ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টাকা জোগাড়ে মরিয়া রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

টাকা জোগাড়ে মরিয়া রোহিঙ্গারা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা নগদ টাকা জোগাড়ে মরিয়া। এজন্য তারা নিজেরা বাজার বসিয়েছে ক্যাম্প অভ্যন্তরে। দোকান খুলে দিব্যি বেচাকেনা করে চলেছে শত শত রোহিঙ্গা। আশ্রিত দেশে বাড়তি রোজগার শরণার্থী আইন বহির্ভূত হলেও প্রশাসনের টনক নড়ছে না। ফলে রোহিঙ্গারা আশ্রিত স্থান ছেড়ে মিয়ানমারে এমনকি ভাসানচরেও যেতে রাজি হচ্ছে না। মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা যারা দেশে থাকতেও দোকান করে জীবন চালাত তারা পালিয়ে এসে নির্দিষ্ট ক্যাম্পেও দোকান খুলে বেচাবিক্রি করে চলেছে। কুতুপালং, বালুখালী পান বাজার হয়ে ক্যাম্পে প্রবেশের মুখে, থাইংখালী, হাকিমপাড়া, মোছারখোলা, শফিউল্লাহকাটা, চাকমারকুল, পুটিবনিয়া, মোচনী, লেদা, নয়াপাড়া ও শামলাপুর ক্যাম্পে দোকান খুলে বসেছে শত শত রোহিঙ্গা। ওইসব দোকানে মিয়ানমারের বিপুল পরিমাণ কাপড় ও অন্য অবৈধ পণ্য মজুদ রয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ছোটবড় শত শত দোকান রয়েছে। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি রয়েছে ক্যাম্পগুলোতে যতগুলো ঘর, রয়েছে ততগুলো দোকান। ক্যাম্পের বাইরে ও ক্যাম্প অভ্যন্তরে শত শত দোকান রয়েছে। রোহিঙ্গারা নির্বিঘেœ দোকানপাট করতে পারায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। একেকটি পাইকারি দোকানে দৈনিক বিক্রি বাংলাদেশী লাখ লাখ টাকার মালামাল। ক্যাম্পগুলোতে খোলা হয়েছে অসংখ্য কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ডিভাইসের দোকান। দেশের গোপনীয়তা পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। ওসব কম্পিউটার থেকে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের নামে ভুয়া এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধন পত্র বানিয়ে তা নিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এছাড়াও এসব ভুয়া এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনপত্র নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়াও স্বর্ণ, ওষুধ, কাপড়, কসমেটিক্স, হোটেল-রেস্তরাঁ, মুদি, মাছ-তরকারি, টেইলার্স ইত্যাদি দোকান দিয়ে বসেছে রোহিঙ্গারা। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ইতোপূর্বে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু স্বর্ণের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভিজ্ঞজনরা বলেন, সহায়-সম্পদ, জায়গা জমি, বন, পাহাড়, পরিবেশ সব কিছু রোহিঙ্গাদের ছেড়ে দিয়ে এখানকার মানুষ নিঃস্বের পথে। দরিদ্র লোকজনের শ্রম বাজার অনেক আগেই রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। নিম্ন ও মধ্য বিত্তরা স্থানীয়ভাবে কিছু দোকানপাঠ করে কোনমতে সংসার চালাত। কিন্তু বর্তমানে সেটিও রোহিঙ্গাদের কব্জায় চলে গেছে। কার্যত এখানকার সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকা- এখন রোহিঙ্গাদের দখল ও নিয়ন্ত্রণে বলা চলে। তারা আরও জানান, কিছু কিছু এনজিওর মতে ভাসানচরে স্থানান্তর বা ত্রাণ বিতরণে একটু ত্রুটি হলে শরণার্থী আইন লঙ্ঘন বা অমানবিক হলে রোহিঙ্গারা যে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক হয়ে আশ্রিত দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাচ্ছে, তা শরণার্থী আইন বহির্ভূত নয়কি? মানবতা দেখাতে গিয়ে সবকিছু ছেড়ে দেয়ার পরও রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের চরম ক্ষতি করছে, তা অমানবিক ঘটনা নয়কি? এছাড়াও ক্যাম্পগুলোতে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাজার। এসব বাজার, দোকানগুলোর মালিক রোহিঙ্গা। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোর অভ্যন্তরে সংযোগ সড়কগুলোতে ও কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কুতুপালং থেকে বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, হোয়াইক্যং পর্যন্ত প্রায় ২০ কি.মিটার মহাসড়কে চলাচলকারী শত শত অটোরিক্সায় ও টমটম ইজিবাইকের মালিক ও চালক রোহিঙ্গা। এ ধরনের আনাড়ি চালকের কারণে যানজটের পাশাপাশি বেড়েছে দুর্ঘটনাও। কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন রেস্তরাঁয় শ্রম দিচ্ছে রোহিঙ্গা কিশোররা। ফিশিং ট্রলার ও মিলকারখানায় স্বল্পদামে চাকরি করছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের নানা অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। তাই বিভিন্ন মহল থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরসহ জনবিচ্ছিন্ন বিভিন্ন দ্বীপে স্থানান্তর করার দাবি জানানো হয়েছে।
×