ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণীত হয়েছে গাইডলাইন, দেখভাল করবে সরাসরি অধিদফতর

আধুনিক বিশ্বের আদলে গড়ে তোলা মডেল ফার্মেসি টিকছে না

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

 আধুনিক বিশ্বের আদলে গড়ে তোলা মডেল ফার্মেসি টিকছে না

নিখিল মানখিন ॥ অবৈধ ফার্র্মেসির ভিড়ে দাঁড়াতে পারছে না আধুনিক বিশ্বের আদলে গৃহীত মডেল ফার্মেসি প্রকল্পের বাস্তবায়ন। ইতোমধ্যে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি মডেল ফার্মেসি স্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে গাইডলাইন । বাস্তবায়ন করছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি মডেল ফার্মেসি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুমোদনহীন দোকানের ঠিকানা, বৈধ-অবৈধ যাচাই করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে ওষুধের দোকান। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চাপান বিড়ি, মুদিও দোকানেও দেদার বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। আর ফার্মেসি ওষুধ বিক্রেতাদের বেশিরভাগেরই নেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা। রাজধানীতেও এ সংখ্যা কম নয়। অবৈধ ওষুধের দোকান জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধের দোকানই চলছে অনুমোদনহীন। অবশ্য মডেল ফার্মেসি গড়ে তোলা ও পরিচালনা করা বেশ ব্যয়বহুল। তাই অনুমোদনহীন ও অবৈধ ফার্মেসির ভিড়ে মডেল ফার্মেসিগুলোর টিকে থাকাটা খুবই কষ্টকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি মডেল ফার্মেসি গড়ে তুলতে আনুষঙ্গিক অনেক কিছু ভাবতে হয়। ধানমন্ডিতে দু’টি এবং গুলশান ও বনানী এলাকায় পাঁচটি ফার্মেসিকে মডেল হিসেবে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি মডেল ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীধারী ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। এ ও বি দুই ক্যাটাগরির মডেল ফার্মেসির লাইসেন্স দেয়া হবে। এ ক্যাটাগরির মডেল ফার্মেসির আয়তন ১৫ ফুট ১০ ফুট এবং বি ক্যাটাগরির ফার্মেসির আয়তন হবে ১০ ফুট ৯ ফুট। মডেল ফার্মেসিগুলোতে ক্যাটাগরি (এ ও বি) অনুযায়ী ওষুধ রাখার অনুমতি দেয়া হবে। কোল্ড চেন অনুসরণ করে ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। সাধ্য মোতাবেক কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুব্যবস্থা করতে পারেন। এসব ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা হবে না। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বিক্রীত ওষুধের হিসাব রাখতে হবে। অপরদিকে অনুমোদনহীন ও অবৈধ ফার্মেসিগুলো চলে নিয়ন্ত্রণহীন। তাদের ফার্মেসিতে বাকিতে ওষুধ সরবরাহ করে ওষুধ কোম্পানিওয়ালারা। ওষুধ সংরক্ষণের জন্য ফার্মেসির অবকাঠামো নিয়ে তাদের ভাবতে হয় না। দিতে হয় না সরকারী কর। স্থানীয় চক্রকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে খুশি করেই পার পেয়ে যায় এসব অবৈধ ফার্মেসি। সারাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধের দোকান চলছে এভাবেই অনুমোদনহীন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমিন জানান, বর্তমানে দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসির সংখ্যা এক লাখ ২১ হাজার। তবে লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি রয়েছে ১৯ হাজার ৮শ’। অধিদফতরের কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে ফার্মেসি পরিদর্শন করে লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসিগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর জানায়, বর্তমানে সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট দিয়ে এসব ফার্মেসি পরিচালিত হচ্ছে। তারা ফার্মেসি কাউন্সিলের অধীনে সপ্তাহে একদিন করে আট সপ্তাহের ক্লাস ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সি ক্যাটাগরির লাইসেন্স পাচ্ছেন। তবে ফার্মেসি কাউন্সিলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এ কোর্সের মেয়াদ ছয় মাস করার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সরকারী তালিকাভুক্ত ৯৫ হাজার ফার্মেসির মধ্যে ৬০ হাজারের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান বন্ধে জোরালো অভিযান শুরু হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের দোকানগুলো সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন অভিযান টিমের সদস্যরা। ওসব ফার্মেসি মালিকরা গত দু’ থেকে ৫ বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন না করে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ বর্তমানে দেশে মাত্র ৩৫ হাজার ফার্মেসি বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আর অননুমোদিত ফার্মেসির সংখ্যা সোয়া লাখ ছাড়িয়ে যাবে। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের দোকানগুলো সামাল দেয়ার পর অননুমোদিত, অবৈধ দোকানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে ওষুধ ও খাবারের নকল বন্ধে বেশ কিছু দিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। ভেজাল ওষুধের কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। সীমিত জনবল ও সম্পদ নিয়ে সরকারের একার পক্ষে কাজটি করা দুরূহ। এ লক্ষ্যে ওষুধ প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে জেলা পর্যায়ের অফিসকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এমনও দেখা যায় শাস্তি পাওয়ার পরও পুরান ভেজাল ব্যবসায়ীরা আবারও একই অপরাধ করছে। এ অবস্থা প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। দেশের বড় বড় বিখ্যাত হাসপাতাল ও দোকানে যদি ভেজাল ও অননুমোদিত ওষুধ পাওয়া যায় তবে দেশবাসী কোথায় যাবে? দেশবাসীকে বাঁচাতে প্রকৃত ব্যবসায়ীদেরকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। নকল ও ভেজাল ওষুধ ঠেকাতে দোকানে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিক্রি বন্ধে জনমত সৃষ্টির উপরও গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফার্মেসি চালাতে অবশ্যই ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু এসব দোকান কোন নিয়মই মানে না। স্বল্প শিক্ষিত লোকজন লাইসেন্স ও অনুমোদন ছাড়াই ফার্মেসি খুলে দেদার ওষুধ বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। ফার্মেসির লাইসেন্স গ্রহণ ও পরিচালনার পূর্বশর্ত হলো ফার্মেসি পরিচালনার জন্য বাধ্যতামূলক কমপক্ষে সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। কিন্তু রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ফার্মেসিগুলোয় ন্যূনতম প্রশিক্ষণবিহীন কথিত ফার্মাসিস্ট দিয়েই চলছে। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামগঞ্জে অবৈধ ফার্মেসির সংখ্যা অনেক বেশি। এসব ফার্মেসি চালাচ্ছেন স্বল্প শিক্ষিতরা। যাদের অধিকাংশেরই প্রশিক্ষণ ও ফার্মেসির কোন লাইসেন্সও নেই। রাজধানীতেও এ সংখ্যা নেহাত কম নয়। বাংলাদেশ কেমিস্ট এ্যান্ড ড্রাগিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ জানান, দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধের দোকান চলছে অনুমোদনহীন। এগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এন্টিবায়োটিক, ঘুম ও নেশাজাতীয় ওষুধ।
×