ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুদ্ধি অভিযানের সাফল্য নিয়ে সর্বত্র আশাবাদ

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 শুদ্ধি অভিযানের  সাফল্য নিয়ে  সর্বত্র আশাবাদ

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ক্ষমতায় আসীন থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নিজ দলের অভ্যন্তর দিয়ে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তা দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে। সচেতন মানুষের পক্ষে এ ঘটনাকে শুদ্ধ একটি পদক্ষেপ হিসাবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী দলের অভ্যন্তরে থেকে যারা বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে অভিযান। শুরুতে দলের যুব সংগঠন যুবলীগের কতিপয় কেন্দ্রীয় নেতাদের সক্রিয় সংশ্লিষ্টতায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ক্যাসিনো বাণিজ্য উদঘাটিত হয়েছে। এর সঙ্গে আরও উদঘাটিত হয়েছে দেশের কতিপয় টেন্ডার কিংয়ের কর্মকান্ডও। জব্দ হয়েছে ক্যাসিনোসহ জুয়ার সামগ্রী, বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, অস্ত্র, মদ সঙ্গে নারী ব্যবসার সংশ্লিষ্টতা। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে নামী দামী ক্লাবে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এতে বেরিয়ে এসেছে সরকারী দলের সঙ্গে জড়িতদের একটি অংশ এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং মূল কালপ্রিট। আবার এদের অধিকাংশ যুবলীগের নেতা। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা দেশে এই প্রথম। সরকারে আসীন থাকলে দলের ব্যানারে নেতা কর্মী ও ক্যাডাররা বেপরোয়া যে হয়ে উঠে তা অতীতে বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রমাণিত সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু কখনও এ ধরনের শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হয়নি। ফলে দেশের মানুষ ইতোমধ্যে আশায় বুক বেঁধেছেন। যেহেতু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে এ অভিযান চলছে বলে দলের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান দিয়েছেন। ফলে ভবিষ্যত আঁচ করতে পেরে সরকারী দল এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর চিহ্নিত কালপ্রিটদের কেউ কেউ গা-ঢাকা দিয়েছেন, কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আর যারা দেশে আছেন তাদেরও খুব বেশি প্রকাশ্য দেখা যাচ্ছে না। এরা সকলেই রয়েছেন অজানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। অপরদিকে, ক্যাসিনো সামগ্রীযুক্ত ক্লাবগুলোতে অভিযান শুরু হওয়ার পর যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। ক্যাসিনোর যেসব গডফাদার ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন রিমান্ডে থেকে তারা যে তথ্য দিচ্ছেন তাতে সরকারের মন্ত্রী, পদস্থ আমলাসহ অনেকের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যারা ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রমরমা জুয়ার আসর থেকে নিয়মিত বিপুল অঙ্কের বখরা গ্রহণ করেছেন তারা এখন তটস্থ অবস্থায় রয়েছেন। ইতোপূর্বে মন্ত্রী ছিলেন-এখন নেই, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন-এখন অবসরে গেছেন, এছাড়া সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন কিন্তু বড় কোন পদ পদবি নেই এমন অনেকেই এ ক্যাসিনো বাণিজ্য থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা পেয়েছেন। যা রিমান্ডে গ্রেফতারকৃতরা প্রকাশ করে দিচ্ছে। ফলে উৎস্যুক মহল আশায় বুক বেঁধেছে এই বলে যে, সরকারী দলের অভ্যন্তরে মুখোশধারীদের মূল চেহারা এখন বেরিয়ে আসছে। পাল্টে যাচ্ছে খোলনলচে। বর্তমান এমন একটি সময়ে সরকার প্রধানের নির্দেশে এ অভিযান শুরু হলো যা সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই কাক্সিক্ষত ছিল। কেননা, অতীতের মতো বর্তমানেও সরকারী দলে নাম লেখাতে পারলেই তার কপাল খুলে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি থেকে শুরু করে হেন কোন অপকর্ম নেই এদের একটি অংশ যুক্ত হচ্ছে না। একেকটি এলাকা একেক নেতার নেতৃত্বে একেক গ্রুপের হাতে। ফলে সাধারণ মানুষ রীতিমতো জিম্মি হয়েই দিনাতিপাত করে আসছে। অথচ, বর্তমান সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ এমন আশা কখনও করেনি। কিন্তু গুটিকয়েক নেতা নামধারীর কারণে দলের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোদ শেখ হাসিনার নির্দেশে দলীয় অভ্যন্তর দিয়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করার ঘটনা আগ্রহী সকলের মনে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, নিজ দল দিয়ে শুরু করে শেখ হাসিনা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করতে চান। সরকারী নীতি নির্ধারক মহলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করেই তিনি এ কাজে হাত দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানরত অবস্থায় রয়েছেন। দেশে ফিরে আসার পর অভিযানের ফলাফল পর্যালোচনা করে তিনি কি নির্দেশনা প্রদান করবেন তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে নানা জিজ্ঞাসা রয়েছে। যারা এ অভিযানের সফলতা চায় তারা বিষয়টি আরও জোরালোভাবে চাচ্ছেন। আর যারা অভিযুক্ত তারা জীবনের তরে নিদারুণ এক উদ্বেগ উৎকণ্ঠার অতলগহ্বরে তলিয়ে আছেন। দলের ব্যানারে থেকে বহু কালপ্রিট এখনও অধরা। এদের শক্তভাবে মোকাবেলা করা গেলে তা হবে অনন্য একটি দৃষ্টান্ত। ইতোমধ্যে বেরিয়ে এসেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় নামীদামী ক্লাবগুলোকে জুয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে। জুয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ক্যাসিনো। এ ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সকলেই বর্তমান সরকারী দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এরা ভোল পাল্টিয়েছে। আগে ছিল বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ফ্রিডম পার্টির। এদের অফিস, ক্লাব এবং বাসাবাড়ি এবং এদের কর্মচারীদের আবাসস্থল থেকে যেভাবে টাকা উদ্ধার হচ্ছে তাতে এগুলো এক একটি টাকার খনি বললেও ব্যত্যয় হবে না। ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষ শুদ্ধি অভিযানকে শুদ্ধ আখ্যা দিচ্ছে। সূত্র মতে, এ ধরনের অভিযান দলমত নির্বিশেষে কাক্সিক্ষত ছিল। অতীতে বিভিন্ন দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও এ ধরনের অভিযানে হাত দেয়নি। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক বিষয় বুঝে শুনে এ কাজে হাত দিয়েছেন বলে দলীয় বিভিন্ন সূত্রের অভিমত। তাদের মধ্যে তিনিই বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা রিপোর্ট যাচাই করেছেন, দলীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন, জনমতের প্রতিফলন নিয়ে চিন্তা করেছেন, সামাজিক চিত্র অনুধাবন করেছেন। এরপরই এ ধরনের অভিযান শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন। যা সময়োপযোগী একটি বড় ধরনের সিদ্ধান্ত হিসাবে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে।
×