ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

গরমে ক্যাজুয়াল শার্ট

রেজা ফারুক

প্রকাশিত: ২০:০৬, ২৬ মে ২০২৪

গরমে ক্যাজুয়াল শার্ট

.

প্রচন্ড দাবদাহে জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। পিচের সড়কগুলো যেন মরীচিকা। বৃক্ষ, তরুলতা, জলাশয়, পুকুরবিহীন নগর জীবন হয়ে পড়েছে ক্লান্ত অবসন্ন। এই অবস্থায় পোশাকের বেলাতেও পরিবর্তন লক্ষণীয়। নারী, পুরুষ, তরুণ-তরুণী প্রায় সকলেই সুতির জামা- বিশেষ করে হাফসিø, ক্যাজুয়াল পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। হাওয়াই শার্ট কিংবা হাফ শার্ট যে নামেই চিত্রিত করা হোক না কেন প্রচন্ড গরমে টি-শার্ট, হাফ শার্টের রয়েছে একটা বিশেষ কদর। তবে হাওয়াই শার্ট কিংবা টি-শার্ট যে শুধু গ্রীষ্মকালীন পোশাক তা নয়। সব ঋতুতে হাফ শার্ট পরা যায় এবং অনেকেই যে যার রুচি পছন্দ অনুযায়ী পরিধান করে থাকেন। এই ড্রেসের এক্সিকিউটিভিটি যেমন রয়েছে তেমনি ক্যাজুয়াললিও এই শার্ট হরহামেশা পরা যায়। সাদামাটা যেমন আছে একইভাবে এক্সক্লুসিভ, গর্জিয়াস হাফ শার্টের প্রচলনও সর্বত্র পরিলক্ষমান। সেটা হোক শহর কিংবা অজপাড়া গাঁ। গরমে অফিস গোয়িং একজন তরুণ এক্সিকিউটিভ যখন সাদা হাওয়াই শার্ট প্যান্টের ভিতরে ইন্ করে পরে মানানসই টাই গলায় বাঁধেন এবং পায়ে পরেন ম্যাচ করে বার্নিশজ্বলা সু তখন ওই তরুণ অফিস কর্মকর্তার পার্সোনালিটির ঝলকানিটা সবার চোখকেই স্মিত সুন্দর ইমপ্রেশনে সিক্ত করে তোলে।

এতেই বোঝা যায় যে হাওয়াই শার্টের বিমুগ্ধ ফ্লেবারটা মানুষের ব্যক্তিত্বকে কিভাবে ফুটিয়ে তোলে। শুধু যে এক্সিকিউটিভ এবং তার সঙ্গে সাদা হাফ শার্ট তা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক ফ্যাশন ট্রেডে গ্রীষ্মকালীন সময়কে সামনে রেখে নানা ডিজাইন, আঙ্গিক, রঙ এবং প্যাটার্নে হাওয়াই শার্ট তৈরি হচ্ছে যা ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে শপিং মলের ফ্যাশন হাউস থেকে পছন্দ মতো সংগ্রহ করা যায়। আর বছরজুড়ে এই হাওয়াই বা হাফ শার্ট কমবেশি সকলেই পরে থাকেন। একটা বিষয় লক্ষ্য করলেই দৃষ্টিগোচর হবে যে, এদেশের এমন কাউকেই পাওয়া যাবে না বোধ করি যার সংগ্রহে একটা হাফসিø শার্ট কিংবা হাফ শার্ট নেই। তবে এই হাফ শার্টেও রয়েছে রকমফের। যেমন কেউ সরাসরি আউটলেট কিংবা বিভিন্ন শপিং মল অথবা ফ্যাশনেবল ড্রেস হাউজ থেকে হাওয়াই শার্ট পছন্দ অনুযায়ী ক্রয় করতে পারেন। কেউবা গজ হিসেবে কাপড় কিনেও দর্জি দোকান থেকে বানিয়ে নিতে পারেন। ফ্যাশনেবল হাওয়াই শার্টের বিকাশমান সময়টা দুই তিন দশকের সীমায় প্রবাহিত হলেও এই বাংলাদেশের মানুষ যুগ-যুগ ধরেই এই হাওয়াই শার্টের সঙ্গে পরিচিত। যখন এদেশে নগর-জীবনের বৃত্তটা ছিল একেবারেই সীমিত। যেকোনো মিডিয়ার বিস্তৃতি ছিল অনেকটা ঢাকা কেন্দ্রিক- তখন গঞ্জের হাটে-হাটবারে দোকানিরা অজস্র রেডিমেট শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবিসহ নানা ধরনের পোশাক নিজেদের দর্জিখানায় হাটবারকে উপলক্ষ করে বানিয়ে হাটে হাটে বিক্রি করতেন, আবার হাটবার ছাড়াও গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করতেন নানা ধরনের তৈরি জামাকাপড়। আর এই জামাকাপড়ের এক বিরাট অংশজুড়ে থাকত বিভিন্ন মাপের হাওয়াই বা হাফ শার্ট। সুতি, টেরিলিন, টেট্রন, পলিয়েস্টারসহ বিভিন্ন কাপড় দিয়ে এই জামা তৈরি হতো। এসব কাপড়ের মধ্যে অন্যগুলো বর্তমানে থাকলেও টেরিলিনের কাপড়ের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তই বলা চলে।

তাই একথা বলাই যায় যে, হাওয়াই শার্ট এদেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতিরই একটা অংশ। কালক্রমে সেই ঐতিহ্যে, সংস্কৃতিতে যুক্ত হয়েছে চমৎকার নান্দনিকতা যার পেছনে ডিজাইনারের শিল্পিত দৃষ্টিভঙ্গির একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও এই আবহমান সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে। বাঙালির বিলাসী মন সকল দূরত্ব অতিক্রম করে সব স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দিতে থাকে সচেষ্ট। পোশাক-আশাকের ব্যাপারেও রয়েছে বাঙালির বিশেষ এক অবস্থান। যে রীতির পথ বেয়ে আজ টি-শার্ট, হাওয়াই বা হাফ শার্ট প্রতিটা পুরুষের কাছেই অত্যন্ত নন্দিত একটা পোশাক। চাইনিজ কাট, স্ট্রেট কাট, শর্ট লেন্থ, লংলেন্থ হাফ শার্টসহ নানা নামে অভিহিত হাফ শার্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিশেষত সুতির ফেব্রিক্স- বানানো টি-শার্ট শার্টের চাহিদাই তুলনামূলকভাবে বেশি। যেহেতু বাংলাদেশের ঋতুচক্রে গ্রীষ্মের প্রভাব তাপ প্রবাহের স্থায়িত্বকাল বেশি। তাই সবারই প্রথম পছন্দের শীর্ষে থাকবে কম্ফোর্টেবল ক্লথের হাওয়াই শার্ট। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, এক্সিকিউটিভ সেলিব্রেটি তথা সবার কাছেই গরমে অনন্য প্রিয় হয়ে ওঠে এই টি-শার্ট, হাওয়াই শার্ট।

×