ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক নির্বাচন

মনোনয়ন বঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মনোনয়ন বঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন দল এবং নির্দলীয় অনেকে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। ইতোমধ্যে আগ্রহীদের পক্ষে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে।তবে শেষ পর্যন্ত কি পরিস্থিতি দাঁড়ায় তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আগামী ৮ মার্চ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন। ওইদিন নিশ্চিত হওয়া যাবে দলীয়, নির্দলীয়, স্বতন্ত্র এবং বিদ্রোহী হিসেবে কারা কারা মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ৪১ ওয়ার্ডে ৪১ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৫টি পদ রয়েছে। সবমিলে মোট নির্বাচিত হবেন ৫৫ জন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র ও কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যতম বিরোধীদল বিএনপির পক্ষে দলীয় মনোনয়নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু প্রার্থিতা এখনও চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হয়নি। অন্যান্য দলের পরিস্থিতিও একই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের মেয়র পদে প্রার্থিতা নিয়ে কোন কোন্দল না থাকলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের তালিকা দীর্ঘ। ইতোমধ্যে দলের মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিতরা থেমে নেই। ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশ ওয়ার্ডে মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। যদিও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এ নির্বাচন করলে বহিষ্কারের ঘোষণা রয়েছে। তারপরও আগ্রহীরা এতে কোন কর্ণপাত এ পর্যন্ত করছেন না। মনোনয়ন বঞ্চিতদের অভিযোগ, দলের হাইকমান্ডকে মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয় প্রার্থীদের ব্যাপারে ভুল বুঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে যারা বিভিন্নভাবে লবিংয়ে পারঙ্গম ছিলেন তারাই কামিয়াব হয়েছেন। অথচ মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের আগ্রহ ও অনুরোধে অনেকেই প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। যদি পরিস্থিতি তাই হয়, তাহলে নির্বাচনী প্রচারের সময় এবং ভোটের দিন বিবদমান এসব প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। যদিও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয়ভাবে দলের পক্ষ থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের বিপরীতে দলের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি বর্তমানে এমন হয়েছে, ‘কার কথা কে শোনে।’ মনোনয়ন বঞ্চিতরা মনোনয়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে সাংঘাতিকভাবে ক্ষুব্ধ। তাদের অনেকের বক্তব্য মনোনয়ন নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়ায় তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এর নেপথ্যে ষড়যন্ত্র যেমন রয়েছে, তেমনি অপরাজনীতিও রয়েছে। মোদ্দা কথা মনোনয়ন দানকালে একগ্রুপ আরেক গ্রুপের প্রার্থীদের ল্যাং মারামারিতে লিপ্ত ছিলেন। ফলশ্রুতিতে জনপ্রিয় বহু কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ছিটকে পড়েছেন। এদের অনেকে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তারা দেখাতে চান তাদের জনপ্রিয়তা। যদি তাই হয় তাহলে দলের নগর রাজনীতিতে চসিক নির্বাচন নিয়ে এটি একটি অশনি সঙ্কেত। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর রাজনীতিতে এমনিতেই দুটি ধারা সক্রিয়। একটি মেয়র পদে মনোনয়ন বঞ্চিত আ জ ম নাছির উদ্দিন সমর্থিত গ্রুপ। অপরটি মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপ হিসাবে পরিচিত। মেয়র পদে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীতে মনোনয়ন দেয়ার ঘটনায় মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপের কর্মী সমর্থকরা উজ্জীবিত। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মেয়র পদে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সাহস করছেন না। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন নিয়ে। তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পরিবর্তনের কোন সুযোগ আর নেই। তবে দলীয় পরিচয়ে যারা স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার সুযোগ রয়েছে। দলীয় হাইকমান্ড এ ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করলে এতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি অনেকাংশে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায়ই ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতদের পক্ষে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম নেয়ার তোড়জোড়ও পরিলক্ষিত হচ্ছে। কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নিশ্চিত করেছেন তারা নির্বাচনে প্রার্থী যে হচ্ছেন তা নিশ্চিত। এক্ষেত্রে দলের সাংগঠনিক ব্যবস্থার বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা যুগপৎভাবে জানিয়েছেন, ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ার কারণে তারা মাঠে নামবেন। এতে বহিষ্কারসহ যে ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন নির্বাচিত হলে তা নিমিষেই ভিন্ন রূপ নেবে। অতীতে এ ধরনের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে বেশিদিন গড়ায়নি। তাদেরকে পুনরায় দলে বরণ করে নেয়া হয়েছে।
×