ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জের খামারিরা প্রস্তুত ॥ বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা

প্রকাশিত: ০৯:১১, ৩ আগস্ট ২০১৯

 কেরানীগঞ্জের খামারিরা প্রস্তুত ॥ বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা

সালাহ্উদ্দিন মিয়া, কেরানীগঞ্জ ॥ আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গরুর খামারে গরু মোটা-তাজা করণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খামারিরা। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের আওতায় ছোট-বড় মোট ৫৮০ খামারির ৬৪৫০ গরু দিন-রাত সারাক্ষণ নিরলস পরিশ্রমে মোটা-তাজা করণের কাজ করছে দেশীয় পদ্ধতিতে। পাশাপাশি কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে খামারিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এতে খামারিরা বিষাক্ত ওষুধ ও ইনজেকশন ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে গরু মোটা-তাজা করণ পদ্ধতি শিখছে। কেরানীগঞ্জে ৫৮০ খামারির খামারসহ রয়েছে আরও ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের খামার। এসব খামারে দুই/তিন বছর আগে থেকেই গরু লালন পালন করা হয় কোরবানির জন্য। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে ৭/৮ মাস আগে থেকে ব্যাপক কার্যাবলি হাতে নেয় গরু মোটা-তাজাকরণের জন্য। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে শুধু দানাদার খাবার, জাউ ও ঘাস দিয়েই গরু মোটা-তাজাকরণ করা হয়। অনেক খামারিই খামারের পাশে জাম্বু ঘাস ও মেফিয়ারি ঘাসের চাষও করছে গরুকে খাওয়ানোর জন্য। সরকারী সহায়তায় পশু ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের টিকা ও ভ্যাকসিন দেয়াতে রোগমুক্ত গরু পালনে সক্ষম হওয়াতে সন্তুষ্ট কেরানীগঞ্জের খামারিরা। বর্তমানে এসব খামারে দেশীয় গরুর ব্যাপক মজুদ রয়েছে। কিছু দিন আগে সরকার একটি সিদ্ধান্ত কোরবানির আগে ইন্ডিয়া থেকে গরু প্রবেশের নিষেধাজ্ঞাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জের খামারিগণ। ক্রেতারা উৎসব আমেজে গরু কেনার জন্য বিভিন্ন খামারে ঘুরছে। এক থেকে দেড় বছর কোরবানির গরু লালন পালন করা হয় দেশীয় পদ্ধতিতে। গমের ভূষি, ধানের কুড়া, ভুট্টা, বুট, মুগ ও লাউ দিয়ে জাউ পাকানো হয় আর খড় ও বিভিন্ন ধরনের ঘাস, কচুরিপানা ও কমলিলতা খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন দু’বেলা গরু প্রতি ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা খরচ লাগে। সরকারী ডাক্তার এসে চিকিৎসা দিয়ে যায়, দরকার হলে ফোনেও সমস্যা সমাধান করে দেয়া হয়। আর মূলত এসব কারণেই ক্রেতারা খামার থেকে গরু কিনতে আগ্রহী হচ্ছে। খামার থেকে গরু কিনতে আসা ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা খোকন বলেন, আসলে হাটে সাধারণত বড় গরু পাওয়া যায় না, তাই খামার থেকে গরু কিনতে এসেছি। এছাড়াও খামার থেকে গরু কেনাটা নিরাপদ ও বিশ্বস্ত মাধ্যমও মনে করছি। তাই খামারে গরু কিনতে এসেছি। ফিড এ্যান্ড ফ্রেস এ্যাগ্রোর মালিক আকবর আলম উৎপল জানান, ইন্ডিয়ান গরু বাংলাদেশে এখনো আসেনি কিন্তু যদি আসে তবে আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। বর্তমানে খামার থেকে গরু কিনতে ক্রেতারা অনেক আগ্রহী আর এর কারণ আমরা স্কেলে মেপে ও বিক্রির পরও দায়বদ্ধতা নিচ্ছি। তাই ক্রেতাও সন্তুষ্ট। তিনি আরও জানান, ২০১৪ সালে ১টি গরু নিয়ে আমার যাত্রা শুরু বর্তমানে ১৫০টি গরু আছে। কোরবানিকে কেন্দ্র করে আরও ৪০০ গরু ১ বছর আগে থেকে দেশীয় পদ্ধতিতে মোটা-তাজাকরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১০০’র বেশি বিভিন্ন জাতের ছাগল রয়েছে। সাউথ আফ্রিকান বোয়াল, ইন্ডিয়ান ও পাঞ্জাবী বিটল, বারবারি ও গারল ছাগল রয়েছে। এসব গরু ও ছাগলের ওজন মেপে দাম ধরা হয়। ৪০০ থেকে ১২০০ কেজির ওজনের গরুর দাম পড়ে ২ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা। ১০০ কেজি ওজনের ছাগলের দাম পড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১ টি গারলের দাম পড়ে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখানে যে পরিমাণ গরু লাগে তা আমাদের কাছে স্টকে আছে। যদি ইন্ডিয়া থেকে গরু না আসে তবে আমরা অনেক লাভবান হব। