স্টাফ রিপোর্টার ॥ নুসরাত হত্যাকান্ডর তদন্ত ও বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির ঘটনা আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হয়ে থাকবে। একটা নুসরাত হত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করেই আমরা নারীর প্রতি নিপীড়ন বন্ধ করতে না পারলেও অন্ততপক্ষে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের কাজটি শুরু করতে পারব। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের পেয়ে বসেছে। এই হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমতা ফিরিয়ে এনে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। এ হচ্ছে নুসরাত হত্যার সবচেয়ে বড় মেসেজ। মেসেজটি হচ্ছে কেউ যদি কোন নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটায় তাহলে তাকে সর্বোচ্চ সাজা গ্রহণে প্রস্তুত থাকতে হবে। সমাজ তাকে ক্ষমা করবে না। পক্ষপাতিত্বহীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আইনী প্রক্রিয়া বলবৎ রেখে এই মামলা পরিচালনায় সহায়তা করায় একটা ন্যায়বিচার এসেছে। এই বিচারের মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করে অসুস্থ মানসিকতা দূরের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে নারী নিপীড়ন প্রতিরোধ করা যাবে। রবিবার সকালে রাজধানীর এফডিসিতে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে ‘নিপীড়নবিরোধী জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা’র গ্র্যান্ড ফিনলে ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ‘নুসরাত হত্যার দ্রুত বিচার নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনবে’ শীর্ষক চূড়ান্ত এই ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সমান নম্বর পেয়ে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। প্রতিযোগিতায় রানারআপ হয় ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া। ‘সাহসিকা নুসরাত তুমিই যুক্তি তুমিই প্রতিবাদ’ এই স্লোগানে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও এটিএন বাংলা। আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের সাক্ষ্য আইন অনেক পুরনো, সেটাকে আধুনিক করার চেষ্টা হচ্ছে। ‘জাস্টিজ ডিলেড, জাস্টিজ ডিনাইড’ আবার ‘জাস্টিজ হারিড, জাস্টিজ বারিড’ দুটোই সত্য। বিচার বিভাগকে এই দুটি থিম লাইনের মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হয়। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন, এই স্বাধীনতায় সরকার হস্তক্ষেপ করেনা।
দিয়া ও রাজীব নিহত হওয়ার মামলার রায়ে আইনমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সড়ক পরিবহন আইন ও রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া ও রাজিব বাস চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলার রায় দুটোই সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে। রবিবার সন্ধ্যায় গুলশান আবাসিক অফিসে রাজধানীর বিমান বন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় জাবালে নূর পরিবহনের দুই চালক এবং একজন সহকারীকে আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দানের রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে একথা বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই মামলা দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে যা করণীয় তা করা হবে। এই মামলার পেপারবুক তৈরি হওয়ামাত্র উচ্চ আদালতে শুনানির তালিকায় আনার চেষ্টা করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, বিচারক আদালত এই মামলার আসামিদের সকল আইনী অধিকার দিয়ে এবং আইনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিচারকাজ শেষ করে আজ রায় দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য সড়ককে নিরাপদ করা এবং সড়ক পরিবহন আইনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করা। তিনি বলেন, এই মামলার বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে পেছনে ফেলার আরেকটা মাইলফলক পার হলাম।