ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষ জীবাণুমুক্ত করতে স্বয়ংক্রিয় স্প্রে-গেট

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ২৩ এপ্রিল ২০২০

মানুষ জীবাণুমুক্ত করতে স্বয়ংক্রিয় স্প্রে-গেট

সমুদ্র হক ॥ এই গেটের পাটাতনে পা রেখে অতিক্রমের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে দুদিক থেকে ছড়িয়ে পড়বে মানুষের গোটা শরীরে। পাটাতন পার হওয়ার সঙ্গেই স্প্রে বন্ধ হবে। করোনার সঙ্গে যুদ্ধে মানুষকে বাঁচাতে জীবাণুমুক্ত করে রাখতে এমন একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন বগুড়ার তরুণ প্রকৌশলী মাহমুদুন্নবী বিপ্লব। পরীক্ষামূলক চালু করে সকল ত্রুটি সারিয়ে সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী করেছেন। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও তত্ত্বাবধানে গেটটি তৈরি করেছেন। যা অফিস, ব্যাংক, বাজার, ফ্লাট বাড়ির প্রবেশ ও প্রস্থান পথে কোন প্রতিষ্ঠানে সহজেই বসানো যায়। যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন অটোমেটিক স্যানিটাইজার মেশিন। তবে এই নাম পরিবর্তন করে অটোমেটিক স্যানিটাইজার ও ডিসইনফেকশন স্প্রে গেট (স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক স্প্রে ফটক) বলা যায়। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যগন এই যন্ত্র চালু করে দেখে গেছেন। জেলা প্রশাসন গেটটি প্রথমে কোথায় স্থাপন করবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে। কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এই গেট চাইলে চার দিনের মধ্যে বানিয়ে তিনি সরবরাহ করতে পারবেন। বিপ্লব জানালে এই যন্ত্র তৈরির পাশাপাশি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) উপযোগী ভেন্টিলেশন তৈরিতে হাত দিয়েছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককের কাছে থেকে। বললেন বৈশি^ক মহামারীতে তিনি কিছু অবদান রাখার চেষ্টা করছেন। এর আগে তিনি বন্যা সতর্কীকরণ যন্ত্র, মোবাইল ফোনের টাওয়ারের তাপানুকূল যন্ত্র বানিয়েছেন। শহরের শেরপুর রোডের ধারে তার প্রতিষ্ঠান। জানালেন, গেটে স্প্রের জন্য জীবাণুনাশক হিসাবে ব্যবহার করছেন ডিটারজেন্ট, ব্লিচিং পাউডার ডেটল বা স্যাভলন ও স্যানিটাইজারের রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণ। এই মিশ্রণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। এগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে দ্রবীভূত করে বড় প্লাস্টিক কন্টেনারে ভরা হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় স্প্রে ইউনিট বসানো আছে গেটের দুই ধারে কয়েকটি পয়েন্টে। জীবাণুনাশক সরবরাহে কোন প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করতে পারে। তবে সেই জীবাণুনাশক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষার পর ব্যবহার করতে হবে। তার উদ্ভাবিত গেটটি ৮ ফুট উচ্চতার। দুই পাশে চারফুট বাই চারফুট চওড়া। গেটে পাটাতন দুই ধারে ও উচ্চতা লেভেলে ব্যবহার করা হয়েছে স্টিল এ্যাঙ্গেল শিট। অটোমেটিক এই গেট চালাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন। যেখানে গেটটি স্থাপিত হবে সেখানে বিদ্যুতের উৎস থাকতে হবে। অল্টারনেটিভ কারেন্টে ইনপুট নিয়ে ডাইরেক্ট কারেন্টে আউটপুট দেবে। কোন ব্যক্তি মাস্ক ও হেডকভার পরে পাটাতনে পা ফেলার সঙ্গেই সিগনাল দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবাণুনাশক ছড়িয়ে পড়েব তার শরীরে ও কাপড়চোপড়ে প্রতিটি স্থানে। দ্রুত তিনি জীবাণুমুক্ত হবেন। পাটাতন থেকে পা সামনে ফেলে গেট অতিক্রমের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্প্রে বন্ধ হয়ে যাবে। কোন কারণে বিদ্যুতের লোড সেড হলে পাওয়ার ব্যাকআপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। এই গেটে পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য ইউপিএসের ১২ ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। যা তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুত ব্যাকআপ দেবে। বিদ্যুতে গেটটি চলার সময় ব্যাটারি শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে। তবে এর আগেও চার্জ দিয়ে ব্যাকআপ শক্তি সঞ্চয় করে রাখা যায়। গেটটি রিচার্জেবল সার্কিটে তৈরি করা হয়েছে। উদ্ভাবক বিপ্লবের বাড়ি বগুড়া শহরের সূত্রাপুরে। বয়স ৪৭ বছর। বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৯৫ সালে পাওয়ার বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। এরপর মানব কল্যাণে কোন কিছু বানানোর তাগিদ অনুভব করেন। তার সংসার চলে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকুলার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামত করে। এর মধ্যেই তার উদ্ভাবনী মেধায় এ পর্যন্ত বেশ কিছু জিনিস বানিয়েছেন। তার মধ্যে বড় একটি উদ্ভাবন বন্যার আগাম পূর্বাভাস যন্ত্র। যা ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমাদৃত হয়েছে। তিনি জানালেন করোনার ক্রান্তিকালে তিনি মানব ক্যলাণে কিছু করার তাগিদে এই জীবাণুনাশক স্প্রে গেট বানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের করোনা প্রতিরোধ কমিটির একজন সদস্য বললেন বিপ্লবের এই গেট বগুড়ায় কয়েক স্থানে স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে। উদ্ভাবক বিপ্লব বললেন হাসপাতালের আইসিইউয়ের জন্য ভেন্টিলেশন তৈরিতে হাত দিয়েছেন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভেন্টিলেশনের কার্যক্রম বুঝে নিয়ে তা বানাচ্ছেন। আশা করছেন শীঘ্রই তিনি ভেন্টিলেশন বানাতে সফল হবেন। ভেন্টিলেশন সফল হলে চিকিৎসকগণের সহযোগিতা নিয়ে তা পরীক্ষা করে দেখবেন।
×