রানদের পাশে দাঁড়াই – কারণ তারা যে পথ বেছে নিচ্ছে এ পথে কখনও জান্নাতবাসী হওয়া যাবে না। এ পথ ধ্বংসের পথ। তাই তোমরা ফিরে এসো তোমাদের বাবা-মায়ের কাছে। তাদের সেবা কর, দেশকে ভালবেসে দেশের জন্য কিছু কর- দেখবে এটাই হচ্ছে আসল জান্নাত। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই- তাই স্রষ্টার সৃষ্টি এই মানুষকে ভাল বাসতে হবে। সেই সঙ্গে বাবা-মাকে খেদমত করতে হবে তবেই জান্নাতবাসী হওয়া যাবে।
×