ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কেট শপিংমলে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৮ মে ২০১৯

  মার্কেট শপিংমলে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে

ওয়াজেদ হীরা ॥ ১১ রোজা শেষ। ঈদের বাকি ২০ দিনেরও কম। খুশির ঈদের আনন্দে ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়েছে নগরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। ঈদের আগ মুহূর্তে কেনাকাটা করতে গেলে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে অনেকেই এখনই কেনাকাটা সেরে ফেলছেন। রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল থেকে ফুটপাথের দোকান সর্বত্রই বেড়েছে ক্রেতাদের সমাগম, বেড়েছে বিক্রিও। ক্রেতারা একটু ভাল ও পছন্দের পণ্য পেতে আগেই কেনাকাটা করতে চাচ্ছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন ঈদ বাজারের এই ভিড় এখন থেকে চাঁদ রাত পর্যন্ত এমন বিকিকিনি চলবে। ঈদের কেনাকাটা উপলক্ষে ক্রেতাদের সমাগমে মুখর প্রত্যেক মার্কেট। রমজান শুরুর পর খুব একাটা ভিড় ছিল না খুচরা কেনাকাটায়। তবে শুক্রবার ছুটির দিন ছিল ব্যতিক্রম। একদিকে ইতোমধ্যেই রমজানের ১১ রোজা শেষ হয়ে গেছে। আবার দিনটি ছিল ছুটির দিন। সব মিলিয়ে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল এমনকি ফুটপাথেও মানুষের পদচারণা দেখা যায়। স্ত্রী সন্তান কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঈদ কেনাকাটা করার জন্য বের হওয়ার কারণে রাজধানীর মার্কেট কেন্দ্রিক রাস্তাগুলোয় ছিল তীব্র যানজট। এমনকি ফুটপাথে হাঁটতে গিয়ে ভিড়ের কারণে অনেকেই হাঁপিয়ে উঠেছেন। রাজধানীর কয়েকটি শপিংমল ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের ভিড় আর মানুষের কেনাকাটা দৃশ্য। শাড়ি- চুড়ি-জামা-জুতা,প্যান্ট-শার্ট-পাঞ্জাবি, সাজগোছের জন্য কসমেটিক্স সর্বত্রই মানুষের ভিড়ে যেন পা ফেলার জায়গা নেই। এত ভিড়ের মধ্যেও বিক্রেতারা বলছেন এটা ঈদ কেনাকাটা শুরু হলো মাত্র। কিছু মানুষ আগে বাড়ি চলে যান সেকারণে আগেই কিনে ফেলেন। আবার ঈদের বেতন বোনাস পাওয়ার পর ঈদের আগ মুহূর্তে আরও কয়েকগুণ চাপ বাড়বে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সকাল ১১টার দিনে বাটা সিগ্যনাল, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট এলাকায় সারি সারি গাড়ি রিক্সা যানজটের কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঢাকা কলেজের সামনে দায়িত্বরত ট্রাফিক বলেন, এখন থেকে প্রতিদিনই এই মার্কেট কেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে জট একটু থাকবেই। আর ছুটির দিনে তা আরও একটু বেশি হবে। বিকেলের পর সেই জট আর মানুষের ভিড় আরও বাড়ে। বসুন্ধরা সিটি, আড়ং, যমুনা ফিউচার পার্ক, পুলিশ প্লাজা, আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে, নিউমার্কেটের সামনের রাস্তায় অসংখ্য গাড়ি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ইফতারের সময়ও মার্কেট এলাকায় রাস্তা ফাঁকা করা যায়নি। বরং ছুটির দিন থাকাতে