ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানের সঙ্গে প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১৮ আগস্ট ২০২০

ভুটানের সঙ্গে প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ সার্কভুক্ত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে। চুক্তিটির ভেটিং (যাচাই-বাছাই) সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাদের মতামতের বিষয়টি বিশ্লেষণ করছে। চলতি আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ অথবা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তায় চুক্তিটি সম্পন্ন করার সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি হবে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি ও মাইলফলক ঘটনা বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে কোন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করা হয়নি। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে এই চুক্তি সম্পন্ন করা হবে। ভার্চুয়াল এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের চুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। জানা গেছে, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (প্রিফিন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট-পিটিএ) করার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় গত ২০০০ সালের প্রথম দিকে। কয়েক বছর আগে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-এফটিএ) করার বিষয়ে আলোচনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত শুল্ক সংক্রান্ত নানা জটিলতার কারণে সেটি আর হয়নি। এ অবস্থায় ভুটানের সঙ্গে পিটিএ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই চুক্তির মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি বড় অভিজ্ঞতার বিষয়। ভুটানের সঙ্গে করা পিটিএ অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভুটানের সঙ্গে সম্ভাব্য পিটিএ চুক্তিটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হতে যাচ্ছে। এর আগে কোন দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করা যায়নি। তিনি বলেন, চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়ে গেছে। এখন আমরা এনবিআরের মতামতের জন্য অপেক্ষা করছি। মতামত পাওয়া গেলেই চুক্তি করা হবে। জানা গেছে, এই পিটিএ’র ফলে বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে এবং ভুটানের ৩৪টি পণ্য এ দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। তবে পর্যায়ক্রমে আলোচনার মাধ্যমে পণ্য সংখ্যা বাড়াতে পারবে দুই দেশ। বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, রফতানি বৃদ্ধি এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে চীন, ভারত, ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১৫টি দেশের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে মতামত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাওয়া হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ মতামত জানিয়ে দিয়েছে। এতে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় ও বহুজাতিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মতামতে জানানো হয়েছে। জানা গেছে, রফতানি খাত সম্প্রসারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এ ধরনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কাজটি করে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফরেন অফিস কনসালটেশন মিটিংয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশী পণ্যে বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করে বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয়। পাশাপাশি এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে মতামত চেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয় অর্থনীতিতে রফতানির গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের রফতানিতে নতুন নতুন পণ্য সংযোজনের পাশাপাশি বাজার সম্প্রসারণের সঙ্গে প্রধান অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে এর সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এদিকে, ভুটানের সঙ্গে পিটিএ হলে বাংলাদেশ পাট ও পাট জাতীয় পণ্য, চামড়া পণ্য ও জুতা, ফ্যান, ড্রাই সেল ব্যাটারি, ঘড়ি, আলু, কনডেন্সড মিল্ক, সিমেন্ট, টুথব্রাশসহ অন্যান্য পণ্য রফতানি বাড়বে। অন্যদিকে ভুটানের কমলা, আপেল, আদা, ফলের জুস, পাথর, কাঠ, চুনাপাথরসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি হবে বাংলাদেশে। ভুটানের পাথর বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রফতানি সম্প্রসারণে এফটিএ ও পিটিএ চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। ফলে এখন এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ যে শূন্য শুল্ক সুবিধা পায় বিভিন্ন দেশের কাছে, সেই সুবিধা অব্যাহত রাখতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। আর এ ধরনের চুক্তির জন্য এখনই প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
×