ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের নির্দেশ

৭ পুলিশ সাসপেন্ড ॥ ৪ শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

প্রকাশিত: ২২:০৭, ১৪ জুন ২০২১

৭ পুলিশ সাসপেন্ড ॥ ৪ শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার ওই সময়ের ওসি মোঃ আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও জেলে প্রেরণের ঘটনায় হাইকোর্ট ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রবিবার বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে শিশুদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোঃ আব্দুল হালিম ও এ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মোঃ রাসেল চৌধুরী ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সরোয়ার পায়েল। আদেশের বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সরোয়ার পায়েল ও রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোঃ আব্দুল হালিম। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ও দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওই চার শিশুকে প্রিজনভ্যানে তোলার অপরাধে আরও চার পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত মামলার রুল যথাযথ ঘোষণা করে রবিবার এ রায় দেয়। আদালতের এই আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম। রায়ে চার শিশুকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি মামলার বিচারিক এখতিয়ার প্রত্যাহার করে নিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সুপ্রীমকোর্টের জিএ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে তাকে দেওয়ানি মামলা পরিচালনার এখতিয়ার প্রদান করতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছে, শিশু আইনে পুলিশ কর্মকর্তা ও বিচারকদের শিশুর অধিকার রক্ষায় দায়িত্ব পালনের জন্য যে নির্দেশনা রয়েছে তারা তা পালন করেননি। যদি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। তাই জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও তিন পুলিশ সদস্যের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে এই নির্দেশনা দেয়া হলো। রায়ে হাইকোর্ট শিশুদের গ্রেফতার ও তাদের আটকাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাকে বেআইনী ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। রায়ে হাইকোর্ট দেশের সকল থানায় শিশুবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ, শিশু ডেস্ক স্থাপন এবং শিশুদের অধিকার রক্ষায় যে ধরনের নির্দেশনা রয়েছে তা সকল থানায় টাঙানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও জেলে প্রেরণের ঘটনায় হাইকোর্ট ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- ১. চার শিশুকে গ্রেফতার ও থানা হেফাজতে আটক রাখাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২. চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা বাতিল ঘোষণা করেছে আদালত। ৩. বাকেরগঞ্জ থানার ওই সময়ের ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা। ৪. সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা। ৫. চার শিশুকে আটক করে প্রিজনভ্যানে করে আনা চার পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে। ৬. চার শিশুকে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে। ৭. শিশু আইন অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য গাইডলাইন আকারে প্রকাশ করে প্রত্যেকটা থানায় সার্কুলেট করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ১১ অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের মামলা স্থগিত করে হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুল জারি করে আদালত। এছাড়া গত বছরের ৮ অক্টোবর রাতে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ৪ শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে রাতেই শিশুদের এসি মাইক্রোবাসে করে তাদের নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পাশাপাশি চার শিশুকে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহকে তলব করে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে চার শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। রাত ৯টায় বিচারপতি বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীম ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বসিয়ে এই আদেশ দেন। এদিকে হাইকোর্টের এই আদেশ অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের বিচারক চার শিশুকে জামিন দেন। ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত বছরের ৬ অক্টোবর মামলা করা হয়। এ মামলায় ওইদিনই চার শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৭ অক্টোবর তাদের বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ এক আদেশে ওই চার শিশুকে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাদের যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ নিয়ে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। এই সংবাদ বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আসে। এরপর রাতেই বিচারপতিদ্বয় নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়াল আদালত বসান। রুহুল কুদ্দুস দুলু দম্পতির আবেদন খারিজ ॥ নাটোরের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা স্থগিত চেয়ে করা আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ (নট প্রেস রিজেক্ট) করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই মামলা বিচারিক (নিম্ন) আদালতকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য বলেছে। বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন মোঃ খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি। পিটিশনার পক্ষে ছিলেন মোঃ ইউসুফ আলী।
×