ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছেঁড়াফাটা টাকা ফেলে দেয়া নিয়ে তিল যেভাবে তাল-

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ছেঁড়াফাটা টাকা ফেলে দেয়া নিয়ে তিল যেভাবে তাল-

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ এত কা- ঘটতই না। সাধারণের অহেতুক কৌতূহলেরও সৃষ্টি হতো না। গুজবের শাখা-প্রশাখা মেলতো না। বাধ সাধল বগুড়া পৌর কর্তৃপক্ষ। কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই পৌরসভার একজন মোটর ড্রাইভার গার্বেজ ট্রাকে করে বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার ব্যবহার অযোগ্য বাতিল ঘোষিত শ্রেডেড ও পাঞ্চড (বিশেষ যন্ত্রে কেটে টুকরো করা) কারেন্সি নোটের বস্তাগুলো ফেলে দেয় খারুয়া বিলের ব্রিজের নিচে। গ্রামের লোকজন পড়ে থাকা ছেঁড়া ও খ-িত টাকার স্তূপ দেখে অবাক হয়। ব্যাস হয়ে গেল। গুজবের ঢাকে বাদ্যি বেজে ছড়িয়ে পড়ল গ্রাম হয়ে শহরে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের তরঙ্গ প্রবাহিত হয়ে যা হয় তাই হলো। মিডিয়া কর্মীরা পেয়ে গেল ব্রেকিং নিউজ। জানলো বিশে^র মানুষ। তিল কিভাবে তাল হয় তার উপমা পেল সাধারণ জন। বহু হাতে ব্যবহার হওয়া কারেন্সি নোটগুলো একসময় নরম, ময়লা ও ছেঁড়াফাটা হয়ে যায়। জেলা শহরে ও উপজেলায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এইসব নোট সংগ্রহ করে। সাধারণ মানুষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে এইসব নোট জমা দিয়ে বিনিময়ে নতুন নোট নেয়ার ঝক্কি ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে শহরের নোট সংগ্রাহকদের কাছে কিছু কমিশন দিয়ে বিনিময় করে। সংগ্রাহকরা নম্বর ঠিক থাকা এইসব জীর্ণ টাকা কাগজে পেস্ট করে। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এই টাকা জমা দিয়ে ফ্রেশ নোট নেয়। কেউ ব্যাংকগুলোতে নিজের হিসাবে পুরাতন ও নরম হওয়া নোট জমা দেয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আন্তঃযোগাযোগে সকল নোট কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। ব্যবহার অযোগ্য নোটগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধ্বংস ও বাতিল করার জন্য অনুমতি ও নির্দেশনা চায় উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে। সর্বোচ্চ মহল দিক নির্দেশনা দেয়। কত নোট বাতিল হলো তার হিসাব থাকে। বাতিল ও ব্যবহার অযোগ্য নোট আগে শ্রেডেড ও পাঞ্চিং কাটের (কেটে টুকরো) পর চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলা হতো। দেশে পরিবেশ আইন কার্যকর হওয়ার পর এইসব টাকা পুড়িয়ে ফেলতে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি সামনে আনা হয়। প্রতিটি নোট বহু হাতে বিনিময় হয়। হাটে বাজারে তরিতরকারির দোকান, মাছ মাংসের ব্যবসায়ীসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে টাকা নানাভাবে হাত বদল হয়। এইসব টাকায় রোগ জীবাণু লেগে থাকাও বিচিত্র নয়। কেউ আবার আঙ্গুলে থুথু নিয়ে টাকা গোনে। কারও লুঙ্গিতে গুজানো থাকে। কেউ টাকায় নানা ধরনের কালিতে নাম লেখে ছবি আঁকে। নানাভাবে টাকার সঙ্গে রাসায়নিক যৌগ যুক্ত হতে থাকে। কারেন্সি নোট তৈরিতে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক যৌগের মোটা কাগজ থাকে এবং প্রিন্টেও যুক্ত হয়। বাতিল টাকা চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলার সময় দূষিত ধোঁয়া নির্গত হয়। চুল্লির আশপাশে বসতি থাকলে তার প্রভাব পড়ে মানুষের শ^াস-প্রশ^াসে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ ধরনের ব্যবহার অযোগ্য নোটগুলোর মধ্যে এক টাকা থেকে ৫০ টাকা মুদ্রামানের নোট বিশেষায়িত চুল্লিতে পোড়ানো হবে। ছাই (বর্জ্য) ডাস্টবিনে ফেলা হবে। ১০০, ৫০০ ও ১০০০ হাজার টাকার মুদ্রামানের বড় আকৃতির কারেন্সি নোট শ্রেডিং ও পাঞ্চ কাটের (কেটে টুকরো) পর বস্তায় ভরে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার সহযোগিতায় ভাগাড়ে ডাম্পিং করা হবে। তিন কর্মচারীকে শোকজ ॥ বগুড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বাতিল করা টুকরো টাকা নির্ধারিত ডাম্পিং স্থানের পরিবর্তে ১৫ কিলোমিটার দূরে জালশুকা খারুয়ার বিলে ফেলায় বগুড়া পৌরসভার তিন কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। তারা হলেন পৌরসভার বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা রফিউল আবেদীন, সুপারভাইজার মামনুর রশীদ ও আমিরুল ইসলাম। পৌর মেয়র মাহবুবর রহমান জানান, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে। উত্তর সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×