ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গুর কারণে দুর্গত এলাকা ঘোষণা দাবি জাসদের

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গুর কারণে দুর্গত এলাকা ঘোষণা দাবি জাসদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানীসহ সংলগ্ন অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠনের দাবিও জানিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার জাসদ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি একটি জাতীয় বিপদ ও দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাই জাসদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ অনুযায়ী ডেঙ্গুকে আপদ এবং দুর্যোগ ঘোষণা করা, ঢাকাসহ সংলগ্ন অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিঙ্গাপুর, কলকাতা, ফিলিপিন্স, চীনের অভিজ্ঞতা সরকারকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে অবিলম্বে ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোর্চিং সেন্টারে ছুটি দেয়ারও দাবি জানান শিরীন আকতার। জুলাই মাসজুড়ে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। জানুয়ারি মাস থেকে জুন পর্যন্ত সারাদেশে যে পরিমাণ আক্রান্ত হয়েছে এর কয়েকগুণ বেশি হয়েছে জুলাই মাসে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৭১২ জন। ঘণ্টায় গড়ে আক্রান্ত হচ্ছে ৭১ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে। সরকারীভাবে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ জন বলা হলেও বেসরকারীভাবে এই সংখ্যা ৪০ এর বেশি বলা হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় পাওয়া গেছে ডেঙ্গু রোগী। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন শেষে ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদ বলছে, রাজধানীসহ চারপাশে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে। যা বিগত ১৯ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এই প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার বিকল্প নেই। শিরীন আকতার বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ডেঙ্গুতে মানুষের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। খোদ রাজধানীতেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা ও হিমশিম অবস্থা চলছে। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সামর্থ্যরে অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঢাকায় এডিস মশার বিস্তার প্রতিরোধে এখনও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, বরং এ ক্ষেত্রে গাফিলতি ও ব্যর্থতা এখনও কাটিয়ে উঠেনি। শিরীন আকতার বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষের বিপদকে পুঁজি করে কিছু বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার নামে ডাকাতি এবং মশা মারার স্প্রে, ওষুধ নিয়ে মজুদদারি ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতে ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা এবং জাতীয় দুর্যোগ কাউন্সিল গঠনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে এবং চলমান সঙ্কট মোকাবেলা করার কথা চিন্তা করে আমরা কেবল দুটি সিটি কর্পোরেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে রাখতে পারি না। সেজন্য আমরা জাতীয় দুর্যোগ আইন সামনে এনে জাতীয় দুর্যোগ কাউন্সিল গঠন এবং একইসঙ্গে ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করছি। তিনি আরও বলেন, পূর্বপ্রস্তুতির ব্যর্থতা, আগাম সতর্কতা আমলে না নেয়া এবং সমন্বয়হীনতা, পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উত্থাপন, গাফিলতি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের ডেঙ্গু সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট ঘাটতি এবং কমতি থাকার কারণে আমরা দেখছি একটা ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডেঙ্গু সমস্যা নবেম্বর পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে পারে। আমরা এই মুহূর্তে মনে করি, মশার বিস্তারস্থল ধ্বংস করে দেয়া, আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, একইসঙ্গে বছরব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ করে ঢাকাসহ সারাদেশকে এ রোগের বাহক এডিস মশা মুক্ত করতে হবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, জাতীয় দুর্যোগ আইন প্রয়োগ করা হোক। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসাইন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান শওকত, সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×