ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনা পাড়ের ক্রসবারে বিনোদন

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 যমুনা পাড়ের ক্রসবারে বিনোদন

সোনা রোদে চিক চিক করছে যমুনা পাড়ের ক্রসবার। যমুনা পারের এই ক্রসবার বিকেলের সূর্য্যরে আলোতে এক অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আহ্, সে এক অপূর্ব ঝলমলে পরিবেশ। দূরের কাশবন, আকাশে সাদা মেঘপুঞ্জ ভেসে বেড়ানোর দৃশ্যও হার মানায় ক্রসবারে সূর্য্যরে আলো বা সোনা রোদ। আবার পড়ন্ত বিকেলে প্রতিদিনের মতো ক্রসবার মিশে যায় আধারের অতলগর্ভে। সোনা রোদ দেখে মনে পড়ে যায় ছোটবেলার কথা। শিশু কিশোররা উন্মুক্ত মাঠে, বাসার ছাদে রোদ পোহাতো। শরত, হেমন্ত কিংবা শীতের শুরুতে বাড়ির উঠানে সোনা রোদে পাটি কিংবা পিঁড়িতে বসিয়ে মা-খালা, ফুপু, চাচি-দাদিরা পিতলের বাটিতে সরিষার তেল নিয়ে শরীরে মেখে দিতেন। এই তেল মাখানো যে শরীরে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের জোগান দিত তা আমরা বুঝতাম না। তবে এখন বুঝি। কিন্তু সময় অনেক পাল্টে গেছে। এখনকার শিশু কিশোররা সোনা রোদের দেখা পায় না। শরীরে তেল মাখানোর সময়ও পায় না। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে মা-বাবা অথবা পরিবারের অন্য কোন সদস্যের সঙ্গে বই-খাতার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যায়। কখন সূর্য উঠে, বা কখন সূর্য ডুবে যায় তা অনেক শিশু কিশোর জানেই না। আজকের রোজকার ব্যস্ততায় না আছে রোদ, না আছে সময়। সকাল থেকে স্কুল-কলেজ, টিউশন, নয়তো অফিসে ঢুকে এসির শীতল বাতাস। আসতে-যেতে যেটুকু বা রোদ গায়ে লাগে, তাও দামি সানস্ক্রিনে ঢাকা। ফলে ত্বক কিছু বাঁচল বটে, কিন্তু শরীরে আরও বড় কিছু হারাচ্ছি না তো? প্রশ্ন থেকেই যায়। যমুনাপারের এই ক্রসবার মানুষের বিনোদনের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত নদী খনন প্রকল্পের অধীনে যমুনা নদী খনন করে অপসারিত বা উত্তোলিত বালু মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ক্রস বার। যমুনা নদীর বুক চিরে আড়াআড়িভাবে নির্মাণ করা এই ক্রসবার এখন সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য আশীর্বাদ। শহর বরাবর আড়াই কিঃমিঃ হার্ডপয়েন্টসহ সিরাজগঞ্জকে যমুনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করছে। ‘প্রতিদিন সূর্য ওঠে তোমায় দেখবে বলে।’ সূর্য ডুবে যায়। দূরে বিন্দু বিন্দু তারার মতো জেগে থাকে সিরাজগঞ্জ শহর। অদূরে যমুনা নদীর ওপর স্থাপিত দেশের দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু সেতু। সেতুর ওপর দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে ছোট বড় যানবাহন যাচ্ছে। যানবাহনের হাইভোল্টের আলো যেন টিপ টিপ তারার মতো জ্বলতে দেখা যায়। এছাড়াও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। যমুনায় ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলে ছুটে চলেছে পণ্যবাহী নৌকা। নদীর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পাড়ে। পড়ন্ত বিকেলে প্রতিদিনের মতো ক্রসবার মিশে যায় আধারের অতলগর্ভে। -বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে
×