ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরেজমিন পূর্ব রাজাবাজার

লকডাউনে সহযোগিতা

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১২ জুন ২০২০

লকডাউনে সহযোগিতা

নিখিল মানখিন ॥ লকডাউন সফল করতে সহযোগিতা করছেন রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারবাসী। বৃহস্পতিবার তারা লকডাউনের দ্বিতীয় দিন পার করেছেন। প্রথমদিনের চেয়েও দ্বিতীয় দিনে বেশি কার্যকর হয়েছে লকডাউন। প্রথম দিন বিস্তারিত নির্দেশনা না পেয়ে এলাকাবাসীদের অনেকে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছেন। বৃহস্পতিবার চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, রোগী ছাড়া কাউকে লকডাউন এলাকার ভেতরে ঢুকতে ও বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার এলাকা পূর্ব রাজাবাজার। সরেজমিন ঘুরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় কিছুসংখ্যক কর্মজীবী মানুষকে বের হতে দেখা গেছে। পরিচয় দেখে দেখে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন প্রবেশ গেটে দায়িত্বরত পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক কমিটির সদস্যরা। বাইরে বের হওয়া কর্মজীবীদের একজন হলেন আদ দ্বীন হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মোঃ বেলাল হোসেন। লকডাউনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া এবং সমস্যা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, মাত্র দু’দিন চলছে। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের সমস্যায় পড়িনি। লকডাউনের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রাখতে পেরেছি। আমি ছাড়া পরিবারের কাউকে বাইরে বের হতে হয় না বলে তেমন অসুবিধায় পড়ছি না। সিনিয়র নার্স সুরমা চাকমা যাচ্ছেন তার কর্মস্থল বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তিনি জানান, লকডাউনের নির্দেশনাবলী সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। আমাদের মঙ্গলের জন্যই এই ব্যবস্থা। আমার যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবে আমার স্বামী একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন। অফিস থেকে ছুটি না দেয়ায় আমার স্বামীকে অন্য এলাকায় আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করতে হচ্ছে। লকডাউনের নির্দেশনাবলীতে সকল চাকরিজীবীর জন্য এমন লিখিত কথা থাকা দরকার ছিল, যাতে কর্মস্থলে না গেলেও অফিস মানতে বাধ্য হয়। লকডাউন সফল করতে সহযোগিতার হাত অব্যাহত রাখবেন বলে জানান সুরমা চাকমা। অন্যদের পেছনে পেছনে এক যুবক বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার পরিচয় জানার পর আটকে দেন পুলিশ সদস্যরা। তার বিষয়ে পুলিশ কনস্টেবল মোঃ বাবুল সাংবাদিকদের জানান, ওই যুবকটি একজন ছাত্র। যাদের অনুমতি দেয়া যায়, তাদের মধ্যে পড়ে না। চিকিৎসা বা রোগী সংক্রান্ত কোন বিষয় না। তাকে বাইরে যেতে দিলে অন্য লোকজনও ছুটে আসবে বলে জানান মোঃ বাবুল। সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা গেছে, লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সবগুলো প্রবেশ পথেই ছিল বাড়তি সতর্কতা। যদিও কেউ কেউ এসেছেন লকডাউন ভেঙ্গে বের হওয়ার জন্য। তাদেরও ফিরে যেতে হয়েছে। তবে গলির ভেতরে সামাজিক দূরত্ব না মেনে মানুষের অবস্থান ছিল স্পষ্ট। সময় মতো এলাকার মানুষের জন্য প্রবেশ করেছে নির্ধারিত ভ্যানে কাঁচাবাজার। এদিকে, লকডাউনের প্রথম দিনে তেজগাঁও কলেজের পাশে থাকা রাস্তাটির ব্যারিকেডের নিচ দিয়ে মানুষ বের হওয়ার ছবি প্রকাশ হলে নজরে আসে প্রশাসনের। ওই রাস্তাটি বৃহস্পতিবার পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে সেখানে কর্তব্যরত শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ মাহবুবুর রহমান, গতকালের (বুধবার) চেয়ে আজকের (বৃহস্পতিবার) পরিস্থিতি অনেক ভাল। যারা গতকালকে বের হতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা আজ আর চেষ্টা করেননি। তারা ভালভাবে বুঝে গেছেন লকডাউন কী। তবে মাঝে-মধ্যে দু’একজন এসেছেন, তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানান মোঃ মাহবুবুর রহমান। লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ভোরে ওই এলাকায় করোনা আক্রান্ত একজন মারা গেছেন। কাদের নামের ওই ব্যক্তিকে ভোরে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় ইউনাইটেড হাসপাতালে। একই হাসপাতালে চাকরি করতেন তিনি। শেরেবাংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টেলিফোনে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।
×