ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী মোস্তফার সমাধিস্থল সংরক্ষণ দাবি

প্রকাশিত: ২০:২৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী মোস্তফার সমাধিস্থল সংরক্ষণ দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৮ ডিসেম্বর ॥ স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছরেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়নি ঠাকুরগাঁওয়ের একমাত্র শহীদ বুদ্ধিজীবী গোলাম মোস্তফার সমাধিস্থল। সেটি উপেক্ষিত পরিবারের দাবি। স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তিনি যে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন সে কলেজের শিক্ষার্থীরাও জানেন না তার মহান কীর্তিগাথা। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্মৃতিবিজড়িত কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন ব্যর্থতার কথা জানিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন। ৭১’র ১৭ এপ্রিল দুপুরে পাক হানাদাররা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের পূর্ব চৌরাস্তার পাশ থেকে আটক করে অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাকে। পীরগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সে সময় স্বাধীনতার লক্ষ্যে নিজ এলাকায় মুক্তি সংগ্রাম কমিটি গঠন করে তার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ওই দিন বিকেলেই পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়ক সংলগ্ন লোহাগাড়ার ভাতারমারি ফার্ম নামক স্থানে গোলাম মোস্তফা, তৎকালীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ সুজাউদ্দিন আহমেদ, থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল জব্বার, হোটেল ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর হোসেন, কৃষক আতিয়ার রহমান ও দুই কাঠমিস্ত্রিসহ ৭ জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে যায় বর্বর পাক বাহিনী। পরে পীরগঞ্জ পৌর শহরের রঘুনাথপুরে রেলক্রসিংয়ের পূর্বে সমাহিত করা হয় অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাকে। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে অধ্যাপক গোলম মোস্তফার নামে স্মারক ডাকটিকেট বের করে। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার এত কীর্তি সত্ত্বেও আজও অবহেলায় পড়ে আছে তার সমাধিটি। অন্যদিকে নিজ কলেজে তার স্মৃতি সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় নতুন প্রজন্মের সদস্যরা জানতে পারছে না এই মহান শহীদের জীবন ও কীর্তি সম্পর্কে। পীরগঞ্জ সরকারী কলেজের প্রায় দশজন শিক্ষার্থীকে অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাকে চিনেন অথবা জানেন কি না প্রশ্ন করা হলে তাদের একজনও বলতে পারেননি তার সম্পর্কে জানেন এবং কোথাকার বাসিন্দা। দেশের জন্য আত্মত্যাগী মানুষের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে জানানোর আশাবাদ ব্যক্ত করলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোলাম মোস্তফার সহধর্মিণী আনোয়ারা মোস্তফা। তিনি জানান, স্বামী হারিয়েছি, অনেক কষ্ট করে ছেলেদের মানুষ করেছি। কিন্তু তাদের জন্য সরকারী কোন সহায়তা পাইনি। এতে কোন দুঃখ নেই। তবে সমাধিস্থল সংরক্ষণসহ সন্তানদের শহীদ সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আশা করেন তিনি। অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, তারা সারা জীবন বঞ্চিতই থেকে গেছেন। শহীদ সন্তান হিসেবে কোথাও কোন সহায়তা পাননি তারা। তাই শহীদ সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান তিনি। পীরগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মোঃ কামরুল হাসান জানান, শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে কলেজের পক্ষথেকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে শহীদ গোলাম মোস্তফাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, গ্রন্থাগার, ভবন, কর্নারসহ কিছু প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী অ্যাপক গোলাম মোস্তফার মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা সম্পর্কে শুনেছেন।
×