ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা সরাসরি কারও সঙ্গে সংঘাতে যাব না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

আমরা সরাসরি কারও সঙ্গে সংঘাতে যাব না ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভাস্কর্য ইস্যুতে দলের নেতাকর্মীদের সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা সরকারে আছি, আমাদের সব ব্যাপারে মাথা গরম করলে চলবে না। বিষয়টা হ্যান্ডেল করছেন প্রধানমন্ত্রী। যেভাবে তিনি করোনা মোকাবেলা করেছেন এবং সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিকূল অনেক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী এখানে এসেছেন। কাজেই তিনি জানেন কোন পরিস্থিতি কোনভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা সরাসরি কারও সঙ্গে কোন সংঘাতে যাব না। শনিবার গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় অবিসংবাদিত এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে হাইকোর্ট সংলগ্ন মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাজারে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত কর্মসূচীতে অংশ নেয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দী পাকিস্তানী ও ঔপনিবেশিক আমলে গণতন্ত্রের জন্যই বারবার লড়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। দেশ ত্যাগ পর্যন্ত করেছেন এবং তিনি বারে বারে বলতেন, গণতন্ত্রই আমার জীবনের মূলমন্ত্র। শাসনতন্ত্রের প্রশ্নে জনগণের রায়েই শেষ কথা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের এ গণতন্ত্র অনেক চরাই-উৎড়াই অতিক্রম করে আজকে আমরা এ অবস্থায় এসেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ৭৫’র পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ২১ বছর গণতন্ত্র শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার ছয় বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশে ফিরে আসেন। প্রথম ফিরে এসেই তার কাজ ছিল গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করা এবং শৃঙ্খল মুক্তির জন্যই গণতন্ত্রের জন্য তিনি লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন এবং সে গণতন্ত্র আজকে শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ এখনও পায়নি। আজকে আমাদের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রয়াণ দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র দেশে আছে, গণতন্ত্র একটা বিকাশমান ধারা। রাতারাতি গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় না। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং এ দেশে একটি মহল আছে যারা মুখে গণতন্ত্র বললেও তারা তাদের আচরণে, কর্মকাণ্ডে কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আছে। এরা গণতন্ত্রের শত্রু। গণতন্ত্রের শত্রুরা গণতন্ত্রের বিকাশ চায় না। গণতন্ত্র একটা বিকাশমান প্রক্রিয়া, গণতন্ত্রেও ভুলত্রুটি আছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে আমেরিকার মতো দেশে যে গণতন্ত্রের ছবি আমরা নির্বাচনে দেখলাম, তাতে করে এটা আজ আমাদের নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমরা যেখানে এসেছি, সেখানে আমাদের আজ ভাবতে হবে। আমাদের আজ গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চাও করতে হবে। আমি মনে করি বাংলাদেশে যেসব বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা কেউ করে না। যাদের নিজেদের ঘরে গণতন্ত্র নেই তারা বাইরের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে এটা আশা করা যায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর বিরোধিতা ও হুমকির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ নিয়ে আমরা কোন সংঘাতে যাব না। আমরা শুধু যুক্তিতর্ক দিয়ে বলব, মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়। পৃথিবীর দেশে দেশে আজকে যারা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা কি জানে না যে, সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোসহ সারাবিশ্বে এ ভাস্কর্য আছে? সেখানে ভাস্কর্য যদি ইসলাম বিরোধী না হয় বাংলাদেশে কেন হবে ? এটা অযৌক্তিক। তার আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার অন্য নেতারা। আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সকাল ৯টায় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
×