ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ নাসিমের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৩ জুন ২০২১

মোহাম্মদ নাসিমের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বর্ষীয়ান রাজনীতিক, পরিচ্ছন্ন রাজনীতির শুদ্ধ জননেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সাবেক সমন্বয়ক-মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর স্ট্রোকে মোহাম্মদ নাসিমের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছিল, সেই সঙ্কট আর কাটেনি। দীর্ঘ ১০ দিন ধরে হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২০২০ সালের এই দিনে অনন্তলোকের বাসিন্দা হন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক। আমৃত্যু নীতি-আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপোসহীন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মোহাম্মদ নাসিম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও মা মোসাম্মাৎ আমেনা মনসুরের ঘরে জš§গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এম মনসুর আলী স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। এম মনসুর আলী ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার কারণে কারাগারে প্রাণ দিতে হয় ঘাতকের বুলেটে। আর তার সন্তান মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উচ্চ পদে থেকে দেশের যেকোন সঙ্কটে সামনে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজপথের নেতাকর্মীদের আস্থার ঠিকানা ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। পিতার মতো তিনিও ছিলেন সাহসী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল, ত্যাগী ও রাজপথের একজন সাহসী যোদ্ধা। প্রয়াত জননেতা মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১টি বছর সামরিক ও খালেদা জিয়াবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সাহসী যোদ্ধা ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। এ কারণে রাজপথে তাকে বারবার নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কারাগারেও যেতে হয় বারংবার। ছাত্ররাজনীতি ছাড়ার পরে যুবলীগের রাজনীতি করলেও ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নাসিম। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। তখন সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সারাদেশে সংগঠনকে গড়ে তোলার দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ১৯৯১ সালের সংসদে বিরোধী দলের প্রধান হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময়ে মোহাম্মদ নাসিমকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছরের মার্চে তাকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৯ সালে মন্ত্রিসভায় রদবদলে মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ওয়ান-ইলেভেনের সামরিক সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমেই রাজপথের সাহসী যোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিমকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালায়। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই প্রথম দফায় স্ট্রোক করেন এবং বাম সাইড অবশ হয়ে যায় তার। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার আইনী জটিলতার কারণে নির্বাচন করতে পারেননি মোহাম্মদ নাসিম। তার আসনে বিজয়ী হন তার বড় ছেলে বর্তমানে তার আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে মোহাম্মদ নাসিমকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাÐে জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ছাড়াও মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচনী জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র হিসেবে আমৃত্যু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বড় ছেলে সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় তার পিতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন। মোহাম্মদ নাসিমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রবিবার ঢাকাসহ তার নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে প্রয়াত জননেতা মোহাম্মদ নাসিমের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সিরাজগঞ্জ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, মোহাম্মদ নাসিমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এবং তার নির্বাচনী এলাকা কাজীপুরে দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ বিকেল চারটায় শহীদ এম মনসুর আলী অডিটরিয়ামে দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা এবং কাজীপুরে সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ মাঠে দোয়া মাহফিল, স্মরণসভা ও কাঙালীভোজের আয়োজন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনসহ জেলার নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
×