ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিসের মাসুল গুনছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিসের মাসুল গুনছে বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয়দিন স্বাগতিক পাকিস্তান ব্যাট করতে নেমে রানের উৎসব করেছে। শনিবার বাংলাদেশের ভোঁতা বোলিং এবং ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের সুযোগ নিয়ে শান মাসুদ ও বাবর আজম জোড়া শতক হাঁকান। ফলে ৩ উইকেটে ৩৪২ রান তুলে দ্বিতীয়দিন শেষ করেছে পাকিস্তান। ২ রানে ক্যাচ দিয়েও জীবন পাওয়া বাবর ক্যারিয়ারসেরা ১৪৩ রানে অপরাজিত। পাকিস্তানের লিড দাঁড়িয়েছে ১০৯ রানের। বিশাল এক সংগ্রহের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা। ইতোমধ্যেই রানের চাপে পড়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। এই উইকেটে শুক্রবার প্রথমদিন মাত্র ২৩৩ রানেই প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের। অথচ এই টেস্ট মাঠে গড়ানোর আগে পিচ রিপোর্টে বলা হয়েছিল প্রথম এক ঘণ্টা ধৈর্য রাখতে পারলে ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেটটি হয়ে উঠবে স্বর্গ। কিন্তু পাক অধিনায়ক আজহার আলী টস জিতেও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে। তার বোলাররা যতখানি ভাল করেছেন, তারচেয়ে বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে নেমে অধৈর্য দেখিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। উইকেট বিলিয়ে বাংলাদেশ প্রথমদিনেই গুটিয়ে গেছে মাত্র ২৩৩ রানে। সে কারণেই রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দু’দিন শেষ হতেই রানের চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডির উইকেট বাংলাদেশ দলের জন্য একেবারেই অপরিচিত। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও সেই দলটির কোন সদস্যই বর্তমান দলের সঙ্গে নেই। সেই মাঠে ১৭ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা। এই দীর্ঘ সময় পর প্রথম পাকিস্তানের মাটিতেও টেস্ট খেলা। অথচ রাওয়ালপিন্ডির উইকেট বুঝে ওঠার জন্য সেখানে অনুশীলন করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল মাত্র ১ দিন। প্রস্তুতি ম্যাচও হয়নি। আর সেই সুযোগটাই নিয়েছেন স্বাগতিক দলের অধিনায়ক আজহার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হলেও টস জিতে প্রথমে সফরকারী বাংলাদেশকেই ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে একটি জুয়াই খেলেছেন তিনি। পাকরা আগে ব্যাটিং করলেও বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা উইকেটের গতি-প্রকৃতি বুঝে উঠতে পারতেন। কিন্তু সেই সুযোগ তারা দেয়নি সফরকারীদের। একেবারে অচেনা এক চ্যালেঞ্জে নামিয়ে দিয়েছে তারা প্রতিপক্ষকে। আহামরি কোন বোলিং না করলেও নিজেদের ভুলে বারবার উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দল। পাকদের পরিকল্পনা সফল হয়েছে, প্রথমদিন ২৩৩ রানেই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। দিনের শেষভাগে আলোর স্বল্পতার কারণে আর ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি পাকদের। ফলে পুরোপুরি তরতাজা হয়েই শনিবার টেস্টের দ্বিতীয়দিন নামার সুযোগ পেয়েছে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয়দিন যেন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের জন্য একেবারে প্রথমদিনের মতোই টাটকা শুরু। কারণ প্রথমদিন তারা শুধু বোলিং করেছে। সারাদিনের ফিল্ডিং ক্লান্তি নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। পূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে দ্বিতীয়দিনে ব্যাটিং শুরু করেছে তারা পরিচিত পরিবেশ আর স্বাগতিক দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের সামনে। তবে তাদের দিনের শুরুতেই ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দেন ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ রাহী। