ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘জনপ্রতিনিধিরাই করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন’

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ২৯ জুন ২০২০

‘জনপ্রতিনিধিরাই করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সঙ্কটের শুরু থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনপ্রতিধিরাই গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। অসহায় মানুষের মাঝে দিন-রাত পরিশ্রম করে খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদেরকে তাঁদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আরও সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নতি করা অসম্ভব কিছু নয়। করোনাকালীন সঙ্কট নিয়ে শনিবার রাতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনলাইন আলোচনা বিশেষ ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ এর সপ্তম পর্বে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। এবারের পর্বের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার’। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা সঙ্কটে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি, স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদ্বুদ্ধ করা, জলাবদ্ধতা নিরসন, জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নকল স্বাস্থ্য উপকরণ বন্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়। অনলাইন আলোচনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সামাজিক পরিবর্তনের জন্য এবং মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে সেটা হলো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা। যদি জনপ্রতিনিধিদেরকে তাদের স্বীয় দায়িত্বটি পালনের জন্য আমরা সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারি তাহলে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি করা অসম্ভব কিছু না। তিনি আরও বলেন, যখন করোনা বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করে তুলল তখন এই জনপ্রতিনিধিরাই গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। অসহায় মানুষের মাঝে দিন-রাত খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই আমরা ত্রাণ বিতরণ করেছি, জনসচেতনতার জন্য রেকর্ডিং মাইকিং চালু করেছি। আমাদের মহানগর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগেই সেখানে ভেন্টিলেটরসহ ৫ বেডের আইসিইউ স্থাপন করেছি। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রকোপ কমাতে এবং মশকের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে নিধন করার জন্য সকল জলাবদ্ধ লেক ও জলাশয়কে পরিষ্কার করছি। একই সঙ্গে তেলাপিয়া মাছ এবং হাঁস চাষ শুরু করেছি, যাতে ডেঙ্গুর লার্ভা বংশবিস্তার না করতে পারে। উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনসচেতনতা শুরু করি। মানুষের বাসা- বাড়ি-অফিসে অভিযান চালিয়েছি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর শহরের নানা জায়গায়, রাস্তাতে জীবাণুনাশক ছিটাতে শুরু করি। বাস ও বাস টার্মিনালগুলো জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে সর্বদা চেষ্টা করব। একই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন হতে হবে। তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশন পরিচ্ছন্নতা কর্মী যারা আছেন তাদের সুরক্ষার জন্য ৫ হাজার পিপিই দিয়েছি এবং প্রায় ৩ হাজার কর্মীর জন্য হেলথ ও লাইফ ইন্স্যুরেন্স চালু করার ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, করোনার শুরুতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। ক্রমান্বয়ে স্বেচ্ছাসেবীসহ কর্মকর্তারা প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক কাজ করা হয়। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পরে শহরে ইতোমধ্যে বেসরকারীভাবে একটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে, যা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, সামনে কোরবানির ঈদে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা বা কতটুকু ঠেকাব কিভাবে তা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ ও রাজশাহী মেডিক্যালের পরিচালকসহ সভা করেছি। কোরবানির হাটে আমরা দুটি করে গেট রাখব, ঢুকতে এবং বের হতে আলাদা গেট ব্যবহার করা হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কাজ করবে বলেও জানান তিনি। নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ সদস্যের টিম করে কাজ করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জকে হটস্পট হিসেবে ধরা হয়। এর পরে নারায়ণগঞ্জে পিসিআর ল্যাবে নিয়মিত টেস্ট করানো হচ্ছে। মার্চের পর থেকে ২৭ টি ওয়ার্ডের ৩৬ কাউন্সিলরের উদ্যোগে করোনা সংক্রমণ রোধে কাজ করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে কাজ করে যাচ্ছে কর্মকর্তারা। ময়মনসিংহের সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা মার্চের শুরু থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। শহরের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়া, হ্যান্ড সেনিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়। এর পর কর্মহীন মানুষের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী চালু করা হয়। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে কোভিড ইউনিট চালুর প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর কাজ শেষ পর্যায়ে। এর আগে, বিয়ন্ড দ্য প্যান্ডেমিকের ছয়টি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ পর্বটি প্রচারিত হয়েছে গত ১৬ জুন (মঙ্গলবার)। এই পর্বে আলোচকরা জাতীয় বাজেট এবং মানুষের জীবনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
×