ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:০৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকার। এর পরও ভোট উৎসবে দারুণ মেতেছে ঢাকাবাসী। সকল মনোযোগ এখন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের জন্য দুই মেয়র নির্বাচন করা হবে। বেছে নেয়া হবে কাউন্সিলর। সে লক্ষ্যে আগামীকাল শনিবার ভোটের আয়োজন করা হচ্ছে। তার আগের পুরোটা সময় প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন প্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার মধ্য রাত পর্যন্ত চলে প্রচার। শেষ দিনেও কোন প্রার্থীকে ক্লান্ত মনে হয়নি। আর সমর্থকরা সব সময়ের মতোই মাতিয়ে রাখেন অলিগলি রাজপথ। গান, স্লোগান, হ্যান্ড মাইকে বক্তৃতা, ভোট চাই, দোয়া চাই, কোলাকুলি গলাগলিÑ সবই হলো। এবার সাধারণ ভোটারদের সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা। মেয়র ও কাউন্সিলর হিসেবে কাদের এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা? কোনটি তাদের মূল বিবেচনা? ঢাকার ভাল? নাকি জাতীয় রাজনীতি? দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতীক নিয়ে মেয়ররা লড়ছেন। কেউ শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট চান। কেউ চান খালেদা জিয়ার ধানের শীষে। কোন মার্কায় কী ফল দেবে? এটিও বড় বিবেচনা। দৃশ্যমান বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারে আওয়ামী লীগ। মেয়র একই দলের হলে বেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন। চলমান বহু প্রকল্প সহজেই এগিয়ে নিতে পারবেন তারা। সরকারের নীতি আদর্শের সঙ্গে মিল রেখে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারবেন। তেমনই বাস্তবায়নের কাজটি কঠিন হবে না। অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থীরা দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার বাড়তি দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন। আদালতের কাজ সিটি কর্পোরেশন করতে পারবে না। কোন সুযোগ নেই। তথাপি মামলায় দ-িত নেত্রীর প্রতি কট্টর সমর্থকদের এটা আবেগ লক্ষ্য করা যায়। যেটুকুই আবেগ, বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা তার পুরোটা কাজে লাগাতে চান। বিজয়ী হলে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন বলেই ধারণা দিচ্ছেন তারা। শহর ঢাকার তাতে বিশেষ লাভ হবে না। এ অবস্থায় কোন দিকে যাবেন সংখ্যাধিক্য ভোটার? আজ-কালের মধ্যে নিতে হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। প্রচারের হৈ হুল্লোড় উত্তেজনা কমলেও, ভেতরে ভেতরে সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করছেন ভোটাররা। সব ঠিক থাকলে শনিবার তাদের মনের খবর জানা যাবে। আপাতত তাই অপেক্ষা। অন্য প্রসঙ্গ। নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যেই এগিয়ে চলেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রস্তুতি। রাজধানী শহরে যত মেলা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোক না কেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার আলাদা আবেদন। আয়োজনটি যে কোন বিবেচনায় বড়। বিশাল। তারও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। মাসব্যাপী আয়োজন বাঙালীর ভাষা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে সযতেœ তুলে ধরে। লালন করে। বছর ঘুরে আবারও আসছে সেই সময়। এবার একদিন পিছিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে গ্রন্থমেলা। চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ফলে একদিন পরে শুরু হলেও, মেলা ২৮ দিনেরই হবে। এরই মাঝে মূল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে মেলার চিরচেনা ছবিটা দেখা গেছে। অবশ্য পরিসর আরও বেড়েছে। বেড়েছে বললে ভুল হবে। অনেক বেড়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৮ লাখ বর্গফুট জায়গায় আয়োজন করা হচ্ছে মেলা। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬ প্রতিষ্ঠান, স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেছে। মূল মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে ৪৩৪ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই পাওয়া যাবে। মোট ৫৬০ প্রতিষ্ঠান। একুশের চেতনাকে ধারণ করে এ পর্যন্ত আসা মেলা একই চেতনার জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুকে বরণ করে নিয়েছে। আগামী ১৭ মার্চ থেকে বাঙালী জাতি রাষ্ট্রের মহান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন শুরু হবে। মাহেন্দ্রক্ষণ শুরুর প্রাক্কালে মহান নেতার প্রতি সম্মিলিতভাবে শ্রদ্ধা জানানোর বড় প্লাটফর্ম হয়ে উঠবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আয়োজক বাংলা একাডেমি সেভাবেই চিন্তা করছে। কাজও এগিয়ে নিচ্ছে। জাতির জনকের স্মৃতির প্রতি মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে। আছে আরও বহুবিধ পরিকল্পনা। প্রকাশকদের সঙ্গে গল্প আড্ডায় জানা যাচ্ছে, তারাও মুজিববর্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বই প্রকাশ করছেন। বঙ্গবন্ধুর নানা দিক নিয়ে লেখা অসংখ্য বই মেলায় আসবে বলে ধারণা দিয়েছেন তারা। সবই খুব ভাল মানের হবে, তা নয়। তবে ভাল এবং মৌলিক বইও আসছে বলে প্রগতিশীল প্রকাশকরা জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ অন্যান্য বারের চেয়ে আলাদা হবে। সমৃদ্ধ হবে বলেই আশা। শেষ করা যাক নভেল করোনা ভাইরাসের প্রসঙ্গ টেনে। ভয়ঙ্কর এ রোগ হঠাৎ করেই হানা দিয়েছে। ভাইরাসটির বাসা-বাড়ি সবই চীনে। আপাতত চীনে। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রবল এ শঙ্কার কারণে ঢাকায় বসেও রোগটি নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। কম বেশি আলোচনা হচ্ছে সর্বত্রই। এরই মাঝে ভারতে এক রোগীর সন্ধান মিলেছে। মালয়েশিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছে আরেকজন। স্বস্থির বিষয়Ñ ঢাকায় এখনও তেমন কোন রোগী আবিষ্কৃত হয়নি। তবে জ্বরে আক্রান্ত এক শিক্ষার্থীকে ঘিরে কিছুটা দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। চীন থেকে আসা তরুণকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রের খবর, সাউদার্ন চায়না এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বুধবার রাতে ঢাকায় ফেরেন প্রবাসী ছাত্র। শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রাথমিক পরীক্ষায় তার জ্বর ধরা পড়ে। তার শরীরের তাপমাত্রা ছিল ১০০ দশমিক ৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট। তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে বৃহস্পতিবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখন চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কেউ কেউ এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর দখল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ঢাকা। যদি নতুন সংক্রামক ব্যাধিটিও এ শহরে ঢুকে পড়ে তাহলে বড় বিপদের কারণ হবে। তবে চিকিৎকরা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, একটু সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নাগরিকদের পূর্ব সচেতনতা এবং সরকারীভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া গেলে ভয় জয় করা কঠিন হবে না। যেন তাই হয়, যেন আর কোন দুর্যোগ নেমে না আসে ঢাকার ওপর।
×