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জহির উদ্দিন জানান, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জ উপজেলা ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৮০ জন খামারির ৬৪৫০ গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ করা হয়েছে। এসব খামারের সকল প্রাণীকে বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকা প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের নিরাপদ গরুর মাংস উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। স্যাস্পল হিসাবে ২৫ খামারের ৭৫ গরুর ইউরিন টেস্ট নিয়ে ল্যাবে পাঠিয়ে ক্ষতিকর ফিট বা স্টরেট আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। চট্টগ্রামে আসছে পশু স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গবাদি পশু আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর হাটগুলোতে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ট্রাকযোগে প্রতিদিনই আসছে গরু। কয়েকদিনের মধ্যেই জমে উঠবে পশুর হাট। প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। বাজার ঘিরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চট্টগ্রাম মহানগরীতে অনেকগুলো পশুরহাট বসলেও বরাবরের মতো এবারও প্রধান আকর্ষণ সাগরিকা ও বিবিরহাট। এ দুটি বাজারে প্রচুরসংখ্যক গবাদি পশুর সমাগম হয়ে থাকে। এবারও যে তার ব্যতিক্রম নয়, তা এখন থেকে অনুমেয়। বিভিন্ন জেলা থেকে শহরে ঢুকছে শত শত গরু বোঝাই ট্রাক। এবার দেশী গরুতেই কোরবানির পশুর চাহিদা মিটবে বলে আশা করছে বেপারিরা। বাজারের গরু ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত কয়েকবছরে ভারত থেকে গরু আমদানি কমে যাওয়ায় দেশেই অনেক খামার গড়ে উঠেছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে গরু লালন-পালন করে থাকে। দেশে যে পরিমাণ গবাদি পশু প্রস্তুত হয়েছে তাতে করে সঙ্কট হবে না। বগুড়া, রংপুর, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের গরু। চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে মীরসরাই, সীতাকু-, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, ফটিকছড়িসহ সকল উপজেলাতেই বেড়েছে পশু পালন। বিশেষ করে ভারতীয় গরু কমে যাওয়ায় একটু লাভের আশায় খামারিরা পশু পালনে মনোযোগী হয়েছেন। এই ধারাবাহিকতা থাকলে কয়েকবছরের মধ্যে পশুর চাহিদা মেটাতে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। চট্টগ্রাম জেলা পানি সম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতবছর চট্টগ্রামে পশুর চাহিদা ছিল সাড়ে ৬ লাখের কিছু বেশি। প্রতিবছরই কোরবানি দাতার সংখ্যা বাড়ছে। সে হিসাবে এবার পশুর চাহিদা ৭ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। জেলায় ছোট বড় খামারগুলোতে যে পরিমাণ পশু প্রস্তুত রয়েছে তাতে করে চাহিদা মেটাবার মতো পশু পাওয়া যাবে। বিদেশী গরুর প্রয়োজন তেমন হবে না। তারপরও ভারত ও মিয়ানমার থেকে কিছু গরু কোরবানির হাটে আসবে। ফলে দাম সহনশীল অবস্থাতে থাকবে। চট্টগ্রাম মহানগরীর কয়েকটি বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এখনও বেচাকেনা নেই। শহরে গরু রাখার সমস্যা থাকায় একেবারে শেষ পর্যায়েই জমে উঠে পশুর হাট। তাছাড়া এখন বর্ষাকাল। সে কারণে এবারও পশুরহাট জমতে আরও কটা দিন সময় নেবে। মূলত কোরবানির ঈদের তিনদিন আগ থেকে শুরু হবে পশু বেচাকেনা। এদিকে, কোরবানির হাটকে ঘিরে বরাবরের মতো এবারও ছিনতাইকারী ও দুস্কৃতকারীদের উৎপাতের আশঙ্কা করছেন বেপারীরা। এখন থেকেই বিভিন্ন ছিনতাইকারী গ্রুপের তৎপরতাও লক্ষণীয়। ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিনতাইকারী চক্রের সন্ধানে মাঠে নেমেছে। প্রতিটি কোরবানির হাট ঘিরে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। পশু ব্যবসায়ীরা চাইলে পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারেন বলে জানিয়েছে সিএমপি। কোরবানির হাটে যেন জাল টাকার ব্যবহার সম্ভব না হয় সে কারণে শনাক্তকরণ মেশিনও স্থাপন করা হচ্ছে।
×