ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গান কবিতায় ছায়ানটের রবীন্দ্র স্মরণ

প্রকাশিত: ১১:১৭, ৭ আগস্ট ২০১৯

গান কবিতায় ছায়ানটের রবীন্দ্র স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঙ্গলবার বাইশে শ্রাবণ দিনটি ছিল রবীন্দ্রময়। নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম প্রয়াণবার্ষিকী। সেসব আয়োজনে শহর ঢাকায় ভর করেছিল স্নিগ্ধতা। বহুমাত্রিক আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হয়েছে বিশ্বকবিকে। এসব আয়োজনে আপন সৃষ্টির ঐশ্বর্যে আবির্ভূত বাঙালীর নিত্যদিনের সহচর এই কবি। শ্রাবণ সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে তেমনই এক অনুষ্ঠানের আয়োজন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। রবীন্দ্র ঐশ্বর্যময় সৃষ্টির আলোয় সাজানো ছিল সে স্মরণানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি উপভোগে ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে ভিড় জমিয়েছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমীরা। কবিগুরুর বহুমাত্রিক সৃষ্টিসম্ভারে সজ্জিত সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানটি প্রশান্তি ছড়িয়ে শ্রোতা-দর্শকের অন্তরে। সে আয়োজনে পঠিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ। পরিবেশিত হয়েছে কাব্যনাট্য থেকে গীতিনাট্য। ছায়ানটের শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠশীলনের শিল্পীদের সম্মিলনে পরিবেশনা পর্বটি হয়ে ওঠে দারুণ উপভোগ্য। গদ্য-পদ্য ও সঙ্গীতের সমন্বয়ে দুটি পরিবেশনা উপস্থাপন করে কণ্ঠশীলন। পাঠ করা হয় ধর্ম ও দেশপ্রেম নিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ। শিল্পিত উচ্চারণের সঙ্গে সুরের আশ্রয়ে কবিতা ও সঙ্গীতের সংযোগে উপস্থাপিত হয় ‘আমি তোমায় ছাড়ব না মা’ শীর্ষক পরিবেশনা। এটি পরিবেশন করেন প্রদীপ আগরওয়ালা, ফারহানা নিশাত সেহেলী, নাফিসা কেয়া, সাহেরা, ইসরাত জাহান ও আসিফ চৌধুরী। এরপর ছিল কণ্ঠশীলন পরিবেশিত কাব্যনাট্য ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদ’। এতে অংশ নেন শামীমা নাজনীন ও জহিরুল হক খান। ছায়ানটের শিল্পীরা পরিবেশন করেন গীতিনাট্য শ্যামা। এরপর অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। সবাই মিলে গেয়ে ওঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। জাতীয় সঙ্গীতের সুরে শেষ হয় বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের এ আয়োজন। পাঠে সঙ্গীতে হিরোশিমার ভয়াবহতা ॥ ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট অবিশ্বাস্য ও ভয়ঙ্কর নারকীয় কা- দেখেছিল বিশ্ববাসী। মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করে প্রথম পারমাণবিক বোমা ফেলা হলো জাপানের হিরোশিমায়। এর তিনদিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়বারের মতো পারমাণবিক হামলা চালায় নাগাসাকিতে। লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির সঙ্গে পঙ্গুত্ববরণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হলো অজস্র মানুষ। অবকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি নষ্ট হলো দেশটির পরিবেশ ও ভূ-প্রকৃতি। হিরোশিমা দিবসের সেই ভয়াবহতাকেই তুলে ধরা হলো পাঠে ও গানে। শান্তির সপক্ষে হিরোশিমা দিবসে স্মরণ করে আহ্বান জাননো হলো পৃথিবীতে যেন আর কোন দিন এমন ঘটনা না ঘটে। মঙ্গলবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে হিরোশিমা দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ‘শান্তির সপক্ষে আমরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে রাজধানীর কয়েকটি বিদ্যালয়ের একঝাঁক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আয়োজনের বিশেষ একটি পর্বে কথা বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি। সূচনা বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব রবিউল হুসাইন। আরও বক্তব্য রাখেন হিরোশিমার কাহিনী নিয়ে এলেনর কোয়ের রচিত ‘সাদাকো এ্যান্ড দ্য সাউজেন্ড পেপারস ক্রেইনস’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদক ছন্দা মাহবুব। হিরোইয়াসু ইজুমি বাংলায় তার বক্তব্যে বলেন, হিরোশিমাতেই আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। আমি সেই সময়ের অনকে ঘটনা শুনেছি এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি যে পৃথিবীতে আর এমন ঘটনা ঘটতে দেয়া যাবে না। আগামী প্রজন্ম যারা নেতৃত্ব দেবে তাদের জন্য আমরা সবসময় প্রার্থনা করি যেন কখনই তাদের আর এমন কিছু দেখতে না হয়। জাপান থেকে অনেক দূরত্বে অবস্থান করেও বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের শিশুরা যে হিরোশিমা দিবসকে স্মরণ করে তার জন্য সকলের প্রতি আমাদের ভালবাসা। হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমাবর্ষণে অযুত মানুষের প্রাণনাশ ঘটে এবং পরবর্তীকালে পারমাণবিক বিকিরণে আরও অনেকের সঙ্গে কিশোরী সাদাকো সাসাকিরও জীবনাবসান হয়। সাদাকো স্মরণে কাগজ কেটে সাদা সারস বানিয়ে বিশ্বব্যাপী কিশোর-কিশোরীরা শান্তির সপক্ষে হিরোশিমা দিবস পালন করে। সাদাকো-এর এই কাহিনী থেকে অনুষ্ঠানে কিছু অংশ পাঠ করে ভাসানটেক স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার, সাথী আক্তার সুমা ও তাসমীম আফরীন। আর বাংলায় লেখা ‘কাগজের হাজার সারস’ উপন্যাস থেকে পাঠ করে সেনাপল্লী হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ, মোঃ মিরাজ, মোঃ বখতিয়ার, শান্ত ইসলাম, মোঃ মোয়াল্লেম, মোঃ শাহারিয়ার, মোঃ আঁকন, ভাসানটেক স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া রহমান আশা ও সাবিকুন নাহার মিনা। অনুষ্ঠানের শেষে ছিল আলী হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ভাসানটেক স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত পরিবেশনা। তারা শান্তির প্রতীক সাদা সারস তৈরি করে জাদুঘর-অঙ্গন সাজায়ও।
×