ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে বেতন দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১৭ এপ্রিল ২০২০

রাজধানীতে বেতন দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসে চলমান মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও বেতনভাতা পরিশোধ না করায় এবং বিনা নোটিসে কারখানা তালা দেয়ায় ঢাকার পাঁচটি গার্মেন্টসের শত শত শ্রমিক পেটের দায়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। ঢাকার মিরপুর, আদাবর ও উত্তরা এলাকায় এমন বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যেও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি। ঘটনার পর থেকেই উত্তরার দক্ষিণখান এলাকার তিনটি গার্মেন্টসের মালিক পালিয়ে গেছেন। তাদের খোঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এদিকে তৈরি পোশাক খাতের ২১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ শ্রমিক মার্চ মাসের বেতন পেয়েছেন বলে জানিয়েছে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, যা বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত শ্রমিকদের ৮৭ শতাংশ। বিজিএমইএর দেয়া তথ্যমতে, সংগঠনটির সদস্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিন লাখ ১৩ হাজার ৩১৭ শ্রমিক এখনও মার্চ মাসের বেতন পাননি, যা বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ১৩ শতাংশ। আগামী ২০ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে বাকি কারখনাগুলোতে বেতন দেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার রূপনগর এলাকার মনির ফ্যাশন নামের গার্মেন্টসের শতাধিক শ্রমিক প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তিন দফা সময় নিয়েও গার্মেন্টসটির মালিক মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই কারাখানা খোলার কথা বলে তাদের বাড়ি থেকে ডেকে এনেছে গার্মেন্টসটির কর্তৃপক্ষ। আসার পর সরকারী ঘোষণা মোতাবেক আবার গার্মেন্টস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করার জন্য মালিককে তিনবার সময় দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মার্চ মাসের বেতন দেয়ার কথা। অথচ গার্মেন্টসে গিয়ে দেখি তালা দিয়ে তারা পালিয়ে গেছে। এজন্য তারা এরপর প্রতিবাদে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্ক নিয়েও রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। যদিও সরকার বার বারই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলছে। অথচ এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। মালিক মনির হোসেনের কোন হদিস নেই। তাদের ঘরে খাবার নেই। তারা কি করবে। অথচ মালিক পাওনা টাকা দিচ্ছে না। ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, শুধু মনির গার্মেন্টস নয়, মিরপুর এলাকার বহু গার্মেন্টসে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা পুলিশের তরফ থেকে গার্মেন্টস মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকার আদাবরে বকেয়া বেতনের দাবিতে ফ্যালকন ইন্টারন্যাশনাল নিট কম্পোজিট নামের একটি কারখানার সামনে কারখানাটির অন্তত হাজারখানেক শ্রমিক অবস্থান নিয়েছেন। ফ্যালকন গার্মেন্টসের সুইং (সেলাই) বিভাগের কর্মীদের বৃহস্পতিবার মার্চ মাসের বেতন ও ওভার টাইম বিল দেয়ার কথা ছিল। অথচ তাদের শুধু ২৫ দিনের বেতন দেয়া হচ্ছে। এ কারণে সকাল থেকে ফ্যালকন গার্মেন্টসের সামনে অবস্থান করছেন তারা। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পেটে ভাত নেই। সামাজিক দূরত্ব তো পরের কথা। অনেকেই আবার হুড়াহুড়ি করে বেতন নিচ্ছেন। মাত্র ২৫ দিনের বেতন নেয়াকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গার্মেন্টস কর্মীরা জানান, তাদের দিয়ে ১৪৫ থেকে ১৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ওভারটাইম করিয়ে নিয়েছে। রাত ৩ থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করায়। এত কষ্ট করায়, কিন্তু আমাদের টাকা দেয় না। খাব কি, ঘরভাড়া দেব কিভাবে? আদাবর থানার ওসি কাজী শাহীদুজ্জামান জানান, গার্মেন্টস মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের ওভার টাইমের টাকা দিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন ফ্যালকনের মালিক। র‌্যাব-২’র কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-২) মেজর এইচ এম পারভেজ আরেফিন জানান, বিষয়টি জানার পর গার্মেন্টস মালিকের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। চলতি মাসের মধ্যেই মালিক শ্রমিকদের পাওনা দিয়ে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফ্যালকনের মালিক মাহাতব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, তারা ২৮ দিনের বেতন দিচ্ছেন। তবে এ মাসের মধ্যে তাদের ওভার টাইমের টাকা দিয়ে দেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ টাকা দেয়া হবে, তা তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বকেয়া বেতন-ভাতা ও জরুরী ত্রাণ সহায়তার দাবিতে বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষাভ করেছেন উত্তরা দক্ষিণখান এলাকার তিনটি পোশাক কারখানার কর্মীরা। রেদওয়ান, সিএনবি ও স্যার ডেনিম কারখানার মালিকপক্ষও পলাতক। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতিকে (বিজিএমইএ) পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছে পুলিশ। গত কয়েক দিন ধরেই গাজীপুর, কাওরানবাজার, দক্ষিণ কমলাপুর বিন্নি গার্মেন্টস এবং সরদার নিট এ্যান্ড ওয়্যার নামে অপর একটি গার্মেন্টসের দুই শতাধিক শ্রমিক কমলাপুর এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। যদিও সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে মোবাইল ফোনের বিকাশ এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেতন পাওয়া কথা রয়েছে পোশাক খাতের শ্রমিকদের। এভাবেই চলতি এপ্রিল থেকে আগামী জুন মাস পর্যন্ত তিন মাসের বেতন প্রদান করা হবে। অথচ মার্চ মাসের বেতন এখনও পরিশোধ করেনি পোশাক খাতের অধিকাংশ মালিকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালিকরা মার্চের বেতন প্রদান নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে টালবাহানা শুরু করেছে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তায় নেমেছে পোশাক শ্রমিকরা। করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। জানা গেছে, নামমাত্র সুদে সরকারী প্রণোদনা থেকে ঋণ পেতে মরিয়া হয়ে উঠছেন গার্মেন্টস মালিকরা। আর এ কারণে হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকার পরও মার্চ মাসের বেতন পরিশোধে তাদের অনীহা দেখা যাচ্ছে। কোন মতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বেতন প্রদানের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছে মালিকপক্ষ। এরপর সরকারী প্রণোদনার টাকা থেকে বেতন পরিশোধ করার পরিকল্পনা রয়েছে মালিকদের। মার্চের বেতন পেয়েছেন ৮৭ শতাংশ গার্মেন্টস শ্রমিক ॥ এদিকে তৈরি পোশাক খাতের ২১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ শ্রমিক মার্চ মাসের বেতন পেয়েছেন বলে জানিয়েছে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, যা বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের ৮৭ শতাংশ। বিজিএমইএর দেয়া তথ্যমতে, সংগঠনটির সদস্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিন লাখ ১৩ হাজার ৩১৭ শ্রমিক এখনও মার্চ মাসের বেতন পাননি, যা বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ১৩ শতাংশ। আগামী ২০ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে বাকি কারখনাগুলোয় বেতন দেয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানিয়েছে বিজিএমইএ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিজিএমইএর কারখানায় কর্মরত ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ শ্রমিকের মধ্যে ২১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ জন মার্চ মাসের বেতন পেয়েছেন। এ হিসাবে এখনও মার্চ মাসের বেতন পাননি তিন লাখ ১৩ হাজার ৩১৭ গার্মেন্টস শ্রমিক। সংগঠনটি জানিয়েছে, বিজিএমইএর সদস্য দুই হাজার ২৭৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক হাজার ৬৬৫টি প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে। এছাড়া ঢাকার ৯৭ এবং চট্টগ্রামের ১১৯ প্রতিষ্ঠানের বেতন পরিশোধ প্রক্রিয়াধীন।
×