ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীত কতদিন থাকবে- প্রশ্ন সবার

হুহু বাতাসে কাহিল উত্তরের মানুষ, বেশি কষ্টে বয়স্করা

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৯ জানুয়ারি ২০২২

হুহু বাতাসে কাহিল উত্তরের মানুষ, বেশি কষ্টে বয়স্করা

সমুদ্র হক ॥ বিশ্বে জানুয়ারির পুরোটাই শীত। গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলের বাংলাদেশে জানুয়ারির শীত আরও বেশি। দেশের উত্তরাঞ্চলের শীত মানুষের দেহে কামড়ে ধরে। নদী তীরে ও গ্রামে মনে হবে বরফের তীর কাপড় ভেদ করে শরীরে বিঁধছে। বগুড়া শহরের কংক্রিটের বনেও এমন শীত। বাতাস বইছে হুহু করে। বিকেল থেকেই ঘন কুয়াশাপাত। দৃষ্টিসীমা এক ফুটের মধ্যে। অল্প দূরত্বে রাস্তায় ভারী যানবাহনের হেড লাইটকে মনে হবে কুপির (পিদিম) বাতি। রাত নটার মধ্যে শহর ফাঁকা। রাস্তার ধারে যাদের বাড়ি গভীর রাতে কোন যানবাহন দ্রুত চলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে লাফিয়ে উঠতে হয়। মনে হবে ভূকম্পন। অথবা ভিনগ্রহের কোন কিছু নেমে এসেছে। হাঁড় কাঁপানো শীত কেমন তা টের পাওয়া যায় উত্তরবঙ্গে। শীতের নাচনে কাহিল। জানুয়ারি মাসের এই শীত কতদিন থাকবে- এমন প্রশ্ন সকলের। শীতে বয়স্কদের কষ্ট বেশি। আহা উঁহু করতে দিন সাবার। বাড়ির সদস্যদের কাছে শীতের খবর জানতে চায়। টিভিতে আবহাওয়ার খবর কী বলে তাও জানতে চায়। প্রজন্মের তরুণদের কাছে উত্তর মেলে না। তারা ব্যস্ত স্মার্টফোনের মনিটরে, ফেসবুক হোয়াটসএ্যাপ, ইউটিউব, মেসেঞ্জারে। বাড়ির গৃহিনী সন্ধ্যা রাতে রান্নাবান্না শেষে ডাইনিং টেবিলে রেখে লেপের মধ্যে। যে যখন আসে খেয়ে নিচ্ছে। পৌষের শেষের বেলায় শীতও কিছুটা বিতলামি শুরু করেছে। শুক্রবার থেকে শীত কিছুটা কমেছে। রাতের তাপমাত্রা স্থির। শনিবার দুপুর বেলা দুইটা পর্যন্ত রোদের তেজ কিছুটা বাড়ল। বেলা চারটার দিকে কুয়াশায় ঢেকে দিল শহর। শীতের বাতাসের আগমনীতে কিছুক্ষণ আগের রোদের তেজ পালাল লেজ গুটিয়ে। কাঁপন লাগার দিন থাকবে কত দিন? একজন আবহাওয়াবিদ জানালেন, জানুয়ারিতে অন্তত দুটি শৈত্যপ্রবাহ তো আসবেই। শীতের কারফিউ শনিবার কিছুটা বিরতি দিয়েছে। ফের শুরু হলো বলে। জানুয়ারির শীতল মাসে ঠকঠক করে কাঁপতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। এক সূত্র জানাল, চারটি কারণে এখনকার শৈত্যপ্রবাহের থাবা। উর্ধ আকাশের জেট বায়ু ও হিমালয়ের শীতল বায়ুপ্রবাহ দ্রুত ধেয়ে আসছে উত্তরবঙ্গে। ঘন কুয়াশা আর শিশিরপাত। কম জলীয়বাষ্প। দিনের পরিধি ছোট। রাতের পরিধি বড়। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের দিল্লী ও উত্তর প্রদেশ, আসাম, মেঘালয় ত্রিপুরাসহ আশপাশের রাজ্যে শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা অনেক বেশি। এর সঙ্গে হিমালয় পাদদেশের প্রবাহিত বায়ু ভারতের ওই সব রাজ্য হয়ে বাংলাদেশে সরাসরি প্রবেশ করে অধিক গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। শহরাঞ্চলের বহুতল ভবনের অট্টালিকার নিচে যারা থাকেন, তাদের চেয়ে ওপরের বাসিন্দাদের শীত বেশি। তার চেয়ে অনেক বেশি শীত মাঠপর্যায়ে। শীত যাই হোক, দেশের মানুষের শীতের কাপড়ের অভাব নেই। প্রতিটি শহরের হকার্স মার্কেট ভরে গেছে শীতের কাপড়ে। পথের ধারে বাক্সের মতো দোকানে পসরা সাজিয়ে বসেছে শীতের কাপড়ের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছে কত বাহারি কাপড়। বগুড়া শহরের গোহাইল রোডের মাথায় দোকানীদের হাঁকডাক। কখনও জোড়া ৫০, কখনও জোড়া এক শ’। কখনও বলছে এই নেন দেড় শ’। লোকজন ডাল ঘাঁটার মতো করে কাপড় ঘাঁটছে। পশমি ও মোটা ভালো কাপড় মিলছে। মাথার পশমি টুপি, গলার পশমি ব্যান্ড, কান ঢেকে রাখার ব্যান্ড, হাত মোজা, পায়ের মোজা, মর্নিং ওয়াকের ট্রাউজার, শীত তাড়াবার কত উপায়। নাক, কান, মুখ ঢেকে শরীর শীতের পোশাকে আবৃত করলে মনে হবে বরফ দেশের এসকিমো। এর মধ্যে কোভিড-১৯ এর ওমিক্রনের থাবার ভয় তো আছেই। চলনবিলাঞ্চলে হাড় কাঁপানো শীত ॥ পাবনা সংবাদদাতা জানান, চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে পৌষের হাড় কাঁপানো শীত আর হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত মানুষ। ইতোমধ্যে বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শৈত্যপ্রবাহের কারণে কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে ঠা-া বেড়েছে। ভোরের গাঢ় কুয়াশায় প্রকৃতিতে সূর্যের দেখা মিলছে না সহজে। গাড়ি চালাতে হচ্ছে হেড লাইড জ্বালিয়ে। চলনবিল অঞ্চলে রোদের প্রখরতা কমতে শুরু করেছে। বেড়েছে সকাল-সন্ধ্যায় ঘন কুয়াশা। বেলা গড়িয়ে দেখা মিলছে সূর্যের। খেটে খাওয়া বিপর্যস্ত মানুষ কোনমতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। পৌষের মাঝামাঝিতে জেঁকে বসেছে শীত। সন্ধ্যার পর শীতের প্রকোপ বাড়ার কারণে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট। কুয়াশায় ভিজে যাচ্ছে মাঠ-ঘাট। তীব্র ঠা-ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। শীতের তীব্রতায় ফুটপাথের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্র কিনতে শীতার্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। এদিকে পাড়া-মহল্লায় দেখা মিলছে শীতবস্ত্র বিক্রির ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের। ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময় বলে মনে করেন হতদরিদ্ররা। বিশেষ করে শীতে মুশকিলে পড়েছে চলনবিল অঞ্চলের অসহায় পরিবারের শিশু ও বয়স্করা। এ শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে হতদরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে চাটমোহর উপজেলায় সরকারীভাবে একটি পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৬৪০ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
×