ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লেবানন থেকে ৪০ হাজার কর্মীকে ফিরিয়ে আনা হবে

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

লেবানন থেকে ৪০ হাজার কর্মীকে ফিরিয়ে আনা হবে

ফিরোজ মান্না ॥ লেবানন থেকে ৪০ হাজার কর্মী দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ বিমানে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্য এয়ারলাইন্সেও তাদের দেশে আনা হতে পারে। গত কয়েক মাস থেকে এই কর্মীরা দেশে ফেরার জন্য লেবাননে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আসছেন। বৈরুত বিস্ফোরণের পর দেশটিতে চরম খাদ্য সঙ্কট চলছে। হাজার হাজার কর্মী খেয়ে না খেয়ে দেশটিতে অবস্থান করছেন। এখন তারা দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতে সরকার তাদের দেশে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মনিরুছ সালেহীন। বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্যমতে, লেবাননে বর্তমানে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশী কাজ করছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছে নারী কর্মী। এই কর্মীরা দেশটির বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে ছিলেন। পুরোপুরি খাদ্য শস্য আমদানিনির্ভর। বৈরুত বিস্ফোরণের কারণে দেশটির খাদ্য গুদামগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে দেশটিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। এ কারণে দেশটি থেকে ৪০ হাজার কর্মী দেশে ফেরার জন্য দূতাবাসে আবেদন করেছেন। তবে বৈধ কর্মীরা দেশে ফিরতে চাচ্ছেন না। কারণ অনেক টাকা খরচ করে তারা লেবাননে গেছেন। তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মনিরুছ সালেহীনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বেশ কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, সিভিল এভিয়েশন, বিমান, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ আরও কয়েকটি দফতরের প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। মঙ্গলবারও আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিমানসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে লেবানন থেকে কর্মীদের দেশে ফেরত আনা হবে। তবে বিমান যেহেতু আমাদের জাতীয় ক্যারিয়ার। বিমানের মাধ্যমেই আমরা দেশটি থেকে কর্মী আনতে বেশি আগ্রহী। কারণ বিমানের মাধ্যমে তাদের আনা হলে দেশের টাকা দেশে থেকে যাবে। অন্য এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে কর্মীদের দেশে ফেরত আনতে গেলে দেশের টাকা চলে যাবে। বৈঠকে বিমানের বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে লেবাননে কোন ফ্লাইট চালু নেই। ফ্লাইট না থাকায় কর্মীদের ফেরত আনার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে সিভিল এভিয়েশন লেবাননে ফ্লাইট করার বিষয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, বিষয়টি লেবানন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করবে। অন্যদিকে কাতার এয়ারওয়েজ ফ্লাইট পরিচালনা করার একটি সিদ্ধান্তের কথা শোনা গেছে। এদিকে লেবাননে সক্রিয় প্রবাসী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, কাগজপত্রহীন কর্মীরা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। তাদের কোন দায়িত্ব নিচ্ছে না দূতাবাস। একদিকে চরম খাদ্য সঙ্কট অন্যদিকে দেশে না ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বৈরুত বিস্ফোরণের আগে থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এবং সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে লেবাননের জীবনযাত্রা। লেবাননের জনগণের সরকার বিরোধী আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার দেশটির সরকার পদত্যাগ করেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে যেসব দেশের কর্মীরা রয়েছেন তারা সকলেই চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আর্থিক মন্দায় দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে একের পর এক কাজ হারাতে থাকেন বাংলাদেশী কর্মীরা। বিশেষ করে যারা অবৈধ রয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তখন থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানান দূতাবাসের কাছে। বৈরুতে বিস্ফোরণের পর এখন আর এক মুহূর্তও তারা দেশটিতে থাকতে চান না। শতভাগ আমদানি নির্ভর দেশটিতে এখন চরম খাদ্য সঙ্কট চলছে। এ অবস্থায় ওই দেশের মানুষই খাদ্যের অভাবে দিন কাটাচ্ছেন। বিদেশী কর্মীদের দেখার মতো কোন কর্তৃপক্ষ নেই। যেসব কোম্পানিতে কর্মীরা কাজ করতেন সেসব কোম্পানি বন্ধ করে দিয়ে মালিক চলে গেছেন। কর্মীদের এক থেকে দেড় বছরের বেতন বকেয়া পড়েছে। এই বেতনও মালিক পরিশোধ করতে পারেননি।
×