ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে সাক্ষ্য প্রদানের আহ্বান

গৃহবধূ ধর্ষণের দায় স্বীকার করে নিল সব আসামি

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ৫ অক্টোবর ২০২০

গৃহবধূ ধর্ষণের দায় স্বীকার করে নিল সব আসামি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেটের আলোচিত গণধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারকৃত ৮ আসামির সবাই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। সর্বশেষ রবিবার মামলার এজাহার নামীয় আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক ও মাহফুজুর রহমান আদালতে এ মর্মে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি প্রদান করে। পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে রবিবার বেলা ২টার দিকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে তারেকুল ইসলাম তারেককে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে এবং মাহফুজুর রহমানকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালত সাইফুর রহমানের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরাণ (র.) থানার পুলিশ পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য। তিন ঘণ্টাব্যাপী আসামিদ্বয়ের স্বীকারোক্তি শেষে ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য জানান, দুই আসামির জবানবন্দী পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দীতে তারা ধর্ষণকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বেচ্ছায় স্বীকার করেন। এর আগে চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গত শুক্রবার ও শনিবার ৬ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। শুক্রবার আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলাম এবং আজ শনিবার রনি, রাজন ও আইনুল আদালতে জবানবন্দী প্রদান করে। আসামিরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সাক্ষ্য প্রদানের আহ্বান ॥ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ বজলুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নোটিস আদালত প্রাঙ্গণে টানানো হয়। নোটিসে উল্লেখ করা হয়- ‘মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও মাননীয় বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীম মহোদয়গণের বেঞ্চ গত ২৯ সেপ্টেম্বর একটি সুয়োমোটো রুল ইস্যু করে ঐতিহ্যবাহী সিলেট এমসি কলেজে বিগত ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনা অনুসন্ধানের নিমিত্ত একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন।’ ‘উক্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা যারা ঘটনা সম্পর্কে অবহিত তারা উক্ত কমিটির নিকট ৪ অক্টোবর রবিবার থেকে ৭ অক্টোবর বুধবার পর্যন্ত অফিস চলাকালীন জবানবন্দী প্রদান করতে পারবেন।’ ‘কমিটির অফিসের ঠিকানা- কনফারেন্স রুম, জেলা ও দায়রা জজ আদালত (২য় তলা)’। এর আগে গত ১ অক্টোবর দুপুরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির ৪ সদস্যরা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ছাত্রাবাসের নবনির্মিত ভবনসহ বিভিন্ন হল পরিদর্শন করেন তারা। কমিটির সদস্য ধর্ষণ ঘটনার বিভিন্ন তথ্য- উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ বজলুর রহমান। অন্য সদস্যরা হলেন- মহানগর মুখ্য হাকিম মোঃ আবুল কাশেম, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেছা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন সুলতানা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার দায় নিরূপণে কমিটি গঠন করে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই কমিটিকে পনেরো দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে উচ্চ আদালত। মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশনের মানববন্ধন ॥ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ধর্ষকরা দেশ ও জাতির শত্রু। ধর্ষকদের প্রতিহত করা দরকার। ধর্ষকরা সিলেটের পবিত্র মাটিকে কলুষিত করছে। সিলেটের পবিত্র মাটিতে ধর্ষকদের ঠাঁই দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আগামী ৯ অক্টোবর সিলেটের সকল পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি বৈঠক হবে। সেই বৈঠক থেকে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে। ধর্ষকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আমরা সবাই মিলে সুন্দর সিলেট শহর গড়ব। রবিবার বিকেল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশন সিলেট মহানগর কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ধর্ষণ একটি ব্যাধি। এই ব্যাধি নির্মূল করতে হবে। দেশ ও সমাজকে বাঁচাতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ গঠন করা দরকার।
×