ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে জোরালো চাপ দিন

প্রকাশিত: ১০:১২, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে  নিতে মিয়ানমারকে জোরালো চাপ দিন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যসহ সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর জোরালো বৈশ্বিক চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা হতাশাগ্রস্ত তাদেরকে খারাপ কাজেও ব্যবহার করতে পারে স্বার্থান্বেষী মহল। ব্রিটেনের বৈদেশিক দফতর এবং কমনওয়েলথ কার্যালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার তেজগাঁওর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করলে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মাঝে বিশেষ করে রোহিঙ্গা তরুণদের মাঝে কাজকর্ম না থাকা এবং তাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় হতাশা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, এটা ঐ এলাকায় একটি বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কেননা সংখ্যায় তারা স্থানীয় জনসাধারণকে ছাড়িয়ে গেছে। কাজেই স্বার্থান্বেষী মহল তাদের মধ্যে বিদ্যমান হতাশাকে খারাপ উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করতে পারে। আর বর্ষাকালে রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। অবশ্য সরকার তাদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য একটি দ্বীপকে উন্নত করে গড়ে তুলছে। সফররত ব্রিটিশ মন্ত্রী এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা আখ্যায়িত করে তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সরকারের কাছে জানতে চান। সে বিষয়ে সবিস্তারে তুলে ধরার পাশাপাশি এদেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জনের জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের পারস্পরিক লাভের স্বার্থেই বাংলাদেশে আরও ব্রিটিশ বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। তিনি এ সময় ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের বেশি বেশি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানান। ব্রিটিশ মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষ করে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে ব্রিটেনের অংশীদারিত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে ব্রিটেনের সহযোগিতা বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ইস্যুর ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এক্ষেত্রে নিজস্ব অর্থায়নে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখেই দেশের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের দেশে বেসরকারী খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়টি অবহিত করে বেসরকারী মালিকানাধীন বেশ কিছু টিভি চ্যানেল অনুমোদন প্রদানের কথাও জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম এখন সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিকভাবেই ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। বৈঠকে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্রিটেনের আরও সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস দেন। বৈঠকে উভয়ে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এবং ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার চ্যাটারটন ডিকসন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইতালির নতুন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত ॥ এর পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেন ইতালির নতুন রাষ্ট্রদূত এনরিকো নানজিয়াটা। সাক্ষাতকালে ইতালির রাষ্ট্রদূত দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গতিশীল করতে কাজ করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা আছে। দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দুই দেশের চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। সাক্ষাতকালে দূত নানজিয়াটা বাংলাদেশের সম্পর্ক ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি পার্লামেন্টারি গ্রুপ করা হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশে টেক্সটাইল ও অন্যান্য প্রযুক্তির ওপর একটি ট্রেনিং সেন্টার করতে ইতালির আগ্রহের কথা জানান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, উনি (বঙ্গবন্ধু) হচ্ছেন বিশ্বের বহু দেশের অনুপ্রেরণার উৎস্য। প্রধানমন্ত্রী নতুন রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের চামড়া খাতে সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে ইতালির চামড়াজাত পণ্যের সুনাম রয়েছে। তারা গুণগতমানের প্রতি নজর রাখে। বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ’র নবনির্বাচিত সভাপতির সাক্ষাত ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নবনির্বাচিত সভাপতি রুবানা হক। রবিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যান রুবানা হক। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি। গত শনিবার বিজিএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সহধর্মিণী রুবানা হকের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত ফোরাম প্যানেল। এই প্যানেলের ২৬ প্রার্থীর সবাই বিজয়ী হন। নির্বাচিতরা আগামী দুই বছরের জন্য বিজিএমইএ’র নেতৃত্ব দেবেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনীনির্ভর লেখালেখিতে অনুমতির দরকার নেই ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর যে কোন ধরনের নাটক, লেখালেখি ও সাহিত্যকর্ম এবং ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কোন প্রকার অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। শনিবার সন্ধ্যায় ধানম-ির বঙ্গবন্ধু ভবনে অনুষ্ঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর যে কোন ধরনের নাটক, লেখালেখি ও সাহিত্যকর্ম এবং বঙ্গবন্ধুর নামে ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এখন থেকে ট্রাস্টের কোন প্রকার অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। কেবল বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে কোন প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নামকরণের ক্ষেত্রে এরূপ অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। সভায় ট্রাস্টের সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকা- পর্যালোচনা ও ট্রাস্টের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ আরও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগের সভায় গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়েও সভায় পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন উপকমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পাশাপাশি ট্রাস্টের কোষাধ্যক্ষ এ এম রফিকের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের শহীদ সদস্যদের নামে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ এবং মোট ৫০ হাজার ২শ’ টাকা শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়।
×