ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবহেলাজনিত মৃত্যু ‘ফৌজদারি অপরাধ’-হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৭ জুন ২০২০

অবহেলাজনিত মৃত্যু ‘ফৌজদারি অপরাধ’-হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাকালীন সময়ে বেসরকারী হাসপাতাল মনিটরিং, হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া ১০টি নির্দেশনার মধ্যে ৭টি স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যু ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে দেয়া নির্দেশনাও রয়েছে। মঙ্গলবার আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান এ আদেশ দেন। এর আগে সকালে হাইকোর্টে আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে ভার্চুয়ালি রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান, আইনজীবী এ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক, মোঃ নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান এবং ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘করোনায় চিকিৎসা নিয়ে গতকাল (সোমবার) হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনাগুলোর মধ্যে সাতটি নির্দেশনা স্থগিত করা হয়েছে। বাকিগুলো বহাল রেখেছেন আদালত। উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে আইসিইউ, লকডাউন, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে একাধিক রিট দায়ের করা হয়। ওই সব রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ গত সোমবার এসব নির্দেশনা দেন। যে সাত দফা স্থগিত হয়েছে (১) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা নির্দেশনা অনুসারে ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে ১৫ জুন পর্যন্ত কতজন কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালনের কথা ছিল। পাশাপাশি ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের তালিকাও আর আদালতে দিতে হবে না। (২) বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনাসমূহ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না সে বিষয়ে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পর পর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দেয়া। ওই সব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ প্রতিবেদন আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছিল। (৩) ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যাতে কোভিড ও নন-কোভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেয়, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে একটি মনিটরিং সেল গঠন। স্থগিত করা হয়েছে এই নির্দেশনাও। (৪) কোন সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে দেয়া নির্দেশনাও স্থগিত করা হয়েছে। (৫) স্বাস্থ্য অধিদফতরকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারী হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কর্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করার কথা বলা হয়েছিল। (৬) ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করা, কোন হাসপাতালে আইসিইউতে কতজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা, পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন’ চালু এবং হটলাইন নাম্বারগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করার কথা বলা হয়েছিল। এটিও স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। (৭) দেশে বিদ্যমান সামগ্রিক পরিস্থিতি অর্থাৎ বর্তমানে দেশে বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি একটি ‘দুর্যোগে’ বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নেয়া কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ্যাক্ট-২০১২ এর ধারা-১৪ অনুসারে ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ’ এর কার্যক্রমকে সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। কমিটি কার্যকর হলে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে উপরোক্ত আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক রিকুইজিশন করা যেতে পারে বলে অভিমত দেন আদালত। বহাল থাকা নির্দেশনা তিনটি হলো : (১) চিকিৎসা বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জারি করা নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুনের আগে আদালতে দাখিল করতে হবে। (২) আইসিইউ-এ চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। (৩) অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান বা দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সঙ্কট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×