ইফতার সেরে অনেকেই মার্কেটমুখী হয়েছেন। এতে রাস্তায় মানুষ আর গাড়ি উভয় চাপ বৃদ্ধি পায়। এদিকে, রাস্তায় তীব্র জট থাকলে হাজারো মানুষের পদচারণায় ঈদের পণ্যের পসরা সাজানো বিক্রেতারা বেশ খুশি। রাজধানীর নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া, গ্লোব সেন্টার, হকার্স মার্কেটে দেখা যায় নারী পুরুষের উপচেপড়া ভিড়। কেউ পছন্দের পণ্য ভাল না লাগলেই ছুটছেন অন্য দোকানে। বিক্রেতারাও হাঁক ডাক দিচ্ছেন ‘আফা আসেন নতুন কালেকশন দেখাই’। নিউমার্কেটের দ্বিতীয় তলায় দেখা গেল তরুণরা পাঞ্জাবি প্যান্ট কেনার দৃশ্য। তানভীর হোসেন বলেন, এই সপ্তাহে বাড়ি চলে যাবেন। পরে বাড়ি যেতে ভিড় আরও বাড়বে সড়কে। তাই কেনাকাটা করে নিচ্ছি। গাউছিয়া মার্কেটে মেয়ের জন্য জামা কিনতে গিয়ে আজিজুল হক বলেন, আমরা চাকরি করি। ছুটির সময় ভিড় বেড়ে যায়। আগেই স্ত্রী সন্তান পাঠিয়ে দেব। আজ কেনাকাটা শেষ করলে রবিবার বাড়ি পাঠিয়ে দেব। বিক্রেতারে সঙ্গে কথা বলার ফুসরত নেই। রোজায় বেশি কথা বলতে গিয়ে যেন ক্লান্ত হয়ে উঠেছেন। তাই ফুটপাথের অনেক বিক্রেতা এক দাম হাঁকাতে দেখা গেছে। অবশ্য শপিংমল কিংবা মার্কেটের চিত্র ভিন্ন। গাউছিয়া মার্কেটের পূর্ণিমা শাড়ি বিতানের শাড়ি বিক্রেতা আমির জানালেন, তাদের শাড়ি দেখে যাচ্ছে ক্রেতারা। তবে ক্রেতার সমাগম বেড়েছে। ঈদের শাড়ি বিক্রি নিয়ে বলেন, ঈদ পরবর্তীতে অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে এজন্য শাড়ির একটা চাহিদা থাকে। এছাড়াও জাকাতের শাড়ি, পরিবারের মহিলাদের জন্য পছন্দের প্রচুর শাড়ি বিক্রি হয় বলেও জানান তিনি। রাজধানীর বাটা সিগন্যাল এলাকায় চৌরঙ্গি মার্কেট জুতার জন্য বিখ্যাত। কয়েকশ’ দোকান আছে এর উপরে নিচে এবং আশপাশ মিলিয়ে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেল এখানেও। বাটা শোরুমের এক বিক্রেতা জানালেন, রমজান শুরুর পর শুক্রবারই ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রিও বেশ ভাল হচ্ছে। ছোট্ট ছেলের পছন্দের জুতা পায়ে না লাগার কারণে পাশের দোকানে ছুটলেন ইমতিয়াজ রানা। তিনি বলেন, এখনতো সময় আছে একটু ঘুরে দেখার তবুও মানুষের যে ভিড় দেখছি আর কদিন পর মার্কেটে প্রবেশ করতেই পারব বলে মনে হয় না। এদিকে, এই রমজানে ছুটির দিন শুক্রবার পড়েছে মাত্র চারটি। এরমধ্যে প্রথম শুক্রবার পাইকারি কেনাকাটা ভাল থাকলেও খুচরা বিকিকিনি একেবারেই ছিল না। দ্বিতীয় শুক্রবার যে মানুষের সমাগম হয়েছে এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি হবে সামনের দুটি শুক্রবারে এমনটাই মনে করছেন বিক্রেতারা। এছাড়াও রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সামনের দিনগুলোতে সাপ্তাহিক বন্ধ হিসেবে আর বন্ধ থাকবে না। এখন থেকে টানা শপিংমল মার্কেট খোলা থাকবে। বিভিন্ন মার্কেটের সামনে এই সংক্রান্ত নোটিস ঝুলতেও দেখা গেছে। জানা গেছে, ঈদের সময় বাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তির কারণে অনেকেই আগে স্ত্রী সন্তান পাঠিয়ে দেন বাড়ি। আর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার