ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে ৩৫০ কিমি গ্রামীণ সড়ক বেহাল

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ২৫ জুলাই ২০১৯

ময়মনসিংহে ৩৫০ কিমি  গ্রামীণ সড়ক বেহাল

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ সময়মতো মেরামত ও সংস্কার কাজ না করায় এলজিইডির বেশিরভাগ সড়ক খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিম্নমান ও দায়সাড়া কাজের কারণে এক বর্ষা না যেতেই সড়কের সিলকোট ও কার্পেটিং উঠে- মুছে যাচ্ছে উন্নয়নের নিশানা। সড়কের এমন বেহালদশায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডির আওতাধীন গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এই দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অথচ সরকার প্রতিবছর গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সংস্কার ও মেরামতে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে। যদিও এলজিইডির স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমত কিবরিয়ার দাবি- সরকারের এই বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এলজিইডির বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমত কিবরিয়া ময়মনসিংহ সদরের উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যন্ত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় ঠিকাদারদের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে এলজিইডির কাজ হচ্ছে খেয়াল খুশিমত। এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডির গ্রামীণ সড়ক রয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৪২৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার । এর মধ্যে বেহাল আছে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার সড়ক। সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত ও সংস্কারে প্রতিবছর অন্তত ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। অথচ এই ক্ষেত্রে সরকারের বরাদ্দ মিলছে মাত্র ৩০/৩৫ কোটি টাকা। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণেই ভেঙ্গে পড়া গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমত কিবরিয়া জানান, অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক ও কভার্ডভ্যান চলাচলসহ বৃষ্টির পানি জমে এলজিইডির সড়কগুলো বিনষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি ট্রাক ও কভার্ডভ্যান নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ চারলেন মহাসড়কের সিডস্টোর বাজার থেকে টাঙ্গাইলের সখীপুর পর্যন্ত এলজিইডির ১৫ কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই খানাখন্দে ভরা। সড়কের কাচিনা চৌরাস্তা, সেকান্দর হাজী বাড়ি, মাদ্রাসা মোড়, পাড়াগাঁও, বাটাজোর বাজারসহ অন্তত ১৫টি পয়েন্টে ঝুঁিক নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। বর্ষায় এসব খানাখন্দে হাঁটুসমান পানি জমে কাঁদাজলে একাকার অবস্থায় হেঁটে চলাই দায় এলাকাবাসীর। জরুরী প্রসূতি রোগীকে হাসপাতালে আনাসহ দৈনন্দিন যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সড়কের খানাখন্দে উল্টে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। বেড়েছে যাতায়াত ভাড়াও। সড়কটি সচল রাখতে মেরামত ও সংস্কার কাজ দেখিয়ে এলজিইডি প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেছে বলে জানায় এলাকাবাসী। গেল ঈদেও সড়ক মেরামতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করা হয়েছে। অভিযোগ, এক দশকের বেশি সময় ধরে ভালুকা ও সখীপুর উপজেলাসহ আশপাশের মানুষের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বেহাল দশা ঘুচাতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সড়ক মেরামত ও উন্নয়নে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেয়ার পর কাজ শুরু করা হবে। তবে কবে নাগাদ পুরোপুরি সচল হচ্ছে সড়কটি তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি এলজিইডি। ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখলা ইউনিয়ন পরিষদের দেওখলা থেকে কাটাখালী সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল যে হেঁটেও পার হওয়া যায় না। কোন যানবাহনও সহজে এই সড়কে যেতে রাজি হয় না। অথচ সড়কটি মেরামত ও সংস্কারে এলজিইডির কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় হতাশ এলাকাবাসী। ময়মনসিংহ সদরের চরবড়বিলা, আনন্দীপুর, চরলক্ষীপুর ও চরহরিপুরে এলজিইডি সড়কের বেহাল দশায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া-গৌরীপুর সড়কের বেহালদশা ঘুচাতে মেরামত কাজ শুরুর প্রাক্কালেই নিম্নমান ও দায়সাড়া কাজের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে খোদ স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ নিম্নমানের দায়সাড়া কাজ বন্ধ রাখতে এলজিইডিকে নির্দেশ দেন। পরে অবশ্য স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে কাজ শুরু করে ঠিকাদার। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমত কিবরিয়া জানান, ভুল বোঝাবুঝির কারণে কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি বুঝতে পেরে পরবর্তীতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান এই প্রকৌশলী। ময়মনসিংহ সদরের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন আকুয়া ইউনিয়নে নির্মাণ কাজের পরই একটি সড়কের সিলকোট উঠে যাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। নিম্নমানের কাজের জন্য ঠিকাদারকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। ত্রিশালের সাইনবোর্ড-কাশিগঞ্জ সড়ক উন্নয়নের বছর না ঘুরতেই বেহাল দশা নিয়ে এলাকাবাসী কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একই চেহারা দেখা গেছে গৌরীপুর রামগোপালপুর পাঁচ কিলোমিটার সড়ক ও গৌরীপুর শাহগঞ্জ সড়কের। খানাখন্দে বর্ষায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগের সীমা থাকছে না। তারাকান্দা-ধোবাউড়ার সড়কটি গত এক দশক ধরে চলাচলের অনুপযোগী। ধোবাউড়া উপজেলার এলজিইডির সব সড়ক বেহাল। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির নিয়মিত মাসিক ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার এসব সড়ক মেরামতের দাবি করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারপরও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি এলজিইডি। এ নিয়ে হতাশ ধোবাউড়াবাসী। গফরগাঁও, ত্রিশাল, তারাকান্দা, ফুলপুর, মুক্তাগাছা ও নান্দাইলসহ জেলার সব উপজেলাতেই বেশিরভাগ সড়কের বেহালদশা। ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম সড়কের বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজের বড় নজির হচ্ছে সড়ক ব্যবস্থার যোগাযোগ। অথচ ময়মনসিংহে সড়কের বেহালদশা সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এলজিইডির স্থানীয় কর্মকর্তারা। তদারকির অভাব, ঠিকাদারদের সঙ্গে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশসহ দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই ময়মনসিংহে এলজিইডির সড়কগুলোর এখন মরণদশা বলে অভিযোগ এই নাগরিক নেতার।
×