ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুলের সুরধারায় স্নিগ্ধ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

প্রকাশিত: ০০:৩৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

নজরুলের সুরধারায় স্নিগ্ধ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

মনোয়ার হোসেন ॥ যাপিত জীবনের পরতে পরতে মিশে আছেন তিনি। দ্রোহের আলিঙ্গনে হয়ে আছেন প্রেরণার উৎস। আপন সৃষ্টির বিভায় মিশে আছেন সংগ্রামের খরস্রোতা অধ্যায়ে। উল্টোপিটে প্রেম-ভালবাসার প্রকাশেও তিনি নিত্যসঙ্গী। নিত্যদিনের পথচলার সেই সঙ্গী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁরই সৃজনের আলোয় রং ছড়াল বাঙালীর বীরত্বগাথার ইতিহাস আশ্রিত আয়োজন। নজরুলের মোহময় সুরের স্রোতধারায় উদ্যাপিত হলো বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। ¯িœগ্ধতার প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিলে ‘বিজয়ের ৫০ বছর : লাল-সবুজের মহোৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এফবিসিসিআই আয়োজিত হাতিরঝিলের এ্যামফিথিয়েটারে চলমান এ অনুষ্ঠানের চতুর্থ দিন ছিল শনিবার। এদিন নজরুলের সুরেলা শব্দ ধ্বনিতে সজ্জিত ছিল গোটা আয়োজন। প্রখ্যাত থেকে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা শুনিয়েছেন নজরুলসঙ্গীত। বৈরী আবহাওয়ার ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝেও সেই সুরসুধায় স্নাত এই শহরের অন্তঃপ্রাণ সুররসিকরা। ফাতেমাতুজ জোহরার সুললিত কণ্ঠের আশ্রয়ে পরিবেশনা পর্বের সূচনা হয়। শ্রোতার অন্তরে স্নিগ্ধতার বীজ বুনে এই শিল্পী গেয়ে শোনান- আমি পুরব দেশের পুরনারী/গাগরি ভরিয়া এনেছি গো অমৃত-বারি...। পরে পরিবেশনায় শুনিয়েছেন- দূর দ্বীপবাসিনী, দূর দ্বীপবাসিনী/চিনি তোমারে চিনি দারুচিনিরও দেশে...। নজরুলের গজলকে সঙ্গী করে মঞ্চে আসেন সুজিত মোস্তফা। গেয়ে শোনান- মদির আঁখির সুধায় সাকি ডুবাও আমার এ তনু মন...। পরে গানে প্রকাশ করেন প্রেয়সীর প্রতি অনুরাগ। চর্চিত কণ্ঠের মাধুর্য ছড়িয়ে পরিবেশন করেন- মোর প্রিয়া হবে এসো রানী/দেবো খোপায় তারার ফুল...। সেই সুরের আবেশে মুগ্ধতার প্রতিফলনে ঝরেছে শ্রোতার করতালি। নতুন প্রজন্মের শিল্পী হৈমন্তী শুনিয়েছেন- অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে...। এরপর মঞ্চে আসে শামীম ও প্রিয় নামের এই প্রজন্মের আরও দুই শিল্পী। তারা ‘উচাটন মন’, ‘ব্রজ গোপী’সহ কয়েকটি নজরুলসঙ্গীত। পুতুলের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর’। পুলক শুনিয়েছেন ‘হারানো হিয়া’ ও ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’। লুইপার পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’ ও ‘পরদেশী মেঘ’। এদিনের অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ব্যান্ডদল মাইলসের পরিবেশনা। জনপ্রিয় সব গানের আশ্রয়ে দলটি মাতিয়ে রাখে শ্রোতাদের। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু এই দেশকে স্বাধীন না করলে বাঙালী কখনও এই দেশ শাসন করতে পারত না। বাঙালী ছিল শোষিত জাতি। সেই শোষিত জাতি আজ অবতীর্ণ হয়েছে শাসকের ভূমিকায়। তাই সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সময়ের অচেনা বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, সাহিত্য-সঙ্গীতের মাধ্যমে একটি জাতিকে জাগিয়ে তোলা এক কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি আমাদের চলার পথ দেখিয়েছেন। কে এম খালিদ বলেন, আমাদের যাপিত জীবনের সঙ্গে মিশে আছেন কাজী নজরুল ইসলাম। নানা সঙ্কটে-দুর্যোগে এই কবির সৃষ্টি আমাদের উদ্দীপনা জোগায়।
×