ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘নেইমার একজন ভাল অভিনেতা’

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১৫ মার্চ ২০২০

‘নেইমার একজন ভাল অভিনেতা’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নেইমারকে এবার ভাল অভিনেতা হিসেবে মন্তব্য করলেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের স্পোর্টিং ডিরেক্টর মাইকেল জোর্ক। গত সপ্তাহে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে জার্মান ক্লাবটিকে। আর তাতেই প্রথম লেগে পিছিয়ে থাকার পরও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কাটে প্যারিস জায়ান্টরা। সেই ম্যাচের ৮৯ মিনিটেই পিএসজির ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারকে ফাউল করার জন্য লালকার্ড দেখেন ডর্টমুন্ডের এমরি কান। যে কারণে ম্যাচের শেষ কয়েক মিনিট ১০ জনের দলে পরিণত হয় বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ডর্টমুন্ডের স্পোর্টিং ডিরেক্টর মাইকেল জোর্ক বলেন, ‘আমি মনে করি, রেডকার্ড দেয়ার সিদ্ধান্তটা অনেক বেশি ঝাঁজালো হয়ে গেছে। আমরা সকলেই জানি, নেইমার একজন ভাল অভিনেতা। আজ তা আরও ভালভাবে প্রমাণ করল নেইমার।’ জার্মান ক্লাবটির কোচ লুসিয়েন ফেব্রি তো এটাকে রীতিমতো হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘তাকে রেডকার্ড প্রদানের সিদ্ধান্তটা খুবই বাজে হয়েছে। এমরি সামান্য ভুল করতে পারে কিন্তু নেইমার সেটাকে অতিরঞ্জিত করে ফেলেছে। এটা মোটেও রেডকার্ড পাওয়ার মতো বিষয় নয়। তাকে রেডকার্ড দেয়াটা রীতিমতো হাস্যকর।’ ২০১৮ বিশ্বকাপে অতিরঞ্জিত অভিনয় করে গোটা ফুটবল দুনিয়াতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন নেইমার। সেবার নিজের পারফর্মেন্সের চেয়ে মাঠে অভিনয় করে যেন অনেক বেশি সমালোচনার কবলে পড়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। সেই সময়ে তার এমন আচরণে মন্তব্য করেছিলেন অনেকেই। যার মধ্যে ছিল আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ডিয়েগো মারাডোনাও। ব্রাজিলিয়ান তারকার ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, ‘নেইমার অবশ্যই ভাল খেলোয়াড়। কিন্তু মাঠে সামান্য বাড়তি সুবিধা নেয়ার জন্য তার অজুহাত দাঁড় করানো উচিত নয়। তার ড্রাইভ দেয়া দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। মনে রাখতে হবে, ড্রাইভ দিলেও হলুদ কার্ড দেখতে হয়। এছাড়া ভিএআর আছে এখন।’ ২০১৭ সালে ট্রান্সফার ফি’র বিশ্বরেকর্ড গড়ে ২২২ মিলিয়ন ইউরোয় বার্সিলোনা থেকে নেইমারকে কিনেছিল পিএসজি। তবে প্রথম দুই মৌসুমে তার কাছ থেকে কাক্সিক্ষত পারফর্মেন্স পাওয়া যাচ্ছিল না। এর বাইরে ইনজুরি আর বিতর্ক তো আছেই। তবে এবার তার ইনজুরিতে পড়ার হার কম আর মাঠে বেশ প্রাণবন্ত দেখা যাচ্ছে। বুধবার ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে নিজেদের দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে পিএসজি। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন নেইমার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলটি বার্সিলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছিল। তবে এবার বাজি পাল্টে গেছে। এখন প্রশ্ন একটাই, বছরটা কি তবে নেইমারদেরই হতে যাচ্ছে? যদিওবা এই প্রশ্নের উত্তর এখনও সময়ের হাতে। তবে নেইমার বার্সিলোনা থেকে প্যারিসে যাওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে খুব একটা সুখে ছিলেন না। এই সময়ে স্পেনে ফেরার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি। গত মৌসুমে পিএসজি থেকে শত চেষ্টাতেও বের হতে পারেননি নেইমার, যেতে পারেননি প্রিয় বন্ধু লিওনেল মেসির বার্সিলোনায়। এরপর বার্সিলোনার কাছে বকেয়া বেতন চেয়ে মামলাও করেছেন। কিন্তু তারপরও বার্সিলোনাতেই ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। এমন ঘোলাটে সম্পর্কের মধ্যে ‘কাবাবের হাড্ডি’ হয়ে বসে আছে পিএসজি। গত দলবদলে কোনভাবেই নেইমারকে ছাড়েনি। পরের মৌসুমেও ছাড়তে না চাওয়ারই কথা তাদের। তাহলে কী করবেন নেইমার? এ অবস্থায় উদ্ধার পাওয়ার উপায় একটিই, ‘ওয়েবস্টার রুলিং।’ ২০০৬ সালে স্কটিশ ডিফেন্ডার এ্যান্ড্রু ওয়েবস্টার ফিফার এক নিয়মের ছিদ্র খুঁজে নিয়ে তার ক্লাব হার্ট অব মিডলোথিয়ানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছিলেন। চুক্তির এক বছর বাকি থাকা অবস্থায়ও যোগ দিয়েছিলেন ইংলিশ ক্লাব উইগান এ্যাথলেটিকে। ফিফার আর্টিকেল ১৭তে লেখা ছিল যদি কোন ফুটবলার ২৮ বছর বয়সের আগে চুক্তি করেন এবং তিন বছরের মধ্যে চুক্তি নবায়ন না করেন তবে চুক্তি স্বাক্ষরের তিন বছর পর সে চুক্তি থেকে সরে আসা যায়। বয়স যদি ২৮-এর বেশি হয় তবে সময়টা কমে দুই বছর হয়ে যায়। পিএসজিতে নেইমারের তিন বছর শেষ হবে এবারের জুলাইয়ে। এরপর তিনিও চাইলে ওয়েবস্টারের মতো পিএসজির সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করে চলে যেতে পারবেন।
×