ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্ধার ৪

ডিজে পার্টির নামে বিদেশে তরুণী পাচার চক্রের সন্ধান

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

 ডিজে পার্টির নামে বিদেশে তরুণী পাচার চক্রের সন্ধান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজে পার্টির নামে বিদেশে তরুণী পাচারের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয় এ ধরনের বেশ কয়েকটি আস্তানা। দীর্ঘ গোয়েন্দা নজরদারির ফলে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণাদি হাতে নিয়ে র‌্যাব তাদের ধরার জন্য মাঠে অভিযান চালিয়ে চার তরুণীকে উদ্বার করে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় ৬ পাচারকারীকে। শনিবার মধ্য রাতে এ অভিযান চালানো হয় রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে। এ বিষয়ে র‌্যাব-১১ মিডিয়া অফিসার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানান, রূপগঞ্জ থানাধীন তারাবো মোড় থেকে প্রথমে পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকা থেকে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট ও বিমানের টিকেটসহ চার তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। মানবপাচারে জড়িত একটি চক্রের ওপর দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারি করছিল। শনিবার রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিতিতে রূপগঞ্জের তারাবো মোড়ের শাহ চন্দপুরী রেস্টুরেন্টে চার তরুণীকে পাচারের উদ্দেশে একত্রিত করা হয়েছে এমন খবরে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পাচারকারী চক্রের তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট অনিক হোসেন (৩১), আক্তার হোসেন (৪০), পাসপোর্ট প্রস্তুতকারী দালাল আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ (৩৭) এবং দুবাইয়ের ড্যান্স ক্লাবের মালিক মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (৩০) ও আব্দুল হান্নানকে (৫২) গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যে খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মোঃ আকাশকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৭০টি পাসপোর্ট, নগদ এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২০০ পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমান টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর ও একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজতে থাকা চার ভিকটিম তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ১৫-২৫ বছর বয়সী সুন্দরী তরুণীদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে। এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ড্যান্স বারের মালিক, ট্র্যাভেল এজেন্সি জড়িত। নারী পাচারকারী এ সিন্ডিকেটের এজেন্টরা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের, পোশাক শিল্পের, ব্রোকেন ফ্যামিলির সুন্দরী তরুণীদের প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে থাকে। টার্গেটের পর প্রথমে তরুণীদের ছবি বিদেশে ড্যান্স বারের মালিকের কাছে পাঠানো হয়। ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যান্স বারের মালিক অথবা তার প্রেরিত প্রতিনিধি সরাসরি তরুণীদের নির্বাচনের উদ্দেশে ঢাকা অথবা আশপাশের কোন রেস্তরাঁ, হোটেল অথবা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাসে সাক্ষাত করে থাকে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট নারী পাচারকারী সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব পাসপোর্ট দালালের মাধ্যমে প্রস্তুত করে থাকে। ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের মাধ্যমে নথিপত্র ম্যানেজ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে এসব তরুণীকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, এসব তরুণী বিদেশে পৌঁছামাত্র এয়ারপোর্ট থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা রিসিভ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দী করে রাখত। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে এ সব তরুণীদের কোন অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছায় হোটেল তথা ড্যান্স বারের বাইরে যেতে দেয়া হয় না। প্রাথমিক অবস্থায় তরুণীরা আসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে রাজি না হলে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করা হয়। এভাবে দিনের পর দিন তরুণীদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চলতে থাকে। খদ্দেরের নির্দিষ্ট কোন তরুণীকে পছন্দ হলে ড্যান্স বারের মালিকের কাছে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে যেত। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদিকে রাজধানীতে আরও কয়েকটি গোপন আস্তানায় এ ধরনের তরুণীদের পাচারের লক্ষ্যে আটকে রাখা হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের উদ্ধারে র‌্যাবসহ পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।
×