ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন নাদিরা মজুমদার

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

 অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন  নাদিরা  মজুমদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঠকসমাদৃত বিজ্ঞান লেখক নাদিরা মজুমদার। বিজ্ঞানের রহস্যময়তাকে সহজ-সরলভাবে উপস্থাপনই তার লেখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানবিষয়ক রচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিয়ে লেখালেখিতেও রয়েছে তার দক্ষতা। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৬ প্রদান করা হলো এই লেখিকাকে। রবিবার বিকেলে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। পুরস্কারের সম্মানী হিসেবে পেয়েছেন এক লাখ টাকার চেক এবং সম্মাননা স্মারক। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহিম। সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবী মালেকা খান। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন না পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে নাদিরা মজুমদার বলেন, এ পুরস্কারপ্রাপ্তি আমার কাছে অভিভূত হওয়ার একটি মুহূর্ত। যে কোন পুরস্কারই সম্মানজনক। এর মাধ্যমে একপক্ষ স্বীকৃতি দেয় এবং অপর পক্ষ সেই স্বীকৃতি গ্রহণ করে। গ্রহণের এই মুহূর্তে নানা অনুভূতি এসে ভিড় করেছে আমার মনে। মনে পড়ছে ছাত্রজীবন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। যারা আমার আজকের অবস্থানে আসার পথটি তৈরি করে দিয়েছেন তাদের কথা মনে পড়ছে। ছাত্রজীবন শেষ করে যখন সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম তখন বাবা ভীষণ খুশি হয়েছিলেন-সেই কথা মনে পড়ছে। বাবা-মার অনুপ্রেরণাই আমাকে পৌঁছে দিয়েছে আজকের এই মঞ্চে। সর্বোপরি এই পুরস্কারপ্রাপ্তির নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অবদানটি হচ্ছে পাঠকের। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নাদিরা মজুমদার ভিন্ন মাত্রার লেখক। তার লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিজ্ঞানকে খুব সহজভাবে লিখতে পারেন। সে লেখায় একটা প্রাণবন্ত ভাব থাকে। আর শুধু লেখা নয় তার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ে তার মতো আর কোন লেখক বাংলা সাহিত্যে লেখেন না। বিশ্ব রাজনীতিবিষয়ক তার লেখাগুলোয় সাহিত্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় সাংবাদিকতা। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যখন দেখি, নাদিরা সাংবাদিকতা করছে, তখনই মনে হয়েছিল সে অনেক দূর যাবে। তিনি আসলেই গিয়েছেন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে এগিয়ে গিয়েছেন। বিদেশে গেলেও তিনি বাঙালী ছিলেন। বাঙালীর জন্য লিখেছেন। ৩৪ বছর ধরে চেক প্রজাতন্ত্রে বসবাস করছেন খ্যাতিমান বিজ্ঞান লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক নাদিরা মজুমদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি ছিলেন এ্যাকাউন্টেন্ট, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজার, চেক প্রজাতন্ত্রের নীতি-নির্ধারক ইত্যাদি। প্রাগস্থ জাতিসংঘের উদ্বাস্তু কমিশনের বহিরাগত কনস্যালটেন্টও ছিলেন। নাদিরা মজুমদারের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘এই আমাদের পৃথিবী’, ‘একমেরু বনাম বহুমেরু’, ‘মহাবিশ্বে আমরাও আছি’, ‘বিমান’, ‘কৃত্রিম উপগ্রহ’, ‘আগ্নেয়গিরি ও ভূমিকম্পের কাহিনী’, ‘নানারঙের বিজ্ঞান’, ‘আইনস্টাইন সুপারস্টার’, ‘সময়, তুমি কে?’ ইত্যাদি। বাংলা ১৪০১ সাল (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্যপুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবছর একজন নারী-সাহিত্যিককে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ-পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ-পর্যন্ত যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন, তারা হলেন- সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, নীলিমা ইব্রাহিম, দিলারা হাশেম, রাবেয়া খাতুন, সন্জীদা খাতুন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), নূরজাহান বেগম, রাজিয়া খান, রুবী রহমান, পূরবী বসু, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মকবুলা মনজুর, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, সালেহা চৌধুরী, নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, কাজী রোজী, নিয়াজ জামান, জাহানারা নওশিন, সোনিয়া নিশাত আমিন, বেগম আকতার কামাল, বেগম মুশতারী শফি ও আকিমুন রহমান।
×