ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিসিএস জয়ই সব নয়

চাকরি বাজার ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:২৩, ১৫ মার্চ ২০২৪

বিসিএস জয়ই সব নয়

আবদুল আজিজ

৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আবদুল আজিজ। ফেনীর লেমুয়া ইউনিয়নের কসবা গ্রামেই কেটেছে তার শৈশব। ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মোকাবিলা করেছেন নানা প্রতিকূলতা। এরপর সব বাধা পেরিয়ে প্রথমবারেই পেয়ে যান বিসিএসে সাফল্য।
আবদুল আজিজের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কওমি মাদ্রাসা থেকে। সেখানে তিনি হাফতাম (সপ্তম শ্রেণি) পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। সেখানে পড়া অবস্থায় তার বাবা মারা যান। তারপর ২০০৯ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারে অসচ্ছলতা দেখা দেয়ায় পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া তার কাছে কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে তিনি আলিয়া মাদ্রাসায় স্থানান্তরিত হন। সেখান থেকেই তিনি আলিম (এইচএসসি) সম্পন্ন করেন। আবদুল আজিজ বলেন, ‘আমার বাবা ইতালি ছিলেন।

ভেবেছিলাম আলিম পরীক্ষা দিয়ে বিদেশ চলে যাব। নানা জটিলতায় ভিসা বের করা যাচ্ছিল না। তাই ফেনী কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই। এরপর একাডেমিক পড়াশোনায় গুরুত্ব বেশি দিতে লাগলাম। জানতে হবে, বুঝতে হবে, শিখতে হবেÑ এর মধ্যেই ছিলাম। চাকরির প্রতি এতটা মনোযোগী ছিলাম না। বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। খুঁজে খুঁজে সিলেবাস বের করি, সেখানে দেওয়া বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করি।’
আবদুল আজিজ জানান, তার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা মফস্বলে বড় হয়েছি, তারা চারপাশ নিয়ে অনেক কম জানি, বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে ধারণাও কম। কিন্তু ইন্টারনেট হাতের মুঠোয় আসার পর বিশেষ করে ইউটিউব সেই ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করেছে। আমি এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছি। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে রিসার্চ বেজড কন্টেন্ট দেখতাম। ভিডিও কন্টেন্টগুলো আমার প্রস্তুতিতে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।
আবদুল আজিজের মতে ভাইভা ভালো হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনি পছন্দ কী দিচ্ছেন। বিসিএস পরীক্ষায় যে বিষয়গুলো পছন্দ দিয়েছেন, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। প্রতিটি ক্যাডারের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং ক্যাডারের মাধ্যমে কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে চানÑ তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

এ ছাড়া ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ, সংবিধান ও মানচিত্র, নিজ জেলা ও উপজেলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জিজ্ঞেস করলে ঘাবড়ে না গিয়ে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে।
তরুণদের বিসিএস প্রস্তুতির বিষয়ে আবদুল আজিজের মতÑ বিসিএস জয়ই সবকিছু নয়। আরও অনেক কিছু আছে। বিসিএস না হলে জীবন বৃথা হয়ে যাবে এমন মনোভাব আনা যাবে না। পড়তে থাকুন। পৃথিবীতে অন্য প্রফেশনের মানুষও দরকার। যারা দেশকে নানাভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যদি বিসিএসের স্বপ্নই দেখেন, তা হলে খুবই কৌশলে সামনে এগোতে হবে। চারপাশটা দেখতে হবে, বুঝতে হবে।

অনেকেই দেখি, শুধু প্রিলির জন্য পড়াশোনা করেন। এরপর পাস করলে লিখিত, তারপর ভাইভা পড়বেন। এ রকম করা ঠিক নয়। সামগ্রিক বিষয়ে সমানে এগোতে হবে। ধরুন আপনি ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ে পড়ছেনÑ এটি প্রিলি, লিখিত, ভাইভা সবকিছুর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাই একজন বিসিএস প্রত্যাশীকে প্রিলি, লিখিত, ভাইভা বিষয়ে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ভুলে যাওয়ার মতো কোনো তথ্যকে আলাদা নোট করে রাখতে হবে। লাইভ এমসিকিউতে টেস্ট দিয়ে নিজের দুর্বল বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। এভাবে একটু একটু করে সামনে এগোতে হবে।
আবদুল আজিজের ছিল এটি প্রথম বিসিএস, যা তিনি অ্যাপিয়ার্ড ফলাফল দিয়ে আবেদন করেছিলেন। শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি শিক্ষক হয়েই দেশের সেবা করে যাবেন। আবদুল আজিজ শিক্ষক হয়ে দেশ গড়ার কারিগর হোক অথবা আরও ভালো কোনো পদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশ সেবায় মগ্ন হোক।

চাকরি বাজার ডেস্ক 

×