ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৩০ মে ২০১৯

 আজ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বিএনপি। কর্মসূচী অনুসারে আজ সকাল ১০টায় শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী অনুসারে বুধবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়াউর রহমানের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভক্তি-বিভাজন ভুলে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে শীঘ্রই বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে । তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, দেশের এই মহাসঙ্কটকালে নিজেদের মধ্যে কোন ধরনের বিভক্তি কিংবা বিভাজনের চিন্তা না করে সকল স্তরের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, আজকে অনেকে হতাশার কথা বলেন। আমি হত্যাশার কথা বলি না, বলতে চাই না, বিশ্বাসও করি না। আমি মনে করি, জিয়াউর রহমানের যে দর্শন, যে চিন্তা, তা কখনও ব্যর্থ হবার নয়। খালেদা জিয়ার যে আদর্শ, যে ত্যাগ স্বীকার তা কখনও ব্যর্থ হবার নয়। ফখরুল বলেন, আজকে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে আমাদের শপথ গ্রহণ করতে হবে যে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমরা কোন বিভক্তির চিন্তা করব না, আমরা কোন বিভাজনের চিন্তা করব না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আসুন আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এবং বিএনপিকে একটি সত্যিকার অর্থেই জনগণের মাঝে জনপ্রিয় সংগঠন হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করি। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে হবে। আমরা যদি আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলকে সুসংগঠিত করি, জিয়াউর রহমানের আদর্র্শ ও দর্শনকে তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রকৃতপক্ষে তাদের উপলব্ধিতে ঢুকিয়ে দিতে পারি তবে আমাদের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের একটা বাণী ছিল দেশের স্বার্থে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করাতে হবে। আজকের পরিস্থিতিতে সেই ইস্পাত কঠিন গণঐক্য ছাড়া এই সরকারের কাছ থেকে জনগণকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের যার যার অবস্থান থেকে আরও সক্রিয় থাকতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যে সংসদকে আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম, যে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করলাম, যে সংসদকে অবৈধ বললাম সেই সংসদে আমাদের যোগ দেয়ার কারণে দলের অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। এই ধরনের ক্ষোভ থাকা ভাল না। এই ক্ষোভ যদি আমরা দূর করতে না পারি তাহলে জাতীয়ভাবে আমাদের রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে পারব না। তিনি বলেন, আমরা যদি জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে ও পরিচালনা করতে না পারি তাহলে আমরা জিয়াউর রহমানের এই দলকে সুসংগঠিত করতে পারব না। এখন বিএনপির জন্য একটি বিরাট সঙ্কটকাল। আমাদের নেত্রী অসুস্থ এবং কারাগারে। তাই বিষয়টি সবাইকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে। মওদুদ বলেন, আজকে নয়, কালকে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে এবং তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি এই মুহূর্তে কারাবন্দী, তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না, আমরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। আমাদের নেতা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দলে ঐক্য বজায় রাখা। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মওদুদ বলেন, আমাদেরকে আপনারা নেতা বলেন আর যাই বলেন, আমরা যদি ব্যর্থ হয়েও থাকি আর ব্যর্থ নাও হয়ে থাকি; নতুন নেতৃত্বের ব্যবস্থা করুন। দলটাকে শক্তিশালী রাখতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, নির্বাচনের পরে আমরা নির্বাচনের ফলকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম এবং সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলাম। সেজন্য আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। আর যারা অংশগ্রহণ করেছিল তাদের প্রায় ২০০ জনকে আমরা বহিষ্কার করেছি। কিন্তু সংসদে যোগদান করার কারণে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে একটি বিরাট ক্ষোভ এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বিএনপির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমি মনে করি অবিলম্বে আমাদের একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই ভেদাভেদ, ক্ষোভ দূর করার জন্য সকল সহযোগী, অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ডেকে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে হবে। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ ও দলের সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম।
×