ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আটকে তৎপর পুলিশ

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে পাপিয়া, দেহ ব্যবসায় জড়িতরা চিহ্নিত

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১ মার্চ ২০২০

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে পাপিয়া, দেহ ব্যবসায় জড়িতরা চিহ্নিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাপিয়ার সহযোগীদেরকে ধরতে মাঠে নেমেছে ডিবি পুলিশ। বিমানবন্দর থানায় মুখ না খুললেও তাকে ডিবি পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ওয়েস্টিন হোটেলে সাত তরুণীকে দিয়ে দেহ ব্যবসায় কারা কারা জড়িত ছিল- তাদেরকে চিহ্নিত করা গেছে। ডিবি পুলিশ এখন তাদেরকে আটকের জন্য তৎপর হয়েছে। পাশাপাশি নরসিংদীতে পাপিয়া বাহিনীর জুলুম নির্যাতনের শিকার বেশ ক’জন ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এর মধ্যে টোকন নামের এক ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছে ডিবি। তিনটি মামলায় মোট ১৫ দিনের রিমান্ডে আনা হলেও তাকে আপাতত ডিবি হেফাজতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী জানিয়েছেন, তাকে শুধু জাল মুদ্রা মামলার আসামি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনেই তাকে নেয়া হয়েছে ডিবিতে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন- শুধু পাপিয়ার সহযোগী নয় তার গডফাদারদেরকেও ধরা হবে। কেননা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের আগাছা পরিষ্কারে অভিযান শুরু হয়েছে। যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেতা শামীমা নূর পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত। শুধু পাপিয়া নয়, দুষ্কৃতকারীদের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। শনিবার টোকন জানিয়েছেন- সাইফুল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে পাপিয়ার সঙ্গে তার পরিচয়। অনুষ্ঠান শেষে পাপিয়া তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে উঠতি চার তরুণীকে তার সামনে নিয়ে আসে। এরপর জোর করে তাদের সঙ্গে আমার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। সেই ছবি দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়। মান-সম্মানের ভয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা দেয়ার পরও রেহাই মেলেনি। তারপর পাপিয়ার বাড়ির ছাদে তিনদিন আটকে রাখে। একপর্যায়ে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা দেয়ার পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এ সম্পর্কে টোকন তালুকদার এ প্রতিনিধিকে বলেন- আমার মতো এমন অনেক নির্যাতিত লোক এখন মুখ খুলছে। আমি দেখেছি- নরসিংদীতে একটি বাহিনীই চালায় পাপিয়া-সুমন দম্পতি। জোরপূর্বক ছবি তুলে ব্যবসায়ীদের ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় তাদের মূল উদ্দেশ্য। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর পাপিয়া-সুমন দম্পতির প্রতারণার শিকার মেয়েরাও অভিযোগ করেছেন। কৌশলে পাপিয়ার আস্তানায় নিয়ে বিত্তবান লোকজনের সঙ্গে ওই তরুণীদের আপত্তিকর ছবি তুলে পরে ব্লাকমেল শুরু করে। এমনকি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে সম্মানহানি ও পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে নগদ ১০ লাখ টাকা দাবি করে। নগদে ২০ হাজার টাকা দিয়েই সে রাতে রেহাই মেলেনি। আমাকে আটকে রাখা হয় প্রায় তিনদিন। এরপর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে দিলে আমাকে ছাড়ে ওরা। এরপর ঢাকায় যখন গ্রেফতার হয় তখন আমি পাপিয়ার গ্রেফতারের খবর শুনে আমি বিমানবন্দর থানায় যাই, ওসিকে ঘটনা খুলে বলায় মামলার পরামর্শ দেন নরসিংদীতে। সেদিন থানার ভেতরেই ওসি সাহেব আমার মুখোমুখি করায় পাপিয়াকে। এক পর্যায়ে তার স্বামী সুমনকেও সামনে আনা হলেও ওসির সামনেই সে হুমকি দেয় আমাকে। এতে বোঝা যায় কতটা ভয়ঙ্কর এই দম্পতি। এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার ওসি বি এম ফরমান আলী বলেন, টোকন নামের গোপালগঞ্জের একজন ব্যবসায়ী থানায় মামলা করতে এসেছিলেন পাপিয়া-সুমন দম্পতির বিরুদ্ধে। সময় ও স্থানসহ ঘটনার বিবরণ শুনে এবং পাপিয়া ও তার স্বামীকে মুখোমুখি করে বিষয়টি বুঝতে পারি ঘটনা সত্য। ব্যবসায়ীকে নরসিংদীতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।
×