ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নেশন্স কাপে চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১১ জুন ২০১৯

 নেশন্স কাপে চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল

জাহিদুল আলম জয় ॥ ইউরোপিয়ান ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে পর্তুগাল। ২০১৬ সালে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল পর্তুগীজরা। তিন বছর পর এবার ‘ইউরোপের ব্রাজিল’ খ্যাত দেশটি জিতে নিয়েছে প্রথমবারের মতো আয়োজিত উয়েফা নেশন্স লীগের ট্রফি। রবিবার রাতে নিজ দেশ পর্তুগালের পোর্তোতে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে টোটাল ফুটবলের জনক হল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ফার্নান্ডো সান্টোসের দল। পর্তুগালের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন গঞ্জালো গুয়েডেস। পুরো আসরে চোখ ধাঁধানো ধারাবাহিক পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বার্নাডো সিলভা। তিন বছরের ব্যবধানে দুই দু’টি আন্তর্জাতিক আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ক্লাবের হয়ে ভূরি ভূরি শিরোপা জেতা সি আর সেভেন এখন জাতীয় দলের হয়েও সফল। এক্ষেত্রে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিকে ব্যর্থই বলতে হবে। ক্লাব ক্যারিয়ারে বার্সিলোনার হয়ে শিরোপার পর শিরোপা জিতলেও এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে তার ভা-ার শূন্য। আসন্ন কোপা আমেরিকাতে সেই বন্ধ্যত্ব বার্সা ডায়মন্ড ঘোচাতে পারেন কিনা সেটাই দেখার। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও এই আসরে রানার্সআপ হয়ে নিজেদের চেনা রূপে ফিরেছে হল্যান্ড। গত দুটি বড় টুর্নামেন্টে বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়েছিল ডাচরা। ২০১৬ ইউরোর পর ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তাদের। বড় বিপর্যয়ের পর কোচ রোল্যান্ড কোম্যানের অধীনে হল্যান্ড দারুণভাবে ফিরে এসেছে। নেশন্স কাপে গ্রুপ পর্বে বিশ্বচ্যম্পিয়ন ফ্রান্স ও জার্মানিকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে তারা। অবশ্য শেষটা ভাল করতে না পারায় বেদনায় ভারাক্রান্ত হতে হয়েছে ভার্জিল ভ্যান ডিকের দলকে। ম্যাচটিতে মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দুই দেশের দুই অধিনায়ক ও সেরা তারকা পর্তুগালের রোনাল্ডো ও হল্যান্ডের ভার্জিল। রক্ষণভাগে ডাচ অধিনায়ক নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরায় সি আর সেভেন খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ভার্জিলের সঙ্গে মাথিয়াস ডি লিট বেশির ভাগ সময়ই পর্তুগীজ সুপারস্টারকে খোলসবন্দী করে রাখেন। যে কারণে পর্তুগালের অন্যরা আক্রমণ শাণাতে বেশি সুযোগ পান। ম্যাচে এর প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। প্রায় পুরো ম্যাচেই আধিপত্য ছিল পর্তুগীজদের। ম্যাচের ৬০ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়া উইঙ্গার গুয়েডেস ডি বক্সের মাথা থেকে জোরালো শটে হল্যান্ড গোলরক্ষক জাসপার সিলিসেনকে পরাস্ত করেন। বল গোলরক্ষকের হাতে লাগলেও শেষ রক্ষা হয়নি। গোলটিতে দারুণ অবদান রাখেন টুর্নামেন্ট সেরা সিলভা। ডাচ রক্ষণভাগকে ভেঙে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলা এই তারকা দারুণ এক পাস দেন গুয়েডেসকে। ভ্যালেন্সিয়ার উইঙ্গার চলতি বলে বুলেট শটে শিরোপা নিশ্চিত করা গোলটি করেন। ম্যাচ শেষে চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের কোচ ফার্নান্ডো সান্টোস বলেন, অসাধারণ পারফর্মেন্সের জন্য আমি আমার খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা তাদের জয়, পরিশ্রম ও আত্মনিবেদনের ফসল। তিনি আরও বলেন, আমি নিশ্চিত যে এই টুর্নামেন্ট ক্লাসিক হয়ে উঠবে কারণ এটা একটা টুর্নামেন্ট যেখানে গোটা ইউরোপিয়ান পরিবার অংশ নেয় এবং প্রথম আসরের শিরোপা জেতায় আমরা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকব। জেতার মানসিকতা থাকলে সেই দলের ভাল খেলার বিকল্প নেই। ভাল খেলেই পর্তুগাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রানার্সআপ ডাচ দলের কোচ কোম্যান বলেন, আমরা পরিশ্রান্ত ছিলাম কিনা জানি না, তবে মোটেই ভাল খেলতে পারিনি। পর্তুগালের রক্ষণভাগ বেশ শক্তিশালী ছিল। পুরো ম্যাচেই তারা বেশ সংঘবদ্ধ ফুটবল খেলেছে। ফাইনালের মতো ম্যাচে নিজেদের এগিয়ে নিতে হলে আরও ভাল খেলা উপহার দিতে হবে। যা আমরা মোটেই পারিনি। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ঘরোয়া ট্রেবল জয়ী বার্নাডো সিলভা বলেন, আমি খুব খুশি, খুবই গর্বিত। দেশের হয়ে এটাই আমার প্রথম শিরোপা। পর্তুগীজ সমর্থকদের ধন্যবাদ। আর সুপারস্টার ও পর্তুগাল অধিনায়ক রোনাল্ডো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের সময়টা দারুণ যাচ্ছে। সব কিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা ইউরো ২০১৬ জয়ের পর এবার পর্তুগাল নেশন্স লীগের শিরোপা জিতেছে। অনেকের কাছেই এটা সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এই ধরনের শিরোপা জয়ে অনেক বেশি ইচ্ছা ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন হয়। সবকিছুর জন্য খেলোয়াড়রা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। ইতিহাসের অংশীদার হতে পেরে আমিও গর্বিত।
×