ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হবে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৫ নভেম্বর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হবে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হবে। শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক দেশের সরকারই তাদের স্বার্থ আগে দেখে। দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারও সেটি করবে। ফলে তাদের নিজেদের গরজে এবং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং তারা নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অত্যন্ত পরিপক্ব রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে এর আগেও আমরা কাজ করেছি। তিনি আমেরিকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে তার সঙ্গে আমাদের অনেক কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে বলেই আমরা মনে করছি। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার মানবাধিকার ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় মানবাধিকারকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এছাড়াও বাইডেন সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তারা জলবায়ু নিয়ে কাজ করবেন। আমরা আশা করছি, বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্বে কোন ধরনের যুদ্ধ বা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের কার্যক্রমে বাইডেন সরকার বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। মিয়ানমার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের নতুন সরকার নিয়ে আমরা আশাবাদী। সুচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের নতুন সরকার রোহিঙ্গা নিয়ে বদনাম ঘোচাতে তাদের লোক বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেবে। একই সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এই বিষয়ে সহযোগিতা করবে। সুচি আবার দায়িত্ব নেয়ায় তার সঙ্গে আমরা আবার আলোচনা করতে পারব। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার সফরসঙ্গী ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে মন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। অর্থনৈতিক কূটনীতির সফলতায় বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশের স্বীকৃতি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে অর্থনৈতিক কূটনীতির সুফল অর্জন করা। বিগত ১১ বছর ধরে আমাদের দেশ গড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অর্থনৈতিক কূটনীতির সফলতার কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব’ এই পররাষ্ট্রনীতিতে পথ চলছে বাংলাদেশ। সকলের সঙ্গে বৈরিতা পরিহার করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আমাদের লক্ষ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে অর্থনৈতিক কূটনীতির সুফল অর্জন করা। শনিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ নাটোরের উত্তরা গণভবন ও রাণী ভবানী রাজবাড়ি পরিদর্শন শেষে সার্কিট হাউসে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন স্থবির সময়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ লাখ পিপি পাঠানো হয়েছে। অর্থনৈতিক কূটনীতির সুফল পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঁচটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে দেশের মানব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং দক্ষ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশ্বের নতুন নতুন দেশে কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, দেশের অপার সম্ভাবনাময় মানব সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের সহজলভ্যতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা, দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অসামান্য অবদানকে সম্মান দিতে বিদেশে আমাদের মিশনগুলোতে পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ প্রযুক্তিনির্ভর সেবার পরিধি দ্রুত ও সহজ করা হচ্ছে। মুজিববর্ষ-২০২০ এবং স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী-২০২১ কেন্দ্র করে বিশ্বের কাছে অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে তুলে ধরা। নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল ও নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে দেশ দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সর্বাধিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনেও আমরা অগ্রগামী। ইতোমধ্যে গত ১১ বছরে দেশের দারিদ্র্যসীমা অর্ধেক হ্রাস পেয়ে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও পাঁচ শতাংশ হ্রাস পাবে। পর্যায়ক্রমে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ উন্নয়নের পথপরিক্রমায় ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর চির কাক্সিক্ষত সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত হবে। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অতিরিক্ত সচিব মোঃ শামসুল হক, মোঃ সাব্বির আহমদ চৌধুরী ও সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এফ এম বোরহান উদ্দিন, খন্দকার মোঃ তালহা, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ তারিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ ও মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন।
×