ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাচোলের সংগ্রামী পাঁচ জয়িতা

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১ জুন ২০১৯

 নাচোলের সংগ্রামী পাঁচ জয়িতা

সংগ্রামী নারী নেত্রী রানীমাতা ইলামিত্রের দেশ নাচোল। মনে হবে এখানকার নারীরা সার্বক্ষণিক বড় ধরনের দীক্ষা নিচ্ছে রানীমাতা ইলামিত্রের কাছে। তাই লাখো লাখো বাধা উপেক্ষা করে জীবন সংগ্রামে জয়ী নাচোলের ৫ জয়িতা। এদের জীবন লক্ষ্য করলে মনে হবে তাদের দীক্ষা গুরু রানীমাতা ইলামিত্র। প্রভাতী মাহাতো এদের একজন। মাহাতো একজন উপজাতি নারী হয়েও শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে এখন সে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা। অপর জন শ্রী মিতু রানী। তার সাফল্যগাথা অনুকরণীয় বললে ভুল হবে না। তিনি একজন নির্যাতিতা নারী। রঙিন সপ্ন দেখার বয়সে বিয়ের সিড়িতে বসতে হয়েছিল। তখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। বিয়ে হবার চার বছরের মাথায় স্বামীর নির্যাতনে বাধ্য হয়ে ৪ বছরের শিশুকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসতে হয়। তখন সবকিছু অন্ধকার দেখতে থাকে। তার পরেও স্বকর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ নিয়ে শিশুকন্যাকে মানুষ করতে থাকে নির্যাতিত মিতু। বর্তমানে তিনি একজন সুখী মহিলা। মাসিক আয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। এখন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী। অপর নারী সুলতান খাতুন। ৪ ভাইবোনের স্বপ্ন ছিল সুলতানা লেখাপড়া করে মানুষ হবে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় দারিদ্র্যতা। দারিদ্র্যতা ডিঙিয়ে ভাই বোনের স্বপ্ন কে বাস্তবে রূপ দিয়ে সুলতানা এখন এমএ পাস করেছেন। পেয়ে গেছেন চাকরি। তিনি নাচোল উপজেলার মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের আইডিএ প্রকল্পের দর্জি বিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বর্তমানে সুলতানা শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সফল নারী। অপর নারী আমেনা খাতুন। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। তারা পড়াশোনা করে। বহু বাধা উপেক্ষা করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করেছে। তারা এখন সরকারী চাকরি করে। একমাত্র মেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। আমেনা এখন সফল জননী। অপর একজন নারী রঞ্জনা। তিনি বাল্যবিয়ের শিকার। মাত্র ১৪ বছর বযসে বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। বাধ্য হয়ে নামে রাজনীতিতে। বর্তমানে তিনি নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উপজেরা শাখার সহ-সভাপতি ও দর্জি প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। একটানা ২৭ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে নজির স্থাপন করেছেন। নাচোল পৌরসভার সংরক্ষিত ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরমানী বেগম। বয়স ৬০ পেরিয়ে যাবার পরেও দারুণ উদ্দীপ্ত আরমানী বেগম। দুই ছেলের মধ্যে একজন পৌরসভার অস্থায়ী কর্মচারী। তার বেতনেই চলে আরমানী বেগমের টিনের চালা দেয়া ঘরে সুখের সংসার। এলাকাবাসীর সুখে দুখে একডাকে বেরিয়ে পড়েন আরমানী বেগম। এই বয়সেও নেই তার কোন জ্বরা বা আলসেমি। এই পাঁচ জয়িতার সকলেই রানীমাতা ইলামিত্রের খুবই ভক্ত। তারা শেষ দিন পর্যন্ত রানীমাতাকে অনুসরণ ও প্রেরণা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। -ডি. এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
×