ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাত কোটি বছর আগের ॥ ডায়নোসরের কঙ্কাল

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

সাত কোটি বছর আগের ॥ ডায়নোসরের কঙ্কাল

ডায়নোসরের ব্যতিক্রমধর্মী একটি জীবাশ্ম সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো জীবাশ্মটিই মোটামুটি অক্ষত রয়েছে। ডায়নোসরটির ফসিলের মাথার সঙ্গে লাগানো তার লম্বা ঠোঁট। আর দু’পাশে দুটো ডানা, ছড়ানো। ধারণা করা হচ্ছে, কাদামাটির মধ্যে আটকে গিয়ে এই প্রাণীটির মৃত্যু হয়েছে। এবং এটি ৭২ মিলিয়ন অর্থাৎ সোয়া সাত কোটি বছরের মতো পুরনো। বলা হচ্ছে, এটি ছিল এশিয়াতে টিকে থাকা শেষ ডায়নোসরগুলোর একটি। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন-টংটিয়ানলঙ লিমুসাস। এর বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায়, ‘স্বর্গে যাওয়ার পথে মাটির ড্রাগন।’ কি অবাক হচ্ছেন এসব খবরে? দক্ষিণ চীনে ডায়নোসরের অবিশ্বাস্য রকমের এই ফসিল উদ্ধারের খবরটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার সায়েন্টিফিক রিপোর্টে। এই প্রজাতির ডায়নোসর সম্পর্কে এর আগে কিছুই জানা ছিল না। নির্মাণাধীন একটি এলাকায় ডায়নোসরের এই ফসিলটি পাওয়া গেছে। সেখানে কর্মরত শ্রমিকরাই প্রথমে এর সন্ধান পান। তারা যখন পাহাড়ি মতো একটা জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই তারা এই জীবাশ্মটি দেখতে পান। ফসিলটি অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছে। ব্রিটেনে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. স্টিফেন ব্রুসেট এই ফসিলটিও ওপর গবেষণা করছেন। তিনি বলেছেন, নির্মাণ কাজ চলছিল এমন একটি জায়গায় শ্রমিকরা এই জীবাশ্মটির খোঁজ পেয়েছেন। পাহাড়ের পাদদেশে যখন একটি হাই স্কুল নির্মাণের কাজ চলছিল তখন শ্রমিকরা সেখানে ডায়নামাইট দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাহাড় ভেঙে সমান করার সময় তারা এই ফসিলটি দেখতে পান। গবেষকরা বলছেন, ফসিলটির ছোট ছোট কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু তারপরেও পুরো জীবাশ্মটি মোটামুটি অক্ষতই রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর আকার একটি ভেড়ার সমান। পাখির মতো দেখতে যেসব ডায়নোসর ছিল এই প্রজাতি সেরকমই একটি। এর গায়ে পালক ছিল। এর বৈজ্ঞানিক নাম অভিরেপটোরোসরস। গবেষকরা বলছেন, আমাদের পৃথিবীতে গ্রহাণুপুঞ্জ আঘাত হানার আগে এই প্রজাতিটির বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিল। ডায়নোসরের এই কঙ্কালটি এতটা অক্ষত এবং পূর্ণাঙ্গ থাকার একটি কারণ হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেখে মনে হচ্ছে এটি ভেজা নরোম মাটিতে আটকা পড়ে গিয়েছিল। এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে। ‘ডায়নোসরটির জন্য এটা খুবই খারাপ একটি ঘটনা ছিল কিন্তু আমাদের জন্য এটি একটি সুখবর। কারণ কোন প্রাণী যখন এরকম মাটির নিচে আটকা পড়ে যায় তখন এটি এক ধরনের পাথরের ফসিলে পরিণত হয়,’ বলেন তিনি। ‘এই জীবাশ্মটির বিশেষ দিক হচ্ছে, এটি শেষ দিকে বেঁচে থাকা ডায়নোসরের একটি কঙ্কাল এবং এটি পাখির মতো দেখতে ডায়নোসর প্রজাতির। তখন বিবর্তনের মাধ্যমে নানা রকমের ডায়নোসরের বিকাশ ঘটছিল। তারপরই এস্টেরয়েডের আঘাতে এই পৃথিবী থেকে ডায়নোসরের বিলুপ্তি ঘটে।’ চীন ও যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা মিলে এই ফসিলটির ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা বলছেন, ডায়নোসর থেকে কীভাবে পাখির বিবর্তন ঘটছিল সে বিষয়ে এই ফসিলটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া যেতে পারে। কারণ বিজ্ঞানীদের দাবি আজকের দিনে আমরা যে পাখি দেখি সেগুলো আসলে ডায়নোসর থেকে বিবর্তিত হয়েছে। আর এই ফসিলটি থেকে বোঝা যেতে পারে আধুনিক কালের পাখিদের পূর্বপুরুষরা দেখতে ঠিক কি রকম ছিল। সূত্র : বিবিসি
×