স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার মুগদায় এক মা সাড়ে তিন বছরের একমাত্র কন্যাকে আইসক্রিমের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। ওই মা পুলিশ হেফাজতে ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এক মাস আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের অভাব অনটনের মধ্যে বাবার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে দিশেহারা হয়ে ওই মা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রবিবার দিবাগত রাত সোয়া বারোটার দিকে রাজধানী ঢাকার মুগদা থানাধীন মানিকনগর এলাকার মিয়াজান গলির ৯৬ নম্বর বাড়ির নিচতলায় এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে মুগদা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনার সূত্রপাত খুব সম্ভবত রাত দশটার দিকে। ওই সময় মেয়েটি চিৎকার করতে থাকে। তার চিৎকারে আশপাশের শত শত মানুষ বাড়িটির কাছে ভিড় জমায়। এরপর জোরপূর্বক মানুষজন বাড়ির ভেতরে ঢুকে মেয়েটিকে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পায়। তখন মেয়েটির মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছিল। ওই সময় মেয়েটির মা অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি নেশা জাতীয় কোন দ্রব্য সেবন করেছেন। তার শরীর টলছিল।
পরে মানুষজন মা ও মেয়েকে দ্রুত পার্শ্ববর্তী মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত সোয়া বারোটার দিকে শত চেষ্টার পরেও শিশুটিকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। রাতেই শিশুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মুগদা থানা পুলিশ। লাশ মুগদা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে শিশুটির পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়। চিকিৎসকদের ভাষ্য মোতাবেক, মেয়েটির নাম রোজা ফারবিন। তাকে আইসক্রিমের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে রোজার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রোজার চাচা সোহেল লাশ গ্রহণ করেন। রোজার পিতার নাম মৃত মঞ্জুর হোসেন রাসেল। মায়ের নাম রোকসানা আক্তার রুমি (৩২)। বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার উত্তরপাড়ায়। গ্রামের বাড়িতে রোজার লাশ দাফন করা হয়েছে।
মুগদা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় ছয় বছর আগে রুমির সঙ্গে রাসেলের বিয়ে হয়েছিল। পরিবারটি ওই বাসায় ভাড়ায় বসবাস করছিল। রোজার পিতা একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। চলতি বছরের ১৭ মে রোজার পিতা আকস্মিক স্ট্রোকে মারা যান। এরপর রোজাকে নিয়ে মা মহাবিপাকে পড়েন। সংসারে অভাব নেমে আসে। তিনি বাবার বাড়ি ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরে যান। ব্যক্তি জীবনে রুমি খুবই রাগী স্বভাবের। সেখানে ভাই বোনরা তাকে আশ্রয় দেননি। ওই সময় তিনি পৈত্রিক সম্পত্তির দাবি করেন। এ নিয়ে ভাই-বোনদের সঙ্গে চরম পারিবারিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
এরপর তিনি শ্বশুর বাড়িতে যোগাযোগ করেন। সেখানেও তার আশ্রয় মেলেনি। এরপর থেকেই তিনি মানসিকভাবে চরম হতাশায় পড়ে যান। কারও কাছ থেকে সহযোগিতা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে যান তিনি। তার কাছে মেয়েকে ভরণপোষণ করা রীতিমতো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি নিজের জীবনের প্রতিও তার মায়া কমে যায়। তারই সূত্র ধরে রবিবার রাতে অন্তত ১০টি ঘুমের বড়ি গুঁড়ো করে আইসক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে মেয়েকে খাইয়ে দেন। খাওয়ার পর মেয়ে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। মেয়ের মৃত্যু যন্ত্রণা দেখে তিনি আর সহ্য করতে পারেননি। এরপর তিনিও ঘুমের ওষুধ মেশানো আইসক্রিম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। ততক্ষণে মেয়ের চিৎকারে আশপাশের মানুষ জড়ো হওয়ায় মা রক্ষা পান। মা মেয়েকে আইসক্রিমের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। এ ঘটনায় রোজার চাচা মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ মামলা হয়নি। রোজার মা পুলিশ হেফাজতে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি আশঙ্কামুক্ত। তবে ঘটনার পেছনে আরও কোন কারণ আছে কিনা তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: