ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আক্রমণের মাত্রা বাড়াচ্ছে হ্যাকাররা ॥ টার্গেট যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নেটওয়ার্ক

রুশ সাইবার হামলা বড় হুমকি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

রুশ সাইবার হামলা বড় হুমকি

রুশ হ্যাকাররা গুপ্তচরবৃত্তি, তথ্য চুরি এবং ভবিষ্যতে সাইবার আক্রমণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নেটওয়ার্ক টার্গেট করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই উদ্দেশে তারা লাখ লাখ ডিভাইসকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ব্রিটেন ও আমেরিকা প্রথমবারের মতো যৌথ ‘প্রযুক্তিগত সতর্কতা’ গ্রুপ গঠন করেছে। জনসাধারণ ও বাণিজ্যিক কর্মকা-ে নিয়োজিতদের তারা মৌলিক নিরাপত্তা সতর্কতার নিয়মগুলো অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন।-ইন্ডেপেন্ডেন্ট ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা জিসিএইচকিউর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারের (এনসিএসসি) প্রধান নির্বাহী সিয়ারান মার্টিন বলেছেন, রাশিয়া এখন সাইবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। এ ক্ষেত্রে তারা শত্রুতামূলক আচরণ করছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং আরও কয়েকটি মিডিয়ার সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘তারা সরাসরি যুক্তরাজ্যকে বিশেষ করে জ্বালানি খাত টার্গেট করেছে। মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এই তথ্য জানা গেছে। ব্রিটেনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টার্গেট করে কয়েক মাস হামলা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি রাশিয়া রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এর পশ্চাতে রয়েছে।’ গোপন তথ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি এ আক্রমণগুলোর উদ্দেশ্য। প্রয়োজনের সময় তথ্যগুলো কাজে লাগানো হ্যাকারদের উদ্দেশ্য ছিল বলে মার্টিন মনে করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব জুড়ে লাখ লাখ ডিভাইসের সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা তারা করেছে। এর মধ্যে কেবল যুক্তরাজ্যেরই হাজার হাজার হোম ডিভাইস রযেছে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার জবাবে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, রুশ হ্যাকারদের হামলার পূর্ণমাত্রা যে কতটুকু সেটি তারা আসলে জানেন না। রুশ হ্যাকাররা ইন্টারনেট সংযোগ মাধ্যম রাউটারে আড়ি পেতে সাধারণ লোকজন ও অফিসিয়াল তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে সাইবার আক্রমণের জন্য তারা এগুলো করেছে। মার্টিন বলেন, কিছু আক্রমণ ছিল সরাসরি ব্রিটিশ সরকার এবং এনএইচএসের মতো জাতীয় সংস্থাগুলো লক্ষ্য করে। বিষয়গুলো গত বছর উত্তর কোরিয়া ‘রয়ানা ক্রাই’ নামে যে সাইবার আক্রমণ করেছিল সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। সাইবার আক্রমণ যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে এ থেকে তার কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। অন্যান্য লক্ষ্যগুলো হচ্ছে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী এবং বেসরকারী খাতগুলো। এসব থেকে তথ্য নিয়ে তারা ভবিষ্যতে অপারেশনের জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরি করে। তিনি মনে করেন, রুশ সাইবার আক্রমণ এখন সন্ত্রাসবাদের চেয়ে বড় হুমকি। রুশ হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে জিসিএইচকিউর অনুসন্ধানী তৎপরতা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে অব্যাহত আছে। তবে র‌্যানসমওয়্যার, ইউক্রেনের বিদ্যুত ব্যবস্থা বিপর্যয় এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ঘটনার পর রুশ সাইবার হামলার দিকে সবার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। গত মাসের গোড়ার দিকে ব্রিটেনের সলসবেরিতে একজন সাবেক গোয়েন্দার ওপর নার্ভ গ্যাস হামলায় রাশিয়া জড়িত ছিল, ব্রিটেন এমন অভিযোগ করার পর রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়। এরপর সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সিরিয়ায় সম্মিলিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রাশিয়ার সঙ্গে দেশগুলোর সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। এর আগে ইউক্রেন দখল ও পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে দুইপক্ষের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি শুরু হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা রব জয়েস বলেছেন রাশিয়া ‘বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মজুদ করছে’। তবে তারা মার্কিন নির্বাচন টার্গেট করে কিছু করছে কী না এ সম্পর্কে কোন গোয়েন্দা তথ্য নেই। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন কেবল রাশিয়া নয় অন্যান্য দেশের থেকেও এমন হুমকি আসছে। ক্রেমলিন অবশ্য কোন ধরনের সাইবার আক্রমণে জড়িত থাকার কথা আগে থেকেই অস্বীকার করে এসেছে।
×