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হেনে স্বাগতিকদের বিমূঢ় করে দেন তিনি। নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওপেনার আবিদ আলীকে (০) আউট সুইঙ্গারে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেছেন রাহী। দলীয় ২ রানেই প্রথম উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশী বোলারদের কোন সুযোগ দেননি আর আরেক ওপেনার মাসুদ ও অধিনায়ক আজহার। দ্বিতীয় উইকেটে ৯১ রানের বড় জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন তারা। রাহী তার বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলেও এবাদত হোসেন চৌধুরী ও দীর্ঘদিন পর ফেরা রুবেল হোসেন ছিলেন একেবারেই অগোছালো। লাঞ্চ বিরতির আধাঘণ্টা আগে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন রাহীই আজহারকে শিকার করে। পাক অধিনায়ক ৫৯ বলে ৪ চারে ৩৪ রান করেই সাজঘরে ফিরে গেছেন। তখনও দিনের খেলার লাগামটা কোন দলের একক নিয়ন্ত্রণে যায়নি। লাঞ্চ বিরতির পরই নিয়ন্ত্রণটা নিজেদের দখলে নিতে পারত বাংলাদেশ দল। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। সফলও হতে পারতেন দ্রুত। তার দারুণ এক ফ্লাইটে মিড অফে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন বাবর। ২ রানে থাকা বাবরকে সাজঘরে ফেরাতে পারেননি এবাদত সেই ক্যাচটি লুফে। একটি বলেই পরিস্থিতি বদলে যায় যে নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ দল নিতে পারেনি সেটি নিয়েছে পাকরা। জীবন ফিরে পেয়ে তৃতীয় উইকেটে মাসুদের সঙ্গে বাবর গড়ে তোলেন ১১২ রানের। ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক হাঁকান মাসুদ। তবে সেটি হয়েছে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের বোকামিতে। ইনিংসের ৪৫তম ওভারে রুবেলের করা তৃতীয় বলে তার ব্যাট ছুঁয়ে লিটনের গ্লাভসে জমা পড়েছিল। ৮৬ রানে থাকা মাসুদের বিপক্ষে আউটের আবেদন করেননি কেউ। পরে রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গেছে আউট ছিলেন মাসুদ। রুবেল-লিটনের এমন চরম বোকামির সুযোগ নিয়েই সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। তবে শতক হাঁকানোর পর সেই বোকামির আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন তাইজুল তাকে সরাসরি বোল্ড করে দিয়ে। ১৬০ বলে ১১ চারে ১০০ রান করেন মাসুদ। ততক্ষণে বাংলাদেশের ইনিংস প্রায় ছুঁয়েই ফেলেছে পাকরা। ৩ উইকেটে ২০৫ রান তখন। শুরুতেই জীবন পাওয়া বাবর ব্যাট চালিয়েছেন নিজের খেয়ালখুশি মতো, হাঁকিয়েছেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং স্বর্গে বাংলাদেশী বোলাররাও নখ-দন্তহীন থেকেছেন এরপর। তাই দিনের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয় পাকরা। মাত্র ১৩৪ বলেই ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক হাঁকান বাবর। তিনি আর আসাদ শফিক একেবারেই বিনাযুদ্ধে দ্রুত রান তুলেছেন। চতুর্থ উইকেটে দিনশেষ করেছেন দু’জন জুটিতে ১৩৭ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে। পাকরা ৩ উইকেটে ৩৪২ রান করার পর অবশ্য আলোর স্বল্পতায় দিনের শেষ দুই ওভার আগেই খেলা শেষ হয়ে যায়। তাতে লাভই হয়েছে পাকদের। সেঞ্চুরি ক্লান্তি নিয়ে বাবর ও অর্ধশতক হাঁকানো আসাদ স্বস্তিতেই ছেড়েছেন মাঠ। কারণ ইতোমধ্যেই স্বাগতিকদের লিড হয়েছে ১০৯ রানের। বাবর ১৯২ বলে ১৯ চার, ১ ছক্কায় ১৪৩ রানে এবং আসাদ ১১১ বলে ৮ চারে ৬০ রানে অপরাজিত আছেন। দ্বিতীয়দিন বাংলাদেশের সেরা বোলিং নৈপুণ্য রাহীর, ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
×