ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ কাউন্সিলে ড্রয়িং ওয়ার্ডস

বইয়ের পাতায় পাতায় ইলাস্ট্রেশন, ছবির সাহায্যে মজার গল্প

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৩০ জুন ২০১৯

বইয়ের পাতায় পাতায়  ইলাস্ট্রেশন, ছবির  সাহায্যে মজার গল্প

মোরসালিন মিজান ॥ ছোটদের জন্য লেখা গল্পের বই। বই বটে। পাতা উল্টালে মনে হয় ছবি আঁকার খাতা! প্রতি পাতায় ইলাস্ট্রেশন। গল্পের চরিত্র ও ঘটনাবলীকে জীবন্ত করে তুলেছেন যুক্তরাজ্যের দশ শিল্পী। সমকালীন এই শিল্পীদের করা ইলাস্ট্রেশন ওয়ার্ক নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় চলে এসেছে বাংলাদেশেও। বর্তমানে ব্রিটিশ কাউন্সিলে চলছে বিশেষ এই প্রদর্শনী। ছোট ছোট বাচ্চারা সমবেত হয়ে প্রদর্শনী দেখছে। লাইব্রেরিতে পড়া বইয়ের গল্পের সঙ্গে ছবি মিলিয়ে নিচ্ছে তারা। আবার দু’একটি ছবি দেখে বলে দিচ্ছে পুরো গল্পটা। একই প্রদর্শনীতে এসে বড়রা ফিরে যাচ্ছেন শৈশবে। স্কুলের পাঠ্যবইয়ের পাতায় মুগ্ধ চোখে দেখা ইলাস্ট্রেশনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ব্যতিক্রমী আয়োজনের শিরোনাম ‘ড্রইং ওয়ার্ডস।’ ফুলার রোডের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শুক্রবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ সময় ইলাস্ট্রেটরদের অন্যতম এমিলি হিউজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিস আনলিমিটেড প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কির্সটি ক্রোফোর্ড প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর পর থেকে চলছে প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন জিল ক্যালডার, লরা কার্লিন, রেবেকা কব, উইলিয়াম গ্রিল, এমিলি হিউজ, ইয়াসমিন ইসমাইল, নিল লেটন, ডেভিড ম্যাকিনটস, এমিলি র‌্যান্ড, ডেভিড রবার্টস। এদের প্রায় সকলেই সমকালীন ব্রিটিশ পিকচার বুক ইলাস্ট্র্রেশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। কয়েকজন ইলাস্ট্রেটর হিসেবে আলাদা খ্যাতি অর্জন করেছেন। বাকিরা অপেক্ষাকৃত নবীন। তবে প্রতিভাবান। বুক ইলাস্ট্রেশনে ভাল কিছু করতে চান। প্রদর্শনীতে শিল্পীদের মোট ত্রিশটি ইলাস্ট্রেশন স্থান পেয়েছে। প্রত্যেকের তিনটি করে কাজ। অল্প জায়গার মধ্যেই দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা। প্রশংসা করার মতো কিউরেটিং। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় কিউরেটিংয়ের কাজ করেছেন ওয়াটারস্টোনস ইউকে চিলড্রেনস লরিয়েট লরেন চাইল্ড। ইলাস্ট্রেশনের বৈশিষ্ট্য খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, বইয়ের গল্পগুলোকে একইসঙ্গে ছবির ভাষায় বলার চেষ্টা করা হয়েছে। গল্পের চরত্রিগুলো পেয়েছে আকর্ষণীয় উপস্থাপনা। পোষা কুকুর, হরিণ, খরগোস, শিয়াল, প্যাঁচা, শাপ ইত্যাদি প্রাণীর ছবি এঁকেছেন শিল্পীরা। আছে সবুজ বন। পাহাড়ী ঝর্ণা। দেখে বোঝা যায়, বাচ্চাদের খুব সহজে যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ড্রইং করা হয়েছে। এ কারণেই হয়ত বাংলাদেশের বাচ্চারাও মুগ্ধ হয়ে দেখছে প্রদর্শনী। উদ্বোধনী দিন তো দল বেঁধে এসেছিল তারা। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফান ক্লাবের খুদে সদস্যরা আরও বেশি কৌতূহলী। কাছে গিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। কোন ইলাস্ট্রেশন থেকে ‘ক’ খুঁজে বের করছিল তারা। কোনটি দেখিয়ে জানতে চাইছিল, এটা কি দ্য জাঙ্গল বুক? সঙ্গে থাকা তরুণ শিক্ষকটিও বন্ধুর মতো। কিছু ইলাস্ট্রেশন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের চেষ্টা করছিলেন। একটি ইলাস্ট্রেশনে এক পক্ষের ছোড়া তীর অন্য পক্ষের দিকে ধেয়ে আসছে। ছবিটির দিকে শিক্ষক অঙ্গুলি প্রদর্শন করতেই এক ছাত্রী বলে উঠল- ফাইট। এভাবে দারুণ সব ছবি দেখার মজা, আবিষ্কারের আনন্দ। অবশ্য এই দেখার মধ্য দিয়ে আরও প্রাপ্তি আছে। ডেভিড রবার্টসের কথাটি এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই ইলাস্ট্রেটর দর্শনার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলছেন, ‘Listen to what the words are telling you, feeling, emotion, colour, atmosphere, texture. And let the stories the words tell form pictures in your mind. এমিলি হিউজেরও অভিন্ন মত। এই ইলাস্ট্রেটর বলছিলেন, যখন শব্দ বা বাক্য দিয়ে কোন কিছু পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা যায় না, ঠিক তখনই প্রয়োজন হয় ইলাস্ট্রেশনের। ড্রয়িংয়ের ভাষায় আমরা গল্পকে আরও সহজবোধ্য করে তুলি। প্রদর্শনীর আয়োজন নিয়ে কথা হয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরি কো অর্ডিনেটর উম্মে আয়েশা মাসজুদার সঙ্গেও। তিনি বলেন, শুধু ছোটরা নয়, বড়রাও এই প্রদর্শনী দেখে আনন্দ পাবেন। তাদের শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে যাবে। যে দশটি বই থেকে প্রদর্শনীর জন্য ইলাস্ট্রেশন বাছাই করা হয়েছে সেগুলো তাদের লাইব্রেরিতে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বইতে প্রচুর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে যারা ইংরেজীতে একটু দুর্বল তাদের জন্যও ইজি রিডিংয়ের হবে। এখানে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। ২৯ ও ৩০ জুন একই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে কক্সবাজারে। প্রসঙ্গত, ড্রয়িং ওয়ার্ডসের ধারণা এসেছে ‘ম্যাজিক পেন্সিল’ নামক শিশুতোষ বই ইলাস্ট্রেশনের একটি ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী থেকে। যুক্তরাজ্যের চিলড্রেনস লরিয়েট কুইন্টিন ব্লেইক ২০০২ সালে প্রথম শিশুদের জন্য ইলাস্ট্রেশন নির্বাচিত করে। যেখানে লরেন চাইল্ডের কাজও অন্তর্ভুক্ত হয়। ড্রয়িং ওয়ার্ডস আমাদের শিশুতোষ ইলাস্ট্রেশন এবং নতুন প্রজন্মের ইলাস্ট্রেশন শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ করে দেবে।
×