আগে কেনাকাটা করে নেন। এছাড়াও রাজধানীর বিশ^বিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে যাদের খুব জরুরী কাজ নেই তারা ইতোমধ্যেই বাড়ির পথ ধরেছেন। অনেকেই এই চলতি সপ্তাহে বাড়ির পথ ধরবেন। যারা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাড়ি চলে যাবেন তারা অনেকটাই এখন ভিড় করছেন কেনাকাটা করতে। আবার অনেকের বেশি কেনাকাটা করতে হয় একদিনে সব কেনাকাটা সম্ভব হয় না তাই আগে থেকেই শুরু করেছেন । পরিবারের সবার নতুন পোশাক কিনতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে কথা হয় বেসরকারী চাকরিজীবী সোহরাব দম্পত্তির সঙ্গে। তারা জানান, বাবা-মা, সন্তান পরিবারের অন্য স্বজন রয়েছে। একদিনে সব পছন্দ হয় না। আজ কিছু কিনলাম। সম্ভব হলে সামনের ছুটির দিনে আবার কিনব। গুলশানের পুলিশ প্লাজায় কেনাকাটা করে তামান্না বলেন, ছুটির দিনে একটু কেনাকাটার জন্য ভাল দিন। ভেবেছিলাম শুরুর দিকে ভিড় কম হবে এসে যা দেখলাম তাতে সামনের দিনে মার্কেটে আসতে পারব কিনা জানিনা। আজই একটু বেশি করে কিনে নিলাম। নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মেয়েদের পোশাকের দোকানে তুলনামূলক ভিড় বেশি। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেই বলে দিচ্ছেন, ব্যস্ততার কারণে কথা বলার মতো সময় নেই। হকার্স মার্কেটের অতিরিক্ত মানুষের চাপে ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি। রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে দেখা গেল তরুণ কিনছেন পছন্দের পাঞ্জাবি আর তরুণীরা হাতের কাজের জামা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবুজ বলেন, ক্লাস শেষ পরীক্ষা শেষ। এই সপ্তাহে বাড়ি যাব। ছোটভাই ও আমার জন্য পাঞ্জাবি কিনলাম। এখন বাড়ি যেতে পারলেই হয়। এদিকে, মেয়েদের সাজগোছের জন্য বিভিন্ন কসমেটিক্সের দোকানে ছিল তরুণীদের পদচারণা। তবে সেটি খুব একটা বেশি নয় বলে বিক্রেতারা মনে করছেন। এদিকে, রাজধানীর শপিংমল ও অন্যান্য মাকের্টের মতোই মানুষের ভিড় বেড়েছে ফুটপাথেও। নিউমার্কেট ফুটপাথ, গুলিস্তান, বসুন্ধরা সিটির সামনের ফুটপাথ, ফার্মগেট ফুটপাথে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণা। ফুটপাথে যারা ব্যবসা করেন তারা বলেন, মানুষ আসছে তবে বিক্রি একটু কম। ফার্মগেটের বিক্রেতা জুলহাস জুতা বিক্রি করেন ফুটপাথে। তিনি বলেন, রোজায় বেশি কথা বললে গলা শুকিয়ে আসে। একদামে পণ্য বিক্রি করছি। যার ভাল লাগছে দেখে নিয়ে যাচ্ছে। পাশে পাঞ্জাবি বিক্রেতাও একদামে বিক্রি করতে দেখা যায়। বিভিন্ন কালারের পাঞ্জাবি এক দাম ২৫০ টাকা। ক্রেতারা বেছে বেছে কিনে নিতে দেখা যায়। এক ক্রেতা বলেন, ফুটপাথের পণ্যগুলো একটু সস্তায় পাওয়া যায় তাই অনেকের ক্রেতার ঝোঁক থাকে। খুশির ঈদের এই কেনাকাটা খুশির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। সবার মুখে হাসি আনতে ক্রেতাদের এই কেনাকাটা চলবে সামনের দিনগুলোতেও। আর বিক্রেতার সারা বছরের চেয়ে এই ঈদের সময় একটু বেশি বিক্রি করে থাকেন। ফলে ব্যবসাও হবে হরদম।
×